দুর্নীতির অভিযোগের জবাব দিলেন মমতা
১ ডিসেম্বর ২০১৭কলকাতার রাজারহাটে নবনির্মীত প্রবেশদ্বারেরর মাথা থেকে ‘বিশ্ববাংলা'-র প্রতীক গোলকটি ক্রেনের বাঁধন ছিঁড়ে পড়ে যাওয়াটা নেহাতই প্রতীকী হয়ে উঠল৷ রাজ্যের আবাসন পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগম, বা হিডকোর তদারকিতে তৈরি হওয়া ওই অতিকায় ফটককে প্রথমে ‘গেটওয়ে অফ ক্যালকাটা' নামে অভিহিত করা হচ্ছিল৷ কিন্তু পরে জানা যায়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি চাইছেন, শহরের পূর্বপ্রান্তে ওই প্রবেশদ্বারের নামকরণ হোক তাঁর সবথেকে প্রিয় প্রকল্প বিশ্ব বাংলার নামে৷ যে কারণে বিশ্ব বাংলার প্রতীক, এক ভূগোলকের মাঝে লেখা ‘ব' অক্ষর সম্বলিত একটি অতিকায় গোলক টেনে তোলাও হচ্ছিল প্রায় ৫০ মিটার উচ্চতায়৷ ৪০ মিটার উচ্চতায় পৌঁছনোর পর হঠাৎই ক্রেনের ধাতব শেকল ছিঁড়ে গোলকটি মাটিতে খসে পড়ে৷
তৃণমূল কংগ্রেস থেকে সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া মুকুল রায় প্রায় এরকমই একটি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছেন, যখন তিনি অভিযোগ করেছেন— ওই বিশ্ববাংলা আদতে মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জির সম্পত্তি৷ এতদিন যেভাবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার সর্বত্র বিশ্ব বাংলাকে তুলে ধরেছে, তাতে সাধারণ মানুষের সামান্যতম সন্দেহও ছিল না যে, এটি কোনও সরকারি প্রকল্প নয়৷ রাজ্যে সরকারি উদ্যোগে আন্তর্জাতিক শিল্পপতি সমাবেশ হয়েছে, তাতে দেখা গেছে বিশ্ব বাংলার প্রতীক, অনূর্ধ ১৭ ফুটবল বিশ্বকাপের খেলা থেকে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব— সব জায়গাতে, প্রচারে এবং সরকারি উদ্যমের মুখ হিসেবে বিশ্ব বাংলাকেই গুরুত্ব দিয়েছে মমতা ব্যানার্জির সরকার৷ কলকাতা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বিশ্ব বাংলার নিজস্ব যে বিপণি, যেখানে বাংলার হস্তশিল্প বিক্রি হয়, সেসবও সরকারি দোকান হিসেবেই এতদিন জেনেছে লোকে৷ এবং সবাই জানে যে, বিশ্ব বাংলার ওই প্রতীক স্বয়ং মমতা ব্যানার্জিরই নকশা করা৷
সেই প্রেক্ষিতে বিশ্ব বাংলার বেসরকারি মালিকানার কথা ফাঁস করে দিয়ে কার্যত হাটে হাঁড়ি ভেঙেছেন মুকুল রায়৷ তিনি যখন এই অভিযোগ তোলেন, মুখ্যমন্ত্রী তখন লন্ডনে৷ রাজ্য সরকারের তরফে মুখ্য সচিব (স্বরাষ্ট্র) অত্রি ভট্টাচার্য এবং রাজ্যের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ এবং বয়ন দপ্তরের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব রাজীব সিনহা তখন এগিয়ে এসে ঘোষণা করেন, বিশ্ব বাংলা সংস্থা ও তার প্রতীক আসলে সরকারি মালিকানাধীন৷ এটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দপ্তরের অধীনস্থ সংস্থা৷
কিন্তু শিল্প সংস্থার নথিভুক্তি হয় যে দপ্তরে, সেখান থেকে জানা যায় যে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিশ্ব বাংলার নথিভুক্তি হয়েছে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে৷ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তিনজন সচিবের অংশীদারি আছে সেই সংস্থায় এবং পরিচালন গোষ্ঠীতে আছেন রাজ্যের দুই বড় শিল্পপতি৷ সেই সূত্রে আরও জানা যায় যে, অভিষেক ব্যানার্জি বিশ্ব বাংলার ‘ট্রেড মার্ক'টি নিজের নামে করার জন্য একটি আবেদনও জমা দিয়ে রেখেছেন৷ এর পরেই অবশ্য অভিষেকের তরফ থেকে আবেদনটি প্রত্যাহার করা হয় এবং মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে একটি মানহানির মামলাও দায়ের করেন অভিষেক৷
কিন্তু সদ্য আবার মুখ খুলেছেন মুকুল রায়৷ বিশ্ব বাংলার প্রতীক নিয়ে মমতা ব্যানার্জি, অভিষেক ব্যানার্জি এবং রাজ্য সরকারের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের তালিকা পেশ করেছেন তিনি৷ এবং রেখেছেন প্রাসঙ্গিক কিছু প্রশ্ন৷
গত বুধবার রাজ্য বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি জানিয়েছেন, বিশ্ব বাংলার প্রতীকটি তাঁর সৃষ্টি এবং সেটি তিনি বিশ্ব বাংলা সংস্থাকে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন৷
পরদিনই মুকুলের প্রশ্ন, তা হলে নিশ্চয়ই ব্যক্তি মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সরকারের কোনও লিখিত চুক্তি হয়েছে? কোথায় সেই চুক্তি? তাতে স্বাক্ষরকারী কারা? এবং মুকুলের বক্তব্য, অভিষেক ব্যানার্জি ক'দিন আগেই আদালতে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছেন যে, তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সম্মতি নিয়েই বিশ্ব বাংলা ট্রেড মার্কের মালিকানা পেতে আবেদন জানিয়েছিলেন৷ মুকুলের প্রশ্ন, সেটা কী করে সম্ভব! কী করে একই বাণিজ্যিক মার্কার মালিক সরকার এবং কোনও ব্যক্তিবিশেষ হতে পারে?
গুজরাট বিধানসভার নির্বাচন হয়ে গেলেই তিনি আবার বোমা ফাটাবেন, শাসিয়ে রেখেছেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়৷