1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দুই হারের পর স্বস্তির জয় পাকিস্তানের

শিহাব উদ্দিন
১১ জুন ২০২৪

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ক্যানাডার বিপক্ষে ৭ উইকেটের স্বস্তির জয় পেল পাকিস্তান৷ মঙ্গলবারের ম্যাচে আগে ব্যাট করে ২০ ওভারে কানাডা ৭ উইকেটে ১০৬ রান তোলে৷ জবাবে পাকিস্তান ১৭.৩ ওভারে ৩ উইকেটে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছায়৷

https://p.dw.com/p/4gvk9
পাকিস্তানি ক্রিকেটার রউফ ও নাসিম
মঙ্গলবারের ম্যাচে আগে ব্যাট করে ২০ ওভারে ক্যানাডা ৭ উইকেটে ১০৬ রান তোলে৷ জবাবে পাকিস্তান ১৭.৩ ওভারে ৩ উইকেটে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছায়ছবি: Andrew Kelly/REUTERS

পাকিস্তানকে এই ম্যাচ জিততেই হতো৷ নয়তো তাদের বিশ্বকাপ যাত্রা শেষ ছিল৷ যুক্তরাষ্ট্রের পর ভারতের বিপক্ষেও হেরে যাওয়ায় খাদের কিনারায় ছিল পাকিস্তান৷ দ্বিতীয় রাউন্ডের সমীকরণ হয়ে ওঠে খুব কঠিন৷ সুপার এইট নিশ্চিত করতে হলে পাকিস্তানকে ক্যানাডা ও আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে জিততেই হবে৷ শুধুই তা-ই নয়, ভারত ও আয়ারল্যান্ডের কাছে হারতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে৷

সেই পথে প্রথম কাজটি সেরে রাখল পাকিস্তান৷ মোহাম্মদ রিজওয়ানের দায়িত্বশীল ইনিংসে কানাডার বিপক্ষে জয় দিয়ে পূর্ণ পয়েন্ট নিশ্চিত করেছে তারা৷ রিজওয়ান ক্যারিয়ারের ২৯তম ফিফটি করে অপরাজিত ছিলেন ৫৩ বলে ৫৩ রানে৷ 

এই জয়ে ‘এ' গ্রুপে ক্যানাডাকে টপকে চার নম্বর পজিশন থেকে তিনে উঠল পাকিস্তান৷ ৩ ম্যাচে ২ জয় ও ২ হারে পাকিস্তানের এখন ২ পয়েন্ট৷ রান রেট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ০.১৯৷ ৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের রান রেট ০.৬২৷

ম্যাচে ইনিংসের প্রথম ওভারে দারুন কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিল ক্যানাডা ওপেনার অ্যারন জনসন৷ শাহিন শাহ আফ্রিদির প্রথম দুই বলে দু'টি চারে শুরু করেন তিনি৷ মুহূর্তের জন্য সবার মনে হতেই পারে এই পিচ ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো৷ অবশ্য খুব বেশিক্ষণ এই ধারণা টেকেনি৷ তৃতীয় ওভারের বোলিংয়ে এসে পাকিস্তানকে উইকেট এনে দেন মোহাম্মদ আমির৷ 

প্রথম বলে দারুণ স্কয়ার ড্রাইভে চারে শুরু হয় নাভনিত ঢালিওয়ালের৷ পরের কয়েকটি বলে আমিরের রিভার্স সুইং বেশ ভুগিয়েছে তাকে৷ স্বচ্ছন্দে খেলতে পারছিলেন না পরের বলগুলো৷ ঢালিওয়ালকে বাউন্স ও রিভার্স সুইংয়ে দ্বিধায় ফেলে সফল হন আমির৷ ওভারের শেষ বলটি ঘণ্টায় ১৪১ কিলোমিটার গতিতে রিভার্স করান৷ গুড লেন্থ থেকে ভেতরে ঢোকা বলটি চোখেই দেখতে পাননি ৪ রান করে বোল্ড হওয়া ঢালিওয়াল৷ প্রথম উইকেট পায় পাকিস্তান৷ 

এ উইকেটের পর শুরুর আগ্রাসন আর ছিল না ক্যানাডার ব্যাটারদের৷ বাউন্স, গতি আর সুইংয়ে পাকিস্তান পেসাররা দাপট শুরু করেন৷ প্রথম ওভারে ১১ রান দেয়া শাহিন ষষ্ঠ ওভারে আক্রমণে ফিরেই সফল৷ তার বাউন্স বলটিতে সামলে উঠতে পারেননি ২ রান করা পারগাত সিং৷ তার গ্লাভসে লেগে স্লিপে ক্যাচ যায়৷

পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট হারিয়ে ৩০ রান আসে ক্যানাডার। পরের ওভারে রান আউটে মাত্র ৬ বলে ১ রান করা নিকোলাস কর্টনও ফেরেন। টপঅর্ডার দ্রুত বিদায় নিলেও দ্রুত রান নেয়ার চেষ্টা থামেনি ক্যানাডার। অপরপ্রান্তে দারুণ খেলতে থাকা ওপেনার অ্যারন জনসনের ব্যাটে বড় শট পাচ্ছিল তারা। 

কিন্তু অপরপ্রান্ত থেকে জনসনকে সমর্থন দেওয়ার মতো কেউ ছিলেন না। ১০ম ওভারে দুই ব্যাটারকে ফিরতে হয় তিন বলের ব্যবধানে। শ্রেয়াস মুভা ২ ও রাভিন্দরপল সিং ০ রানে ফেলেন হারিস রউফের শিকার হয়ে। ওভারে জোড়া উইকেট নিয়ে দারুণ মাইলফলক অর্জন করেন এই পেসার। টি-টোয়েন্টিতে ১০০ উইকেট নেয়া ১৪তম বোলার হয়েছেন রউফ। 

