দায়িত্ব ছাড়া অধিকার হয় না
১২ জুলাই ২০১৫যে পুরুষ কোনো মহিলার সঙ্গে সাময়িক যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন, কিন্তু তার ফলশ্রুতির কথা চিন্তা করেননি; যিনি সন্তানের জন্মের কথা হয়ত জানতেও পারেননি; কিংবা জানতে পারলেও নির্লিপ্ত থেকেছেন, পিতাসুলভ কোনো দায়িত্ব নেননি, নিতে চাননি অথবা পারেননি৷ এমন একটি ক্ষেত্রে পিতৃত্ব কথাটি জৈবিক, জীববিজ্ঞানগত পিতৃত্বেই সীমাবদ্ধ থাকে৷
এমনিতেই পিতৃত্ব কথাটি কর্তৃত্ব কথাটির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়৷ কর্তৃত্ব মানে শাসন-শৃঙ্খলা, যেমন মাতৃত্ব মানে মায়া-মমতা৷ অন্তত সাধারণ মানুষ তা-ই বোঝে৷ কে জানে কোন প্রস্তরযুগে পিতা শিকার ধরে আনতেন, মা সেই মাংস পুড়িয়ে সন্তানকে খাওয়াতেন৷ পুরুষ করবে রক্ষণাবেক্ষণ, নারী করবে সন্তানধারণ, ইত্যাদি কত লতায় পাতায় গজিয়ে ওঠা কত যুগের, কত জীবনের সংস্কার জড়িয়ে আছে নারীপুরুষের এই চিরন্তন দ্বন্দ্ব ও মিলনে৷
পুরুষকার সম্বলিত পুরুষের চিন্তা: দেশ-রাজ্য তো জয় করলাম; কিন্তু তা বর্তাবে যে সন্তানের উপর, সে আমার নিজের তো? এই বুনিয়াদি অবিশ্বাস থেকেই লক্ষ লক্ষ নিয়মকানুন, রীতিনীতি, নীতিমালা, আইনকানুনের জন্ম৷ যেমন বাবার জ্ঞাতসারে এবং তাঁর অনুমতি নিয়ে তবেই সন্তান প্রতিপালনের ভার মায়ের হাতে তুলে দেওয়া যেতে পারে৷ থুড়ি, প্রতিপালন না বলে অভিভাবকত্ব বলা উচিত ছিল৷ তফাৎটা বুঝলেন না? মা প্রতিপালন করবে না তো কে প্রতিপালন করবে? ওটা তো তাঁর কর্তব্য, মায়ের কর্তব্য, মা-রা চিরকাল যেটা কোনোরকম পাল্টা অধিকার ছাড়াই করে এসেছেন৷
আর অভিভাবকত্ব ব্যাপারটা হলো পুরোপুরি পুরুষালি৷ ‘ওয়ার্ড' অর্থাৎ নাবালক বা প্রতিপাল্যদের কারোকে কিছু করতে গেলে আগে এসে অভিভাবকের অনুমতি নিতে হবে৷ কেন যাবি? কোথায় যাবি? কখন ফিরবি? আজ কেন? কাল নয় কেন? এ সব প্রশ্নের জবাব দিতে হবে৷ প্রতিপাল্য আবার যদি মেয়ে হয়, তাহলে তো কথাই নেই! সেক্ষেত্রে ডাক পড়বে ‘মা' নামধারী সেই প্রতিপালিকার৷ মাকে তখন শুনতে হবে: ‘এই যে তোমার মেয়ে', ‘ঐ যে তোমার সুপুত্তুর'৷ অর্থাৎ যত দোষ মায়ের, যত শাসন পিতৃদেবের৷
হঠাৎ সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারক এসে যদি বাপ-পিতেমোর আমলের ওরকম একটা... তা বাপ-পিতেমো না বলে কি নানি-দাদির আমলের কথা বলতে হবে? তা-ই সই: নানি-দাদির আমলের একটা প্রথা বদলে দিতে চান, তাহলে...
এই মামলাটা দিয়েই শুরু করা চলে, কি বলেন?