দেশে কি আর আইনের শাসন নেই?
১৩ জুন ২০২২প্রতিবাদ করলেই শাস্তি। গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে বাড়িঘর। সিএএ পরবর্তী আন্দোলনের সময় থেকেই একাজ শুরু করেছে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন। গত একবছরে একই ঘটনা ঘটেছে মধ্যপ্রদেশে। সম্প্রতি দিল্লির পুরসভাও একই পথে হেঁটেছে। এধরনের কাজ কি আদৌ আইনসম্মত? প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন দেশের বিশিষ্ট আইনজ্ঞ এবং সাবেক বিচারপতিরা।
এলাহাবাদ হাইকোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি গোবিন্দ মাথুর সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ''যা ঘটছে, তা সম্পূর্ণ বেআইনি। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেয়া যায় যে, বাড়িগুলিতে অবৈধ কাঠামো তৈরি করা হয়েছে, তাহলেও হঠাৎ এক রোববার সেখানে বুলডোজার নিয়ে গিয়ে সব গুঁড়িয়ে দেয়া যায় না। দেশে আইন বলে একটি বস্তু আছে। এবং আইন এই ধরনের কাজকে সমর্থন করে না।''
সম্প্রতি মহানবি (সা:) নিয়ে বিজেপির মুখপত্র নূপুর শর্মার বক্তব্য নিয়ে গোটা দেশজুড়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যে প্রতিবাদ হচ্ছে। কোনো কোনো প্রতিবাদ সহিংস হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে শনি এবং রোববার উত্তরপ্রদেশ সরকার বেছে বেছে প্রতিবাদীদের বাড়িগুলিতে 'হামলা' চালিয়েছে। একাধিক বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে প্রশাসন বলেছে, প্রতিবাদের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। বেআইনি নির্মাণ বলেই বাড়িগুলি ভাঙা হয়েছে। সাবেক বিচারপতির প্রশ্ন, কেন এই সময়েই ওই বাড়িগুলি ভাঙা হচ্ছে? কেন বার বার প্রতিবাদ করলেই বেআইনি নির্মাণের কারণ দেখিয়ে বাড়ি ভাঙা হচ্ছে?
শুধু সাবেক বিচারপতি নন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদান ফরাসাদ ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''যে কায়দায় বুলডোজার দিয়ে বাড়িগুলি ভাঙা হচ্ছে, তা বেআইনি। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে-সহ একাধিক আদালতে মামলা চলছে। সরকার এভাবে বাড়ি ভাঙতে পারে না।''
উত্তরপ্রদেশের প্রশাসন তা-ও বেআইনি নির্মাণের কথা বলছে। মধ্যপ্রদেশে সেকথাও বলা হচ্ছে না। সম্প্রতি ব্লেড নিয়ে এক নারীর উপর আক্রমণ চালিয়েছিল দুই অভিযুক্ত। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তাদের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এবং প্রকাশ্যে জানান, হামলার প্রেক্ষিতেই এই নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
ওই দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, তা ঘৃণ্য। কোনো নারীর উপর এভাবে হামলা চালানো অন্যায়। কিন্তু অভিযুক্তদের শাস্তি দেওয়ার দায়িত্ব তো আদালতের! মুখ্যমন্ত্রী কি এভাবে তড়িঘড়ি শাস্তির বিধান দিতে পারেন? অনেকেই এই প্রশ্ন তুলছেন। বস্তুত, মধ্যপ্রদেশেও একাধিক প্রতিবাদীর বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
মানবাধিকার কর্মীদের বক্তব্য, এভাবে সরকার প্রতিবাদের রাস্তা বন্ধ করতে চাইছে। প্রতিবাদীদের ভয় দেখাতে চাইছে। আদালতের দ্রুত এবিষয়ে হস্তক্ষেপ করা উচিত।
উল্লেখ্য বিচারপতি থাকাকালীন গোবিন্দ মাথুর একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছিলেন। সিএএ বিরোধী আন্দোলনকারীদের নাম রাস্তায় রাস্তায় টাঙিয়ে দিচ্ছিল উত্তরপ্রদেশ সরকার। বিচারপতি মাথুর ওই কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিচারপতি মাথুরের এই বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
এসজি/জিএইচ (পিটিআই, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস)