দক্ষিণ অ্যামেরিকায় বিভিন্ন দেশে শীর্ষে অবস্থান করছে নারীরা
৮ জানুয়ারি ২০১১ব্রাজিলের মত পুরুষশাসিত সমাজে প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডিলমা রুসেফ দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে৷ ১৯৯০ সাল থেকে দক্ষিণ অ্যামেরিকায় তিনি হলেন ৬ষ্ঠ নারী যিনি নিজ দেশে ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছালেন৷ এই মুহূর্তে আর্জেন্টিনা এবং কস্টারিকায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে রয়েছেন দু'জন মহিলা৷ লরা চিনচিলা এবং ক্রিস্টিনা কির্শনার৷ চিলি, পানামা এবং নিকারাগুয়ায় কিছুদিন আগেও প্রেসিডেন্টের পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন নারী রাজনীতিকরা৷
ফিরে আসছি ডিলমা রুসেফের প্রসঙ্গে৷ নির্বাচনের পর তিনি ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন৷ অসংখ্য পুরুষের মধ্যে তিনিই ছিলেন একমাত্র নারী৷ সবার দৃষ্টি ছিল ডিলমা রুসেফের ওপর৷ গোটা বিশ্বের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছিল ব্রাজিলের প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট৷ তবে ব্রাজিলের জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট লুলা দ্যা সিলভাকে ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি তিনি৷ রুসেফ জানান, ‘‘তিনি ছিলেন এই দেশের জন্য অত্যন্ত যোগ্য একজন নেতা৷ তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছেন নিজের দেশের মানুষের জন্য৷ আমি সেই দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পেয়েছি বলে আনন্দিত৷ তবে একই সঙ্গে আমাদের প্রিয় প্রেসিডেন্টকে বিদায় জানাতে আমাদের কষ্টও হচ্ছে৷''
সেই ভাষণে ব্রাজিলের নারীদের এগিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন ডিলমা রুসেফ৷ এরপরই তিনি তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে অন্তত আটজন মহিলার নাম করেন৷ ব্রাজিলে এই প্রথম মন্ত্রিসভায় এতজন নারীকে একসঙ্গে দেখা যাচ্ছে৷
দক্ষিণ অ্যামেরিকা ব্যবসা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে গেছে৷ গত ১৫ বছরে গোটা দক্ষিণ অ্যামেরিকার অগ্রগতি বিশ্বের নজর কেড়েছে৷ সেখানে প্রায় ৫৩ শতাংশ মহিলা কর্মজীবী৷ অথচ ১৯৮০ সালে তা ছিল মাত্র ৩৫ শতাংশ৷ আর রাজনীতিতে অনেক অনেক বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসতে হয় যে কোন মহিলাকে৷ কারণ রাজনৈতিক অঙ্গন মূলত পুরুষদের দখলে৷ ডিলমা রুসেফও ছিলেন অপরিচিত একজন৷ কেউ তাঁর নাম পর্যন্ত শোনেনি৷ প্রেসিডেন্ট লুলা দ্যা সিলভা তাঁকে চিফ অফ স্টাফ করার পর তিনি হয়ে ওঠেন পরিচিত এক মুখ৷ যখন প্রেসিডেন্ট লুলা দ্যা সিলভা তাঁকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেন, রাতারাতি গোটা ব্রাজিলে ডিলমা রুসেফের নাম প্রতিনিয়ত উচ্চারিত হতে থাকে৷
আর্জেন্টিনার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিনা কির্শনার৷ এর আগে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট ছিলেন তাঁর স্বামী নেস্টর কির্শনার৷ তিনি প্রেসিডেন্ট ডিলমা রুসেফকে ব্রাজিলের প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বাগত জানান৷ গত বছর জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বই মেলায় এসেছিলেন প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিনা কির্শনার৷ গতবারের বইমেলার মূল থিম ছিল আর্জেন্টিনা৷ ২০১০ সালে আর্জেন্টিনা পালন করেছে স্বাধীনতার দুশোতম বার্ষিকী৷ বইমেলায় আগত অতিথিদের তিনি বলেন, ‘‘আপনারা এখানে দেখছেন অত্যন্ত সপ্রতিভ এবং প্রাণচঞ্চল এক আর্জেন্টিনাকে৷ যে আর্জেন্টিনা এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত, পাল্টে যাচ্ছে প্রতিদিন৷ এমন একটি আর্জেন্টিনা যা কখনো থেমে থাকেনি, সবচেয়ে দুর্যোগ আর কঠিন সময়েও দেশটি এগিয়ে গেছে৷''
এবার চিলি৷ গত বছরের শুরু পর্যন্ত মিশেল বাচেলেট চিলির সফল প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন৷ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি ছিলেন স্বাস্থ্য এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী৷ গত বছর থেকে জাতিসংঘের মহিলা বিষয়ক দপ্তর ইউএন ওম্যান-এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মিশেল বাচেলেট৷ জাতিসংঘের অন্যতম প্রধান মিলেনিয়াম উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা হল মায়েদের মৃত্যুহার কমানো৷ এই লক্ষ্য পূরণে প্রতিটি দেশে সুষ্ঠু স্বাস্থ্যনীতি প্রবর্তনের ওপর জোর দেন তিনি৷
দক্ষিণ অ্যামেরিকায় নারীদের শীর্ষে অবস্থান অনেক এগিয়ে নিয়ে গেছে মহাদেশটিকে৷ দেশগুলোতে গণতন্ত্র দানা বাঁধছে, এই বিশ্বাস জাগছে বিশ্বেবাসীর মধ্যে৷ অথচ অ্যামেরিকা, জাপান এবং ফ্রান্সের মত বহুল উন্নত দেশে দেশের শীর্ষতম পদে পৌঁছুতে পারেন নি মহিলারা৷ সেখানে দক্ষিণ অ্যামেরিকার জন্য গর্ব করার মত অনেক কিছু এনে দিয়েছেন ব্রাজিলের ডিলমা রুসেফ, আর্জেন্টিনার ক্রিস্টিনা কির্শনার, কস্টা রিকার লরা চিনচিলা, সাবেক মহিলা প্রেসিডেন্টদের মধ্যে রয়েছে চিলির মিশেল বাচেলেট, পানামার মিরেয়া মসকোসো এবং নিকারাগুয়ার ভিয়োলেটা চামোরো'র মত বিশিষ্ট নারীরা৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক