‘ধর্ষণ' নিয়ে বিনোদন!
২ এপ্রিল ২০১৮বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভিতে অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হয় গত ২৪ মার্চ৷ ২৪ মিনিটের অনুষ্ঠানটির নাম ‘এবং পূর্ণিমা'৷ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত চিত্র নায়িকা পূর্ণিমা এর সঞ্চালক এবং অতিথি ছিলেন চলচ্চিত্রের খলনায়ক ও চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাভাপতি মিশা সওদাগর৷ অনুষ্ঠানে ১৩ মিনিটের কিছু পর সিনেমায় ধর্ষণ দৃশ্য নিয়ে কথা শুরু হয়৷
পূর্ণিমা মিশা সওদাগরের কাছে জানতে চান, ‘‘আপনি সিনেমাতে কতবার ধর্ষণ করেছেন? (হাসি) আপনার কয়শ' ছবি হয়েছে, প্রত্যেকটা ছবিতেই কি ধর্ষণের সিন ছিল? কার সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন ধর্ষণের সিন করতে?'' আর এসব প্রশ্নের জবাবও দেন মিশা সওদাগর৷ পুরোটা সময় তাঁরা এ নিয়ে হাস্যরসের মধ্যে ছিলেন৷ অনুষ্ঠানটি রেকর্ডেড৷ আর প্রশ্নগুলোও লিখিত বলেই মনে হয়েছে৷
অনুষ্ঠানের ওই অংশটুকুর ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেয়া হলে তা ভাইরাল হয়৷ শুরু হয় তুমুল সমালোচনা৷ অনুষ্ঠানের অতিথি মিশা সওদাগর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কে কী প্রশ্ন করবে সেটা তার ব্যাপার৷ কেন প্রশ্ন করলেন , কী প্রশ্ন করলেন তার জবাব তো আমি দিতে পারবো না৷ আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছে, আমি আমার মতো করে জবাব দিয়েছি৷ আর এটা তো অভিয়নয়ের ব্যাপার৷ বাস্তবের কিছু নয়৷ আমার মনে হয়, মিডিয়ার লোকের কাজ কম৷ খামাখা৷ বেকার লোকজন আছে৷ আমার মনে হয়, ফেসবুক আসার পর বেকার আরো বেড়ে গেছে৷ একটা গ্রুপ এটা নিয়ে লেগে আছে৷ বিষয়টি তো অভিনয়ের৷ যদি প্রশ্নটি হতো, আপনি কার সাথে মারামারি করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন? অথবা যদি প্রশ্ন করা হতো, আপনি কোন নায়িকার সঙ্গে বাসর ঘরের বেড সিন করতে পছন্দ করেন? নিশ্চয়ই এটা সঠিক প্রশ্ন না, নাকি? আর ওটা তো আমার ব্যাপার না, স্ক্রিপ্টের ব্যাপার৷''
শিল্পীর সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘আমি তো সামাজিক দায়বদ্ধতার জন্য অভিনয় করি৷ আর ওটা তো আমার অভিনয়ের পার্ট৷''
তবে তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘যাঁরা অনুষ্ঠানের প্রশ্ন লেখেন, তাঁদের আরো সতর্ক হওয়া প্রয়োজন৷ আমার জীবনে এই ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি আমি এই প্রথম হয়েছি৷ ভবিষ্যতে আমি এর এ ধরনের প্রশ্ন শুনতে চাই না৷ কারণ, সমাজ এই ধরনের প্রশ্ন ভালো চোখে দেখে না৷ আমি বলবো, এই ধরনের প্রশ্ন স্টপ করেন৷''
এদিকে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক চিত্রনায়িকা পূর্ণিমার সঙ্গে ফোন ও ফেসবুকে যোগাযোগ করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি৷ তবে তিনি রবিবার রাতে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের সাংবাদিক মাহমুদ মানজুরকে টেলিফোনে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টি হলো সিনেমা নিয়ে, সিনেমার দৃশ্য নিয়ে অরিজিনাল ধর্ষণ নিয়ে নয়৷ আর আমি অনুষ্ঠানের শুটিং করেছি দুই মাস আগে৷ কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে এত কিছু হচ্ছে, এই সময়ে এপিসোডটা প্রচার করায় হিতে বিপরীত হয়েছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘ফ্যানরা তো আর অতকিছু বুঝবে না৷ আর বাংলাদেশে এইসব বিষয়গুলো সবাই এত ইজিভাবে নিতে পারে না৷ এটা একটা ফান শো বা যেটাই হোক, যদি কারো কোনো কষ্ট দিয়ে থাকি৷ কেউ যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন৷ সেজন্য আমি দুঃখিত৷ আর যাঁরা নেগিটিভ লিখছেন, তাঁদের উদ্দেশ্যে কথা, তাঁরা লিখুন, তাঁদের যত মন চায় লিখুন৷ তাঁরা লিখবেন৷ কারণ, তাঁরা লিখলে আমি আলোচনায় থাকি৷ যাঁকে নিয়ে আলোচনা, তাঁকে নিয়েই সমালোচনা৷''
এদিকে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা কী প্রচার করব আর কী প্রচার করবো না, তা আমাদের বোঝা উচিত৷ বিশেষ করে টেলিভিশনের ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকা দরকার৷ ঘরে বা সামাজিকভাবে আমরা যে দৃশ্য, যে কথা প্রত্যাশা করি না, তা টেলিভিশনে প্রচার ঠিক না৷ কারণ, টেলিভিশন পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে দেখেন৷ তাই আমি মনে করি, এ ব্যাপারে নীতিমালা সুনির্দিষ্ট করা উচিত৷''
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘সব শিল্পির দায়বদ্ধতা আছে বলে আমি মনে করি না৷ যাঁরা এই ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত, তাঁরা শুধু নিজেদের স্বার্থের জন্য বিনোদন শিল্পী হিসেবে যা ইচ্ছা তাই করেন৷ এতে সামাজিক দায়বদ্ধতার কিছু থাকে না৷'' তিনি বলেন, ‘‘প্রকৃত শিল্পী সমাজ , দেশ ও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ থাকে৷ তাই এদের আমি শিল্পী বলতে রাজি না৷ এরা বিনোদন কর্মী৷ এরা নিজেদের স্বার্থে সংস্কৃতিকে ব্যবহার করেন৷''
এ নিয়ে কথা বলতে চাইলে আরটিভির সিইও সৈয়দ আশিক রহমান ডয়চে ভেলে'র সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি৷ তবে অনুষ্ঠানটির প্রযোজক সোহেল রানা বিদ্যুত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ওগুলো ছিল কথার পিঠে কথা৷ আর আমি আসলে ভাবতে পারিনি যে, বিষয়টি এত প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে৷ আসলে এটা আমার বোঝার ভুল৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘হ্যাঁ, এটা রেকর্ডেড প্রোগ্রাম৷ এডিট করা হয়েছে৷ তারপরও ভুল থেকে গেছে৷ এটা আমারই ব্যক্তিগত ভুল৷ ভবিষ্যতে আর যাতে ভুল না হয়, সেজন্য সতর্ক থাকবো৷''