নব্য জেএমবি আবার সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে
২ মার্চ ২০১৭বুধবার রাতে বাংলাদেশের উত্তরের জেলা বগুড়ার শেরপুর উপজেলার জামনগর এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে আমিজুল ইসলাম নিহত হয় বলে পুলিশ জানায়৷
শেরপুর থানার ওসি খান মো. এরফান সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘‘নিহত আমিজুল শেরপুরের মহিপুর জুয়ানপুর কুটিরভিটা গ্রামে গ্রেনেড বিস্ফোরণ মামলার সন্দেহভাজন আসামি৷ তার বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ি এলাকায়৷ বগুড়ার ডিবি পুলিশের একটি দল গত মঙ্গলবার রাতে রাজশাহীর গোদাগাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে৷ গ্রেপ্তারের সময় তার সঙ্গীদের ছুরিকাঘাতে ডিবি পুলিশের দুই কনস্টেবল গুরুতর আহত হন৷’’
তিনি দাবি করেন, ‘‘অস্ত্র উদ্ধার ও অন্য জঙ্গিদের গ্রেপ্তারে জন্য বগুড়ার ডিবি ও শেরপুর থানা পুলিশ জঙ্গি আমিজুলকে নিয়ে বুধবার দিন ও রাতে বগুড়া এবং রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়৷ রাতে তাকে রাজশাহী নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল৷ বৃহস্পতিবার ভোররাত ৩টার দিকে সীমাবাড়ি-রানীরহাট আঞ্চলিক সড়কের জামনগর এলাকায় পৌঁছালে সঙ্গিরা জঙ্গি আমিজুলকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য পুলিশের ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণ করে৷ পুলিশও পাল্টা গুলি করে৷ এ সময় আমিজুল পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে গুলিবিদ্ধ হয়৷ তাকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন৷’’ তার কাছ থেকে তিন রাউন্ড গুলিভর্তি একটি বিদেশি পিস্তল ও দু’টি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ৷
পুলিশ আরো জানায়, ‘‘এক বছর আগে সে জেএমবিতে যোগ দিয়েছিল৷ মাঝে মাঝে সে রাজশাহীর গোদাগাড়ি উপজেলার বুজরুক রাজারামপুর গ্রামে তার পালক বাবা আতাউর রহমানের বাড়িতে থাকতো৷ সেখানে জেএমবি সদস্যের গোপন বৈঠক ও প্রশিক্ষণ দেয়া হতো৷ এলাকায় তার চলাফেরা ছিল সন্দেহজনক৷ দক্ষতার কারণে পরবর্তীতে তাকে জেএমবির সামরিক নব্য শাখার উরাঞ্চলীয় প্রধান করা হয়৷’’
গত বছরের ১ জুলাই ঢাকার হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলার পর নব্য জেএমবির নাম আলোচনায় আসে৷ নব্য জেএমবি ওই হামলা চালায়৷ হামলায় দেশি-বিদেশি মোট ২২ জন নাগরিক নিহত হন৷ এরপর থেকে নব্য জেএমবির বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান শুরু হয় বাংলাদেশে৷ এই অভিযানে হোলি আর্টিজানে হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ও নব্য জেএমবির প্রধান তামিম চৌধুরীসহ এপর্যন্ত ৩৯ জন নিহত হয়েছে৷
যেসব জঙ্গি নিহত হয়েছে
হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলায় দেশি-বিদেশি ২২ জন নাগরিক নিহতের বাইরেও, অভিযানে পাঁচজন জঙ্গিও নিহত হয়৷ তারা হলো – রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিব্রাস ইসলাম, মীর সাবিহ মোবাশ্বের, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম পায়েল৷
