না, সাগর সরওয়ার আর মেহেরুন রুনির হত্যাকারীরা এখনও গ্রেপ্তার হয়নি৷ আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ একটি হত্যাকাণ্ড মনে হলেও সেটা যে আদৌ সাধারণ নয়, তা প্রমাণ করে দিয়েছে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ৷ হত্যাকাণ্ডের দুই মাসের মাথায় উচ্চ আদালতে নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে তদন্ত থেকে সরে দাঁড়িয়েছে গোয়েন্দারা, যা নজিরবিহীন৷
শুধু তাই নয়, খুনিদের বিচারের দাবিতে সাংবাদিকদের আন্দোলনও হঠাৎ করে থামিয়ে দেয়া হয়৷ আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী সাংবাদিক নেতাকে দেয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার পদ৷ সেই পদ পাওয়ার পর সাগর-রুনির খুনিদের বিচার চেয়ে তাঁর কোনো উদ্যোগ আর চোখে পড়েনি৷ বরং সাংবাদিকদের মধ্যকার অনৈক্য, অসহায়তা ফুটে উঠেছে খুনিদের বিচার চাওয়ার আন্দোলনের করুণ পরিণতির মধ্য দিয়ে৷
সাগর এবং রুনি প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক ছিলেন৷ রুনির সহকর্মীদের কয়েকজন এখন বাংলাদেশের তারকা সাংবাদিক৷ দেখার বিষয় হচ্ছে, সেই তারকা সাংবাদিকরাও রাতারাতি ভুলে গেছেন যে, মেহেরুন রুনি নামে তাঁদের একজন সহকর্মী ছিলেন, যাঁকে রাতেরবেলা তাঁর বেডরুমে স্বামীসহ কুপিয়ে খুন করা হয়েছিল৷ এই তারকারা আজও যেসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে চান না, এড়িয়ে যান, ভয় পান, তার অন্যতম হচ্ছে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড৷ রুনির টিভি চ্যানেলের কর্ণধার বরং তাঁর এই নারী কর্মীর চরিত্রহানি করেছেন প্রকাশ্যে৷ কোনোরকম তথ্য-প্রমাণ ছাড়া একজন খুন হওয়া নারীকে অপবাদ দেয়া হয়েছে সেই হত্যাকাণ্ডের পক্ষে সাফাই গাইতে, এমন গর্হিত অপরাধেরও কোনো বিচার হয়নি৷
চেষ্টা করেছিলেন সাগরের সহকর্মীরা৷ রাজপথে নিয়মিতভাবে মানববন্ধন করেছিলেন তাঁরা, মিউজিক ভিডিও তৈরি করে হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিকে মজবুত করার চেষ্টাও করেছিলেন৷ তবে তাঁদের সীমাবদ্ধতাও চোখে পড়েছে৷ যে সাংবাদিক এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে সবচেয়ে বেশি অনুসন্ধান করেছেন, তাঁকে, তাঁর সন্তানকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে৷ এরপর সেই সাংবাদিক নিজেকে গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন৷
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার এবং মেহেরুন রুনিকে কেন রাতের আঁধারে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে, আমরা এখনো জানি না৷ নানা রাখঢাক পেরিয়ে নির্ভরযোগ্য, অনির্ভরযোগ্য সূত্রে যে সব কারণ শোনা যায়, সেগুলোর মধ্যে সাগরের লেখা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক বই আছে, আছে তেল, গ্যাস নিয়ে রুনির অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের কথা৷ কেউ কেউ রুনির চরিত্রকে দোষ দিয়ে দায় এড়াতে চান৷ কিন্তু কেন এই হত্যাকাণ্ড তা আজও প্রকাশ হয়নি৷ তবে এতটুকু বোঝা যায় যে, খুনিরা সাধারণ কেউ নন৷ তাদের রক্ষায় যারা সচেষ্ট, তাদের হাত অনেক লম্বা৷ সেই লম্বা হাতের কাছে সাংবাদিকরা যেন মেরুদণ্ডহীন সরীসৃপ৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