নগর পরিকল্পনায় লিখে রেখে মাঠ দখলের প্রবণতা রুখতে হবে
২৯ এপ্রিল ২০২২ডয়েচে ভেলে : সাম্প্রতিক সময়ে কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ নিয়ে একটি ঘটনা ঘটেছে৷ খেলার মাঠের জায়গায় থানা তৈরির এ চেষ্টা আপনাকে কতটা ব্যথিত করেছে?
আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি : দেখুন, ঢাকা শহরের সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে খেলার মাঠ তো আগেই হারিয়ে গেছে৷ কিছু খোলা জায়গা যে ছিল, সেগুলোও আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে৷ একজন ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে এতে আমি অবশ্যই উদ্বিগ্ন৷ এই যে কলাবাগানের মাঠটির কথা বলা হচ্ছে, সেটি সম্ভবত মাঠও না৷ পরিত্যক্ত সম্পত্তি৷ তবু খেলাধুলা এবং বিভিন্ন কাজে তা ব্যবহার করা হতো৷ সেখানে কলাবাগান থানা তৈরির কথা বলা হয়েছিল, সেটিও যে জনস্বার্থে, তা-ও আমি বুঝি৷ বলা হচ্ছে, আইনগতভাবে সব কিছু করা হচ্ছে৷ তা-ও বুঝলাম৷ তবে এখানে লিগ্যাল ব্যাপার যেমন আছে, তেমনি মোরাল ব্যাপারও আছে৷ থানার যেমন প্রয়োজন, আমি মনে করি, এর চেয়েও বেশি করে খেলার জায়গার প্রয়োজন৷ খেলার জায়গায়ই যে থানা হতে হবে, এমন কোনো কথা নেই৷ অন্য জায়গায়ও থানা হতে পারে৷
ক্রীড়া সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন প্রায় চার দশক৷ এ সময়ে ঢাকা শহরে মাঠের সংখ্যা ক্রমশ কমে যেতে দেখেছেন৷ এখন তেঁতুলতলা মাঠকে কেন্দ্র করে বড় পরিসরে আপনার যে উপলব্ধি, সেটি কি সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের মধ্যে আপনি দেখেছেন? গত ১০-২০-৩০ বছরে?
আমি নিশ্চিত যে, এসব বিষয়ে তারাও অবগত আছেন৷ সে হিসেবে আমাদের জাতীয় সংসদে একটি আইন পাস হয়েছিল নব্বই দশকের দ্বিতীয়ার্ধে৷ সেটি ছিল বোধহয় উন্মুক্ত জলাশয় ও খেলার মাঠ সংরক্ষণের ব্যাপারে৷ আইনটি যদি এখনো কার্যকর থাকে, তাহলে কর্তৃপক্ষ সেটি মাথায় রেখে কাজ করবেন বলে বিশ্বাস করি৷ খেলার মাঠ না থাকলে শিশুরা যাবে কোথায়?
সংগঠক হবার সুবাদে ঢাকা শহরের এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন মাঠে নিশ্চয়ই গিয়েছেন৷ নতুন খেলোয়াড় উঠে আসা দেখেছেন৷ তাদের মনের আনন্দে খেলতে দেখেছেন৷ এই যে তেঁতুলতলা মাঠের ঘটনার প্রেক্ষিতে পুরনো সে দিনগুলোর কথা আপনার মনে পড়ছে কিনা?
আমরা অনেক আগে থেকেই অনেক কিছু ভুল করে ফেলেছি৷ পাকিস্তান আমলেও দেখেছি, নির্দিষ্ট এলাকার জন্য নির্দিষ্ট মাঠ রাখা৷ সেগুলোও শেষ পর্যন্ত থাকেনি৷ এরপর খোলা জায়গা পেলে নাগরিকরা বিকল্প ব্যবস্থা করে নিয়েছে৷ এসবের জন্যই সমস্যা৷ মাঠ নির্দিষ্ট করা থাকলে আমার মনে হয়, এ প্রশ্নগুলো আসতো না৷ জনসংখ্যার অনুপাতে যদি এলাকায় নির্দিষ্ট মাঠ না থাকে, তাহলে এ সমস্যাগুলো হতেই থাকবে৷
যে প্রসঙ্গটি উল্লেখ করলেন, সেক্ষেত্রে কি বড় একটি উদাহরণ আবাহনী মাঠ? যেটি ধানমন্ডি এলাকার বাসিন্দাদের জন্য৷ আবাহনী ক্লাব তো সেটি করে দেখিয়েছে...
হ্যাঁ, এটি ঠিক কিছুটা৷ তবে এই আবাহনী মাঠও এক সময় নিয়ে নেবার পাঁয়তারা হয়েছিল৷ কিছু আমলা ও স্বার্থান্বেষী মহল তা করতে চেয়েছিল৷ আবাহনী ক্লাব সেটি ঠেকিয়েছে৷ আমার কথা হচ্ছে, প্ল্যানের মধ্যেই থাকতে হবে যে, এখানে মাঠ, এখানে পার্ক৷
বাংলাদেশের বাকি প্রায় সব কিছুর মতো খেলাধুলাও ঢাকাকেন্দ্রিক৷ অথচ এ শহরে মাঠের সংখ্যা খুবই কম৷ যদি যথেষ্ট মাঠ থাকতো, তাহলে শুধু ক্রিকেট না, সব ধরনের খেলাধুলায় উৎকর্ষতার জায়গা আরো বেশি হতো বলে কি আপনি মনে করেন?
দেখুন, উৎকর্ষের ব্যাপারটা আসছে পরে৷ আগে মূল জায়গাটা বুঝতে হবে৷ ক্রিকেট বা ফুটবল টিম নিয়ে বললে শেষ পর্যন্ত আমরা জাতীয় দলের কথাই বলি৷ কিন্তু সব তো আর জাতীয় দল না৷ সেখানে ১১ জন খেলছে৷ এর বাইরেও তো হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ ছেলে-মেয়ে রয়ে গেছে, যাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্যও অনেক কিছু প্রয়োজন৷ এখানে সবই জাতীয় দলের ব্যাপার না৷ বিনোদন, ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটিজের দরকার আছে৷ এ প্রয়োজনীয়তা আরো গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি৷ যাদের জন্য সুযোগ তৈরি করা গেছে এক সময় গিয়ে হয়তো জাতীয় পর্যায়ে অবদান রাখতে পারবে৷