গুলশানের ঘটনার সাতদিনের মাথায় ৮ জুলাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের দিন পুলিশের ওপর হামলা চালায় নব্য জেএমবির একটি গ্রুপ৷ এ সময় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় আবীর রহমান নামে নব্য জেএমবির এক সদস্য৷ পরে ৫ আগস্ট র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ওই ঘটনায় আটক শফিউল ও তার সহযোগী আবু মোকাতিল নিহত হয়৷
২৬ জুলাই ঢাকার কল্যাণপুরের তাজমঞ্জিলের জঙ্গি আস্তানায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অভিযানে নিহত হয় ন’জন জঙ্গি, যাদের মধ্যে আটজনের পরিচয় মিললেও একজনের পরিচয় এখনো জানা যায়নি৷ পরিচয় পাওয়া আটজন হলো – দিনাজপুরের আব্দুল্লাহ, টাঙ্গাইলের আবু হাকিম নাইম, ঢাকার ধানমন্ডির তাজ-উল-হক রাশিক, ঢাকার গুলশানের আকিফুজ্জামান খান, ঢাকার বসুন্ধরার সেজাদ রউফ অর্ক, সাতক্ষীরার মতিউর রহমান, রংপুরের রায়হান কবির ওরফে তারেক এবং নোয়াখালীর জোবায়ের হোসেন৷
২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অভিযানে নিহত হয় নব্য জেএমবির ‘মাস্টার মাইন্ড’ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ক্যানাডিয়ান নাগরিক তামিম আহম্মেদ চৌধুরী৷ তামিমের সঙ্গে তার আরো দুই সহযোগী নিহত হয়৷ তাদের একজন ধানমন্ডির তওসিফ হোসেন ও যশোরের ফজলে রাব্বী৷
২ সেপ্টেম্বর মিরপুরের রূপনগরে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হয় জাহিদুল ইসলাম নামে অবসরপ্রাপ্ত এক মেজর৷ সে জেএমবির সামরিক প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিল৷
১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরের একটি বাড়িতে অভিযান নব্য জেএমবির অন্যতম শীর্ষ নেতা তানভীর কাদেরী নিহত হয়৷ সেখান থেকে আটক করা হয় তিন নারী জঙ্গি ও তানভীরের ১৪ বছর বয়সি ছেলেকে৷
৮ অক্টোবর গাজীপুরে পৃথক দুই অভিযানে ৯ জঙ্গি ও টাঙ্গাইলে দুই জঙ্গি নিহত হয়৷ একই রাতে সাভারের আশুলিয়ায় র্যাবের অভিযানের সময় পালাতে গিয়ে বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয় জেএমবির অর্থদাতা আবদুর রহমান ওরফে নাজমুল ওরফে সারওয়ার জাহান৷ পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়৷ ২৪ ডিসেম্বর আশকোনার জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের সময় সারিকা নামে এক নারী জঙ্গি আত্মঘাতী হয় এবং কিশোর আফিফ কাদেরি নিহত হয়৷ আফিস আজিমপুর অভিযানে নিহত তানভীর কাদেরির ছেলে৷
৬ জানুয়ারি ঢাকার রায়ের বাজারে নিহত হয় জঙ্গি মারজান ও সাদ্দাম৷ সর্বশেষ ২ ফেব্রুয়ারি বুধবার ভোররাতে বগুড়ায় নিহত হলো আমিজুল ইসলাম ওরফে আল-আমিন ওরফে রনি৷
কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘নব্য জেএমবির শক্তি এখন আর আগের মতো নেই৷ তাদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের কেউই আর তেমন বেঁচে নেই৷ তবে এরপরও তারা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে৷ আর আমাদের কাছে যখন সংগঠিত হওয়ার খবর আসে, তখনই আমরা ব্যবস্থা নিই৷’’
তিনি আরো জানান, ‘‘নব্য জেএমবির বিচ্ছিন্ন সদস্যরা আঞ্চলিকভাবে সংগঠিত হয়ার চেষ্টার খবর আমরা পাই৷ তবে কেন্দ্রীয়ভাবে তাদের সাংগঠিন কার্যক্রম আছে বলে মনে হয় না৷’’
শায়খ আবু ইব্রাহিম আল হানিফ নামে একজন কেন্দ্রীয়ভাবে নব্য জেএমবির হাল ধরেছেন বলে শোনা যাচ্ছে৷ এ নিয়ে মনিরুল ইসলামকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা এর সত্যতা পাইনি৷’’
প্রিয় পাঠক, এই বিষয়ে আপনার মন্তব্য জানাতে পারেন নীচে মন্তব্যের ঘরে...