নারীর স্থায়ী ঠিকানা কে ঠিক করবে?
৬ ডিসেম্বর ২০১৯দেবী দূর্গার মতো ১০ হাতে সব সমালানো এই নারীকে যদি প্রশ্ন করা হয়, মেয়ে, তোমার ঠিকানা কী? কী উত্তর দেবে সে? আর যদি সে হয় বিবাহিত, তার উত্তরই বা কী হবে?
আমাদের সমাজব্যবস্থায় মেয়েরা বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে বসবাস শুরু করে৷ শুরুতে নিয়মিত যাতায়াত থাকলেও একটা সময় তার নিজের বাড়িতে যাতায়াত কমতে থাকে৷ কারো কারো বেলায় অনুষ্ঠান আয়োজন বাদে তা শূন্যের কোঠায় গিয়ে ঠেকে৷
যদিও ‘‘বাবার বাড়ি, শ্বশুর বাড়ি বা স্বামীর বাড়ি''- নারীর কি নিজের বাড়ি আছে? এটা নিয়েও তর্কের অবকাশ রয়েই যায়৷ তবে এবার আর সে প্রসঙ্গে না যাই৷
বিয়ের পর এই যে নারীদের শেকড় থেকে বিচ্ছিন্নতা, তা সমাজযন্ত্রের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ কিন্তু তারপরও যখন এটাকে জোর করে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়, তখন বিতর্ক হবেই৷
বিতর্কের কারণ, গত ১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্ট-১ প্রধান কার্যালয় থেকে সহকারী পরিচালক (জেনারেল) পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি৷ সেখানে ১৪ নম্বর শর্তে বলা হয় ‘‘বিবাহিত মহিলা প্রার্থীদের ক্ষেত্রে স্বামীর স্থায়ী ঠিকানাকে প্রার্থীর স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করতে হবে৷''
একজন নারী সাংবাদিক হিসেবে বিষয়টি আমার একদমই পছন্দ হয়নি৷ অনেক নারীই আমার সঙ্গে একমত হবেন৷
কেন স্বামীর স্থায়ী ঠিকানা আমার স্থায়ী ঠিকানা হতে যাবে? আমার তো স্থায়ী ঠিকানা আছে৷
শিক্ষা জীবনের দীর্ঘপথে একজন নারীকে নানা ক্ষেত্রে স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার করতে হয়েছে৷ তাহলে এখন কি সেগুলোও পরিবর্তন করতে হবে? এরকম শত প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়াবে৷
শুধু প্রশ্ন নয়, বরং অনেক নারী একে অসম্মানজনকও মনে করতে পারেন৷
বাংলাদেশের মতো একটি দেশ, যেখানে সরকারপ্রধান একজন নারী, কিভাবে সেখানে সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে এ ধরনের একটি শর্ত যোগ করা হয়৷
এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের যুক্তি, এ শর্ত দিয়ে তারা স্বামীর অনুমতি নেওয়া বোঝাতে চাননি, বরং নারী কর্মীদের কর্মক্ষেত্রে কিছু বেনিফিট থাকে, যেগুলো তাদের স্বামীরা পান, তা নিশ্চিত করতে চেয়েছে৷
আইনও তাদের পক্ষেই কথা বলছে৷ হোক সে আইন বহু পুরাতন, সেই ১৯২৫ সালের দ্য ইন্ডিয়ান সাকসেশন অ্যাক্ট৷
আর সরকার যেহেতু আইনটি বাতিল করেনি, তাই ব্যাংকের ভাষ্য বিষয়টি তারা আইন মেনেই করেছে৷ তবে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ায় এবং নারী প্রার্থীদের আপত্তির কথা জানতে পারায় ব্যাংক এটা আমলে নিয়ে ভবিষ্যতে সরকারকে এটি সম্পর্কে জানাবেন বলে বাংলাদেশের একটি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন ব্যাংকটির কর্মকর্তারা৷
বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে নারীরা, বিশেষ করে বদলিসহ আরো কয়েকটি ক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধা পেয়ে থাকেন৷
কোনো সন্দেহ নেই, এই সামান্য সুবিধাটুকু তাদের কর্মজীবনে অনেক বড় ভূমিকা রাখছে৷ ব্যক্তি জীবনে তারা আত্মনির্ভরশীল হচ্ছেন, বাড়ছে আত্মবিশ্বাস৷
কিন্তু শুধু এই সুবিধাটুকুর কথা বলে স্বামীর স্থায়ী ঠিকানাকে নিজের স্থায়ী ঠিকানা করার বাধ্যবাধকতা একজন নারীর উপর চাপিয়ে দেয়া কতটা যুক্তিযুক্ত? যদি সুক্ষ্মভাবে বলি তবে বলতে হয়, কতটা সম্মানজনক৷
বরং নারীদের হাতেই ছেড়ে দেওয়া হোক তার স্থায়ী ঠিকানার সিদ্ধান্ত৷ সেই বলুক না কোনটি হবে তার স্থায়ী ঠিকানা৷