দুর্নীতির মোকাবিলায় দলকে কী বার্তা মমতার?
১৮ মার্চ ২০২৩পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের বিরুদ্ধে এখন অত্যন্ত তৎপর সিবিআই, ইডি। একগুচ্ছ দুর্নীতির মামলায় তদন্ত চলছে দলের ছোট-বড় নেতাদের বিরুদ্ধে। স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি থেকে গরু-কয়লা পাচারের মামলায় কয়েকজন নেতা ইতিমধ্যে জেলবন্দি।
নিয়োগ দুর্নীতিতে রাজ্যের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেলে। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সাবেক সভাপতি, তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যও কারাবন্দি। এই মামলায় শাসক দলের দুই যুব নেতাকে পাকড়াও করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। গরু পাচার মামলায় তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এখন দিল্লিতে ইডি হেফাজতে রয়েছেন। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েছেন দলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
পার্থ ঘনিষ্ঠ অভিনেত্রীর বাড়ি থেকে ৫০ কোটির বেশি টাকা উদ্ধার হয়েছিল। তদন্তকারীদের দাবি, মানিকের প্রভূত সম্পত্তির খোঁজ মিলেছে। একই কথা প্রযোজ্য অনুব্রতের ক্ষেত্রে। যুব নেতা কুন্তল ঘোষ এবং শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনেক অ্যাকাউন্ট ও অবৈধ লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য পেয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। তদন্তে এই তৎপরতার মধ্যে বিরোধী দলগুলির তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।
এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার কালীঘাটে সাংগঠনিক বৈঠক ডেকেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দল কোন পথে এগোবে, এ নিয়ে বার্তা দিয়েছেন তিনি। অন্য বিষয়ের সঙ্গে তার মধ্যে ছিল দুর্নীতিও। সূত্রের খবর, তৃণমূল নেত্রী বলেছেন, "চোর বললে ভয় পাবেন না। বুক চিতিয়ে তৃণমূল করুন।"
বামফ্রন্টের আমলেও নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠত। সূত্রের খবর, মমতা সেই সময়ের নিয়োগে গরমিল সংক্রান্ত তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে। মুখ্যমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, "যত দ্রুত সম্ভব তালিকা প্রকাশ করুন। সেই তালিকায় যেন ব্রাত্য বসুর নামও থাকে, তিনি বাম আমলে চাকরি পেয়েছিলেন!”
এই নির্দেশ সম্পর্কে রাজনৈতিক বিশ্লেষক, অধ্যাপক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতিটা সবসময়ই অফেন্স ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স। আগ্রাসনের মাধ্যমে বিরোধীদের জব্দ করা। দল যে ক্ষেত্রে বিপদে পড়ে, তিনি সেটাকেই হাতিয়ার করেন। তৃণমূল নেত্রী ১৯৯০ থেকে ২০১১ পর্যন্ত বাম আমলে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতিকে তুলে আনবেন। অর্থাৎ একটি দুর্নীতিকে ঢাকবেন আর একটি দুর্নীতি দিয়ে।‘'
তৃণমূলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি ইতিমধ্যে কুন্তল ও শান্তনুকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে। পার্থকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। কিন্তু মানিক ও অনুব্রতের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এই বিলম্বের ব্যাখ্যায় তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘'দল কোনো দুর্নীতিই মেনে নেবে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়তো বিলম্ব হয়েছে বা হচ্ছে। বিষয়টি দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বিবেচনায় রয়েছে। তারা যথাসময়ে সিদ্ধান্ত নেবে।''
তৃণমূল নেত্রী অতীতেও দলের নেতাদের দুর্নীতি নিয়ে সতর্ক করেছিলেন। সংযমী, সাধারণ জীবনযাপনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরও শাসক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিজেপি নেতা বিমলশঙ্কর নন্দ ডয়চে ভেলেকে বলেন, "যে কোনো ভাবে দলটাকে টিকিয়ে রাখতে চান তৃণমূল নেত্রী। তাই দুর্নীতির তদন্তের সামনে পড়ে কর্মীদের সাহস জোগানোর চেষ্টা করেছেন।"
সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি কেন্দ্র তৃণমূলের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে বাম-কংগ্রেস। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই আসনে বিরোধীদের বিপুল জয়ের পর প্রশ্ন উঠেছে, দুর্নীতির জেরেই কি জনতার মন পরিবর্তন হয়েছে? বিরোধীরা কয়েক মাস ধরে একটানা ‘চোর ধরো জেল ভরো' প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
এর মোকাবিলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অফেন্স'-কে কটাক্ষ করছে বিরোধীরা। কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, "উনি বলতে পারতেন, দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তা না করে মুখ্যমন্ত্রী তাদের উৎসাহিত করেছেন। মানুষ এই চুরি বরদাস্ত করবে না সেটা দেখিয়ে দিয়েছে সাগরদিঘি।"