১০০ উইকেটের দিনে আরও একটি অর্জন আছে এই পেসারের। এই ফরম্যাটে তৃতীয় দ্রুততম বোলার হিসেবে উইকেটের সেঞ্চুরি করেছেন। শততম উইকেট নিতে রউফের লেগেছে ৬৯ ম্যাচ। তার আগে শ্রীলঙ্কান লেগ স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার লেগেছে ৬৩ ম্যাচ। সবার শীর্ষে আছেন আফগানিস্তান স্পিনার রশিদ খান। মাত্র ৫৩ ম্যাচে ১০০ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। 

রউফের জোড়া উইকেটে ১০ ওভার শেষে ৫৫ রানেই ৫ উইকেটে পরিণত হয় ক্যানাডা। তখন ভরসা ছিল শুধু জনসনের ওপর। অপরপ্রান্তে উইকেট পড়লেও জ্যামাইকান বংশোদ্ভুত এই ওপেনারের ব্যাট থামছিল না। ৪টি করে চার ও ছয়ে ৪৪ বলে পৌছে যান ৫২ রানে। টি-টোয়েন্টিতে তার তৃতীয় ফিফটি। অথচ ১৪তম ওভারে নাসিম শাহয়ের গুড লেন্থ থেকে নিচু হয়ে আসা বলে সরাসরি বোল্ড হন। 

৭৩ রানে জনসনের ফেরার পর দ্রুত রান তুলতে পারেনি ক্যানাডা। পরের ৬.৩ ওভারে ১ উইকেট হারালেও মাত্র ৩৩ রান যোগ হয় তাদের বোর্ডে। অধিনায়ক সাদ বিন জাফর ২১ বলে ১০ ও কালিম সানা ১৪ বলে ১৩ রান করলে শেষদিকে ওই রান পায় কানাডা। পাকিস্তানের হয়ে ২ উইকেট করে নেন আমির ও রউফ। একটি করে উইকেট নেন শাহিন ও নাসিম। 

ছোট লক্ষ্য হলেও পাকিস্তানের জন্য ভয়ের কারণ ছিল। আগের ম্যাচে ভারতের দেয়া ১২০ রান তাড়া করে জিততে পারেনি দলটি। ক্যানাডার বিপক্ষে তাই শুরুটা বিশেষ করতেই হতো পাকিস্তানকে। ওপেনিংয়ে পরিবর্তন এনে সেই চেষ্টা করেছিল পাকিস্তান। বিগ হিটার সাইয়াম আইয়ুব যোগ দেন মোহাম্মদ রিজওয়ানের সঙ্গে। এতে বাবর আজম-রিজওয়ান ওপেনিং জুটির প্রথা ভাঙ্গে পাকিস্তান। 

কিন্তু পরিকল্পনা সফল হয়নি। সাইয়াম শুরুতেই বড় রান এনে দিতে ব্যর্থ হন দলকে। উল্টো ১২ বল খেলে মাত্র ৬ রানেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ড্রেসিংরুমের পথ ধরতে হয় তাকে। ২০ রানেই ১ উইকেট হারায় পাকিস্তান। শুরুর জুটি ভাঙ্গার পর অবশ্য লক্ষ্য পূরন হয় পাকিস্তানের। এবার দাঁড়িয়ে যায় বাবর-রিজওয়ান জুটি।

দলকে নিরাপদে রেখে জুটি ভাঙ্গে দুজনের। ৩৩ বলে ৩৩ রান করা বাবরকে ফেরান হেইলিঙ্গার। এই পেসারের দ্বিতীয় উইকেটে ভাঙ্গে ৬৩ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি। 

আর কোন বিপদ ছাড়াই জয়ের বন্দরে পা রাখতে পারত পাকিস্তান। কিন্তু ৩ রান বাকি থাকতে ফখর জামান ক্রস ব্যাটে খেলতে গিয়ে আউট হন ৪ রানে। অবশ্য রিজওয়ান ও উসমান খান মিলে ৭ উইকেটের জয় নিশ্চিত করেন। ১৫ বল হাতে রেখে ম্যাচ জেতায় পাকিস্তানের লাভ হয়েছে অনেক। মহাগুরুত্বপূর্ণ নেট রান রেট বাড়িয়ে নিতে পেরেছে তারা। 

এই জয়ে পাকিস্তান শিবিরে নিশ্চিত ভাবেই স্বস্তি ফিরেছে। ভারত ম্যাচের পর দলকে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন কোচ গ্যারি কারস্টেন। শিষ্যদের প্রতি ক্ষোভ ঝেড়েই বলেছেন, "আধুনিক টি-টোয়েন্টিতে মানিয়ে নাও, নয়তো প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়া৷ কোচের ধমকে কাজ হয়েছে। কানাডার বিপক্ষে খুব বেশি ভুল করেননি পাকিস্তান ব্যাটাররা। 

পরিস্থিতি ও কন্ডিশন বুঝেই ব্যাট করেছেন অভিজ্ঞ দুই ব্যাটার রিজওয়ান ও বাবর। ক্যানাডার বিপক্ষে পাকিস্তানের ইনিংসে বাউন্ডারির মার কম ছিল। তবে নিউ ইয়র্কের পিচে যেভাবে ব্যাট করতে হয় তা বুঝেই রান তুলেছেন রিজওয়ান-বাবর। এর আগে বোলাররা কম রানে ক্যানাডাকে আটকে দিয়ে জয়ের পথ সহজ করেন। সেই পথে হেঁটে স্বস্তির জয় নিশ্চিত করল পাকিস্তান।  

শিহাব উদ্দিন সাংবাদিক