নর্ড স্ট্রিম বিস্ফোরণ: তদন্ত রিপোর্ট আসেনি, জল্পনাই সার
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩কারা এই বিস্ফোরণের পিছনে ছিল, সে ব্যাপারে গত এক বছর ধরে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে জার্মানি, সুইডেন, ডেনমার্ক। কিন্তু সেই তদন্তে কী হয়েছে তা বলা হয়নি। বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকরা নিজেদের মতো করে তদন্ত করেছেন। তাদের তদন্তে উঠে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য।
২০২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাত দুইটার সময় জার্মানি, সুইডেন ও ডেনমার্কে মৃদু মাটি কাঁপার চিহ্ন ধরা পড়লো।
ঠিক একই সময় জর্মানি ও রাশিয়ার মধ্যে এক হাজার দুইশ কিলোমিটার লম্বা পাইপলাইন অপারেটররা দেখলেন গ্যাসের চাপ হঠাৎ অত্যন্ত কমে গেল। সূর্যোদয়ের পরে দেখা গেল বাল্টিক সাগরে জলের উপর মিথেন গ্যাসের বুদবুদ উঠছে। জলের ৮০ মিটার বা ২৬০ ফিট গভীর থেকে এই বুদবুদ উপরে উঠছে। কিছুক্ষণ পরেই স্পষ্ট হলো, জার্মানি ও রাশিয়ার মধ্যে নর্ড স্ট্রিম ১ ও ২ পাইপলাইনের অনেকটা অংশ উড়ে গেছে।
তদন্ত চলছে
জার্মানি, সুইডেন, ডেনমার্কের তদন্ত চলছে। এক বছর পরেও তারা কেউই জানায়নি, কারা এই বিস্ফোরণের পিছনে ছিল। ফলে মানুষের দৃষ্টি সংবাদমাধ্যমের তদন্তের দিকে যাচ্ছে।
২০২৩ সালের মার্চে জার্মানির সরকারি রেডিও এআরডি এবং একটি সংবাদপত্রের তদন্ত-রিপোর্ট রীতিমতো আলোড়ন তোলে। সেখানে বলা হয়, ইউক্রেনের একটি ১৫ মিটার লম্বা ইয়ট 'অ্যান্ড্রোমিডা' এই বিস্ফোরণের পিছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। পাঁচজন পুরুষ ও একজন নারী এই ইয়টে করে জার্মানির একটি বন্দর থেকে ২০২২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রওয়ানা হন। জার্মান ফেড়ারেল পুলিশ অফিসের তদন্তেও দেখা গেছে, এই ইয়টে বিস্ফোরক নেয়া হয়েছিল, একই বিস্ফোরক দিয়ে নর্ড স্ট্রিমে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল।
ইউক্রেনের স্পেশ্যাল অপারেশন ফোর্স?
জুন মাসের গোড়ায় ওয়াশিংটন পোস্টে একটা রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সেখানে বলে হয়েছে, অ্যামেরিকা ও ইউরোপের গোয়েন্দা বিভাগ ২০২২ সালের জুন মাসে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিল, ইউক্রেনের ডাইভাররা নর্ড স্ট্রিমের ক্ষতি করতে পারে।
ওয়াশিংটন পোস্টের রিপোর্ট বলছে, ইউক্রেনের ডাইভাররা সরাসরি কম্যান্ডার-ইন-চিফকে রিপোর্ট করত। জেলেনস্কি এই পরিকল্পনার কথা জানতেন না।
গত অগাস্টে জার্মানির সরকারি রেডিও জেডডিএফ এবং ম্যাগাজিন স্পিগল-এর ২০ সদস্যের তদন্তকারী দল জানিয়েছিল, যাবতীয় ক্লু একটা দিকেই যাচ্ছে,, সেটা হলো ইউক্রেন। তদন্তকারী দলের এক সদস্য ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''রাশিয়া এই বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত সেরকম কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। অ্যামেরিকার জড়িত থাকারও কোনো প্রমাণ মেলেনি।''
ফেব্রুয়ারিতে অবশ্য অ্যামেরিকার প্রখ্যাত সাংবাদিক সিমোর হার্শ একজন সূত্রের ভরসায় জানিয়েছিলেন, অ্যামেরিকাই এই বিস্ফোরণের পিছনে ছিল।
মার্কিন হুমকি
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন জার্মানির চ্যান্সেলর শলৎসের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ''রাশিয়া যদি আক্রমণ করে, তাহলে নর্ড স্ট্রিম ২ আর থাকবে না। আমরাই তা শেষ করে দেব।''
নর্ড স্ট্রিমে বিস্ফোরণের পর অ্যামেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন বলেন, ''রাশিয়ার জ্বালানির উপর থেকে নির্ভরতা শেষ করার সুয়োগ এসে গেছে।''
জার্মানি ও রাশিয়ার মধ্যে এই জ্বালানি সহযোগিতা কখনোই অ্যামেরিকা পছন্দ করেনি।
রাশিয়ার উদ্দেশ্য
এই গ্যাস পাইপলাইন ধ্বংস করার পিছনে রাশিয়ারও মোটিভ ছিল। ২০২২-এর মাঝামাঝি রাশিয়াও নর্ড স্ট্রিম ১-এ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এর ফলে তারা চুক্তিভঙ্গ করেছিল। ফলে পশ্চিমা দেশগুলি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তুলতে পারত। পাইপলাইনে বিস্ফোরণের পর আর এই দাবি তোলার সুযোগ থাকলো না।
ম্যাথিয়াস ফন হেইন/জিএইচ