সৌলের জনসংখ্যা কেন কমছে?
২০ জুন ২০২২১৯৯২ সালে সৌলের জনসংখ্যা ছিল এক কোটি লাখ ৯৭ হাজার৷ গত মে মাসে তা কমে হয়েছে ৯০ লাখ ৪৯ হাজার৷ দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানীর জনসংখ্যা যে কমছে তা প্রথম নজরে পড়েছিল ২০১৬ সালে৷ সেবারই প্রথম সৌলের জনসংখ্যা এক কোটির নীচে নেমে আসে৷দক্ষিণ কোরিয়ার স্বরাষ্ট্র এবং নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় মনে করে, এই ধারা চলতে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে সৌলের জনসংখ্যা ৭২ লাখে নেমে যাবে৷
কিন্তু কেন সৌলে মানুষ কমছে, কেন রাজধানী ছেড়ে যাচ্ছে মানুষ? রাজধানীতে এমন কী নেই যা উপকণ্ঠে বা অন্য কোনো শহরে গেলে পাওয়া যায়?
কিম হিউন-জুং রাজধানী ছেড়ে গাংওন প্রদেশের বাসিন্দা হয়েছেন ২০১৫ সালে৷ আট বছর পরে সুন্দর ছিমছাম এক শহরে সপরিবারে চলে যাওয়ার কারণে তিনি আনন্দিত৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলার সময় সেই আনন্দ প্রকাশের পাশাপাশি সৌল ছাড়ার কারণও জানিয়েছেন তিনি, ‘‘বেশির ভাগ মানুষই (সৌল) ছেড়ে যায় মূলত বাড়ির অতিরিক্ত দামের কারণে৷ ওখানে বাড়ির দাম এবং ভাড়া খুব বেশি৷'' এই কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক স্বামীর সঙ্গে কথা বলে সপরিবারে গাংওনবাসী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন খণ্ডকালীন স্কুল শিক্ষক কিম৷ গাংওনে অবশ্য যা চেয়েছিলেন, তার সবই পেয়েছেন৷ বাড়ি পেয়েছেন তুলনায় অনেক কম দামে৷ বাচ্চাদের জন্য খুব ভালো স্কুল পেয়েছেন৷ সেখানে পড়াতে হলে কোনো বাড়তি টাকা বা অনুদান দিতে হয় না৷ গানবাজনা বা নাচ, ছবি আঁকা ইত্যাদি শেখাতেও লাগে না প্রচুর টাকা৷ এসব অবশ্য কিম আর তার স্বামীর তৃপ্তির জায়গা৷ তবে সন্তানদের কাছেও গাংওন খুব প্রিয়৷ কারণ এখানে সৌলের মতো ঘরে বসে দিন পার করতে হয় না৷ বাইরে খোলা মাঠ আছে, সুন্দর পার্ক আছে৷ সুতরাং পড়ালেখার বাইরের সময়টাও আনন্দেই কাটে তাদের৷
সৌলে বাড়ির দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে৷ ২০১৭ সালে একটা বাড়ির গড় দাম যেখানে ছিল ৩৪ কোটি ১০ লাখ কোরিয়ান ওন (দুই লাখ ৫২ হাজার ডলার ), ২০২২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৬২ কোটি ৬০ লাখ কোরিয়ান ওন৷ তাছাড়া বাড়ি ভাড়াও খুব বেশি৷
সাম্প্রতিক সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার৷
ট্রয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অনুষদের অধ্যাপক ড্যান পিঙ্কস্টন মনে করেন, গত কয়েক বছরে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব ভালো হবার কারণেও অনেকে সৌল ছাড়ছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থার অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিনিয়োগ প্রচুর বিনিয়োগ বাড়িয়েছে৷এর ফলে সাবওয়ের লাইন অনেক বেড়েছে, হাই-স্পিড ট্রেনের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে৷ এ কারণে মানুষ খুব সহজেই অনেক দূর থেকেও রাজধানীতে যাওয়া-আসা করতে পারে৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘এখন আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে যেসব শহর গড়ে তোলা হয়েছে, অনেকে সেসব জায়গায় থাকতে পছন্দ করছেন৷ সেসব শহরে আধুনিক স্কুল, হাসপাতাল ইত্যাদি থাকায় জীবন যাপনের মানও বেশ উন্নত৷অনেকেই তাই এখন সেসব জায়গা থেকে এসেই সৌলে কাজ করেন৷''
জুলিয়ান রা্য়াল/ এসিবি