দূষণে, দখলে বিপর্যস্ত বাংলাদেশের নদী
বাংলাদেশের জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরীর মতে, দেশে নদীর সংখ্যা ৯০০র মতো৷ কিন্তু দখলের কারণে এর অনেকগুলোর আকার ছোট হয়ে এসেছে৷ সেই সঙ্গে আছে দূষণ সমস্যা৷
নদীর সংখ্যা
বাংলাদেশে ঠিক কতগুলো নদী আছে তা এখনও নিশ্চিতভাবে জানা যায় না৷ তবে গত ২৩ জানুয়ারি সিলেটে এক অনুষ্ঠানে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী জানান, দেশে নদীর সংখ্যা ৮৫৭টি৷ এই তথ্য আরও যাচাই-বাছাই করে কমিশনের ওয়েবসাইটে (https://nrcc.gov.bd/) প্রকাশ করা হবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি৷ তবে এখনও তা করা হয়নি৷ অবশ্য বুধবার তিনি ডয়চে ভেলেকে জানান, নদীর সংখ্যা এখন কিছুটা বেড়ে ৯০০ হয়েছে৷
দখলদারদের তালিকা
জমি দখলের মতো নদী দখলও একটি বড় সমস্যা৷ সাধারণত প্রভাবশালীরাই নদী দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলেন৷ জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের ওয়েবসাইটে সারা দেশে নদ-নদীর এমন ৬৮ হাজার দখলদারের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে৷ জেলাওয়ারী দখলদারদের নাম ও তাদের স্থাপনা সম্পর্কে সেখানে তথ্য দেয়া আছে৷ ছবিতে বুড়িগঙ্গার তীরে অবৈধ স্থাপনা দেখা যাচ্ছে৷
আরেক তালিকা
নদী দখলদারদের তালিকা তৈরি করতে ২০১৭ সালে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছিল নদী রক্ষা কমিশন৷ এর মাধ্যমে ৩৭ হাজার ৩৯৬ দখলদারকে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ তবে সেই তালিকা ওয়েবসাইটে দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে৷ অবশ্য কমিশনের চেয়ারম্যান বুধবার ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ঐ তালিকা যাচাইবাছাইয়ের জন্য জেলা প্রশাসকদের কাছে পাঠানো হয়েছে৷ সেখান থেকে হালনাগাদ হয়ে আসলে তালিকাটি ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে৷
দূষণ নিয়ে গবেষণা
বেসরকারি সংস্থা ‘রিভারস অ্যান্ড ডেল্টা রিচার্স সেন্টার’ আরডিআরসি ৫৬টি প্রধান নদ-নদীর দূষণ নিয়ে বছরব্যাপী গবেষণা করে ১৪ মার্চ প্রতিবেদন (https://shorturl.at/cpIM9) প্রকাশ করেছে৷ গবেষণায় নদীগুলোর পানির গুণাগুণ পরিমাপ করে দেখা গেছে শুধু শহর বা উপশহরে নয়, প্রত্যন্ত অঞ্চলের নদীতেও প্লাস্টিক ও শিল্পবর্জ্যের দূষণ ছড়িয়ে পড়েছে৷ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গবেষণাটি পরিচালিত হয়৷
সবচেয়ে দূষিত তিন নদী
আরডিআরসি-র গবেষণার তথ্য বলছে, বাংলাদেশের সবচেয়ে দূষিত তিন নদী গাজীপুরের লবণদহ, নরসিংদীর হাড়িধোয়া ও হবিগঞ্জের সুতাং৷ এছাড়া বাকি ৫৩টি নদীও অতিমাত্রায় দূষিত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে৷
লবণদহ নদীতে দূষণ
গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে এই নদী সদর উপজেলার বানিয়ারচালা, ভবানীপুর হয়ে মির্জাপুরে গিয়ে শালদহ নদীতে গিয়ে মিশেছে৷ শিল্পবর্জ্য, পৌর বর্জ্য ও প্লাস্টিক এই নদীর দূষণের কারণ বলে জানিয়েছে আরডিআরসি৷
হাড়িধোয়ায় দূষণ
নরসিংদী শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে এই নদী৷ কলকারখানার বর্জ্য, পৌর এলাকার ময়লা-আবর্জনা, বাজারের পরিত্যক্ত ময়লা ও নদীর পাড়ে বাস করা মানুষেরা নিয়মিত আবর্জনা ফেলায় হাড়িধোয়া নদী দূষিত হচ্ছে৷
সুতাং নদ দূষণের কারণ
হবিগঞ্জ সদর, শায়েস্তাগঞ্জ, লাখাই এবং চুনারুঘাট উপজেলার ওপর দিয়ে সুতাং নদ প্রবাহিত হয়েছে৷ শায়েস্তাগঞ্জের অলিপুরে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানার বর্জ্যের কারণে সুতাং নদের পানি দূষিত হচ্ছে৷
বিভাগওয়ারী তথ্য
গবেষণার ৫৬টি নদীর ১৯টি ঢাকা বিভাগের, যার সবগুলোই মারাত্মক দূষণের শিকার৷ এছাড়াও জরিপে খুলনার সাতটি, সিলেটের পাঁচটি, চট্টগ্রামের আটটি, রাজশাহীর দুইটি, বরিশালের ১১টি ও রংপুরের চারটি নদীর দূষণমাত্রা দেখা হয়৷ ছবিতে সাভারে ধলেশ্বরী নদীর তীরে অবস্থিত আবর্জনার স্তূপে ময়লা ফেলতে দেখা যাচ্ছে৷
দূষণের ধরন
৫৬টি নদীর মধ্যে ১৬টি গৃহবর্জ্য ও প্লাস্টিক বর্জ্যের দূষণের শিকার৷ অন্যদিকে ৩৫টি নদী প্লাস্টিক, কলকারখানার বর্জ্য এবং পৌরসভার বর্জ্য ফেলার কারণে দূষিত হয়েছে৷ রংপুরের কেবল তিনটি নদী ছাড়া দেশের সব বিভাগের নদীই শিল্পকারখানার দূষণের শিকার৷ উপরের ছবিটি গাজীপুরের মাওনায় তোলা৷