নতুন রূপে ১৬ই ডিসেম্বর
১৫ ডিসেম্বর ২০১৬সম্প্রতি বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক ‘ডেইলি স্টার' যুক্তরাষ্ট্রের ক্লার্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণারত মো. সাজ্জাদুর রহমানের সাক্ষাৎকার নিয়েছে৷ সাক্ষাতকারে মো. সাজ্জাদুর রহমান জানান, দেশের বাইরে থেকে মুক্তিযু্দ্ধের বিপুল পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ করা খুবই কঠিন৷ সেক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ ট্রাস্ট-এর কাছ থেকে তিনি গবেষণার অনেক তথ্য উপাত্ত পেয়েছেন৷
তাঁর মতে, এটি একটি ডিজিটাল গ্রন্থাগার, সংগ্রহশালা এবং তা ঐতিহাসিক দলিল সমৃদ্ধ৷ এটি একেবারেই অবাণিজ্যিক এবং সেচ্ছাসেবীরাই আর্কাইভের কাজটি করে থাকেন৷ ২০০৭ সালে এই ওয়েবসাইটটির কাজ শুরু হয়৷
ডিসেম্বর মাস বাংলাদেশের বিজয়ের মাস৷ বুধবার ছিল শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরাজয় নিশ্চিত জেনে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী, লেখক, সাংবাদিকসহ বহু খ্যাতিমান বাঙালিকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করে৷ তাদের উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ যাতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে – তা নিশ্চিত করা৷ পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দু'দিন আগে বুদ্ধিজীবী হত্যায় প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করে রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামস বাহিনীর সদস্যরা৷ শরীরে নিষ্ঠুর নির্যাতনের নির্মম চিহ্নসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের লাশ পাওয়া যায় মিরপুর ও রায়েরবাজার এলাকায়৷ ওই জায়গা দুটি পরে বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে৷ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নিজের ভাবনা প্রকাশ করেছেন৷ কেউ শেয়ার করেছেন শহিদদের নিয়ে লেখা স্মৃতি৷
জাফর ওয়াজেদ লিখেছেন, ‘‘শিক্ষক ড. মালেকের বাড়িতে ঢুকে হানাদাররা তার টাকা ও গয়না লুটপাটের পর বাথরুমে লুকিয়ে থাকা দুই কন্যা ও স্ত্রীকে ধরে নিয়ে গেল, যারা আর ফেরেননি৷ যাবার সময় খতম করে যায় ড. মালেককে৷'' শহিদ আনোয়ার পাশা তাঁর লেখা উপন্যাসে জগন্নাথ হলের মাঠে গণহত্যার বর্ণনা করেছেন এভাবে, ‘‘ সমস্ত জীবনটাকেই একটা তীব্র বিরূপ বলে সুদীপ্তর মনে হলো, যখন তিনি জগন্নাথ হলের মাঠে সদ্য পুঁতে দেয়া নারী-পুরুষের কারও হাতের আঙুল, কারও পায়ের কিয়দংশ মাটি-ফুঁড়ে বেরুনো বৃক্ষ-শিশুর মতো মাথা তুলে থাকতে দেখলেন৷ কত শব এইখানে পুঁতেছে ওরা? এবং এমনি কত স্থানে !'' আনোয়ার পাশা একজন বাংলাদেশি কবি, কথা সাহিত্যিক এবং শিক্ষাবিদ৷ একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর তাঁকেও ধরে নিয়ে হত্যা করে আল-বদর বাহিনীর সদস্যরা৷ চলচ্চিত্র পরিচালক জহির রায়হান ও লেখক শহীদুল্লাহ কায়সার এবং লেখক জহির রায়হানকেও বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় আল বদর বাহিনী৷ তাঁরাও আর ফেরেননি৷
শহিদ কন্যা মেঘনা গুহঠাকুরতা ফেসবুকে শেয়ার করেছেন শহিদ কবি সেলিনা পারভীনের কথা৷ যেখানে লেখা হয়েছে, ‘‘কবি সেলিনা পারভীন সর্বত্রই তার স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য সমালোচিত হতেন, চাকরি হারাতেন৷ ৬৯-এর গণ অভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন আর পাশাপাশি নিজের পত্রিকা প্রকাশের কাজ করতে থাকেন৷ একাত্তরে বাঙালি বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনাতে সেলিনা পারভীনের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়৷ ১৩ ডিসেম্বর কারফিউয়ের মধ্যে সিদ্ধেশ্বরী আউটার সার্কুলার রোডের বাসা হতে সেলিনা পারভীনকে চোখ বেঁধে একটা মাইক্রোবাসে করে উঠিয়ে নিয়ে যায় আলবদর বাহিনী৷ ছেলে সুমনকে ছেড়ে যাওয়ার সময়ও তিনি নির্ভীক আচরণ করেন৷ এরপর ১৮ ডিসেম্বর রায়ের বাজারের বধ্যভূমিতে চোখে ও কানে বুলেট এবং বেয়নেটের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত সেলিনা পারভীনকে পাওয়া যায়৷''
বুদ্ধিজীবী দিবসে পল্লব হোসেন লিখেছেন, ‘‘অন্য বছরের শহিদ বুদ্ধিজীবী ও বিজয় দিবস উদযাপনের চেয়ে এবারের শহিদ বুদ্ধিজীবী ও বিজয় দিবস উদযাপনের একটা ভিন্ন তাৎপর্য আছে, কারণ, গত কয়েক বছরে একাত্তরে গণহত্যা ও বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে প্রথম সারির কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি হয়েছে এবং কয়েকজন জেল খাটছেন৷ এবারের বুদ্ধিজীবী দিবস উদযাপন তাই দুঃখভারাক্রান্ত স্মৃতিচারণ ও বেদনাহত পরিস্থিতির মধ্যেও খানিকটা আনন্দের৷''
ফিরোজ আহমেদ লিখেছেন, ‘‘প্রায়ই দেখবেন, বুদ্ধি বিক্রি করা মানুষগুলো যেমন হয় খুব চতুর, সত্যিকারের বুদ্ধিজীবীরা হন শিশুর মতো সরল৷ শিশুর সারল্য আর অকপট প্রকাশের অধিকার যে সমাজে বুদ্ধিজীবীর সাধারণ সংস্কৃতি, সেই সমাজ যে কোনো বিপদ অতিক্রম করতে পারবে৷ দুর্ভাগ্যক্রমে, মোসাহেবের দুর্নীতি আর কুটিলতা অধিকাংশ বুদ্ধি বিক্রি করা পণ্ডিতের সাধারণ বৈশিষ্ট্য, এই সমজে তারাই এই মুহূর্তে প্রায় একচেটিয়া দাপটের সাথে আছে৷ যে অল্প কিছু মানুষ এই নিদারুণ সময়েও তাদের স্পর্ধা ধরে রেখেছেন, তাদের শ্রদ্ধা জানাই শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসের এই উপলক্ষ্যটিতে৷''
অন্যদিকে, এই বিশেষ দিনটিতে মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ হারানো সব শহিদের নাম গেজেটভুক্ত করার দাবি জানিয়েছে শহিদ সন্তানদের সংগঠন প্রজন্ম ৭১৷ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে রায়ের বাজার বদ্ধভূমিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এক মানববন্ধন থেকে তাঁরা এ দাবি জানিয়েছেন৷
সংকলন: অমৃতা পারভেজ
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী