কারাগার এখন সবার জন্য উন্মুক্ত
১৯ ডিসেম্বর ২০১৬বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো কারাগার পুরান ঢাকার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারটিকে জাদুঘরে রূপান্তর করে তা জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে৷ কারাগারটির সর্বশেষ কয়েদিদের জুলাই মাসে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়৷ এখন একশ টাকায় টিকিট কেটে যে কেউ ঘুরে দেখতে পারেন ৩৫ হেক্টর জমিতে গড়া এককালের আলোচিত এই কারাগারটি৷
গত দুই শতকের অনেক ইতিহাসের সাক্ষী এই কারাগার৷ ১৮৬০-এর দশকে অনেক সিপাহীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যার পর মরদেহ ফেলে রাখা হয়েছিল পচার জন্য৷ ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সিপাহী বিদ্রোহী অংশ নেয়ায় তাদের এই পরিণতি ভোগ করতে হয়েছিল৷ ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা ভারতবর্ষ ত্যাগের পর নতুন শাসকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোদের স্থান হয়েছিল এই কারাগারে৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান এই কারাগারে দীর্ঘদিন কারাবন্দি ছিলেন৷ কারাগারে থাকাকালে স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলন চাঙ্গা করেছিলেন তিনি৷ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয়মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলাদেশ৷ ১৯৭৫ সালে একদল বিপথগামী সেনা সদস্য শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার কয়েকমাস পরে এই কারাগারেই সে সময়কার চার শীর্ষ নেতাকে হত্যা করেছিল সেনাসদস্যরা, যাতে সেদেশে সেনা শাসন দীর্ঘায়িত করা যায়৷
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছেন, কারাগারটিকে স্কুল, শপিং সেন্টার, পার্ক এবং জাদুঘরসহ একটি ঐতিহাসিক এবং বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে সরকার৷
জেল কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম জানান, মূলত অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে সরকার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারটি বুড়িগঙ্গার তীরে অন্য একটি জায়গায় স্থানান্তর করেছে৷ তিনি বলেন, ‘‘কারাগারে ধারণক্ষমতার চেয়ে তিনগুণ বেশি কয়েদি ছিল৷ ফলে পরিস্থিতি সামাল দিতে নতুন কারাগার তৈরি করে তাদের সেখানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে৷
ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুন মনে করেন, পুরান ঢাকার আধুনালুপ্ত কারাগারটি ইতিহাসের অংশ৷ সেই ব্রিটিশ রাজ থেকে সর্বশেষ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর অবধি অনেক ঘটনা ঘটেছে সেখানে৷ তাঁর কথায়, ‘‘এটা স্বাধীনতার সংগ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক৷ অসংখ্য রাজবন্দীকে এখানে রাখা হয়েছিল, তাদের মধ্যে কয়েক হাজারকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল এই কারাগারে৷''
মিউজিয়ামে রূপ নেয়া কারাগারটির অভ্যন্তরে সর্বত্র অবশ্য এখনো যাওয়া যাচ্ছে না৷ সর্বশেষ যুদ্ধাপরাধীদের যেখানে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল, সেই অংশে এখনো পাহারা রয়েছে এবং সেখানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ৷ তবে চার নেতাকে যেখানে হত্যা করা হয়, সেই সেল এখন প্রদর্শণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে৷ সেখানের দেয়ালে এখনো বুলেটের চিহ্ন রয়েছে৷
মিউজিয়ামে রূপ নেয়ার পর কারাগারটির অনেক পুরনো কয়েদি তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সেখানে গেছেন৷ কেউ কেউ নিজের সন্তানদের কাছে কারাগারের বর্ণনা করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছেন৷ ছোট ছোট কামরায় অনেক কয়েদি একসঙ্গে থাকার অভিজ্ঞতা যে কতটা ভয়াবহ, তা তাদের চেয়ে ভালো আর কেই বা জানেন?
বন্ধু, আপনি কি মিউজিয়ামটি দেখতে যেতে চান? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷
এআই/ডিজি (এএফপি, এপি)