প্রসঙ্গ: তাসকিনের ওপর নিষেধাজ্ঞা
২৩ মার্চ ২০১৬বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কোচ ও জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অলরাউন্ডার ও পেসার দীপু রায় চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই সিদ্ধান্ত মানতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে৷ কারণ তাসকিনের বিরুদ্ধে অবৈধ বোলিং-এর যে অভিযোগ রয়েছে, তার কোনো ভিত্তি নেই৷ তাই তাসকিনকে নিষিদ্ধের বিষয়টি বিকর্কিত হয়েই থাকবে৷''
অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের অভিযোগ ওঠার পর ১২ মার্চ সানি ও ১৫ মার্চ তাসকিনকে চেন্নাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেকানিক্যাল সেন্টারে বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষা দিতে হয়৷ এরপর ১৯ মার্চ তাঁদের দু'জনকেই অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করে আইসিসি৷
সানিকে নিয়ে কোনো কথা না বললেও তাসকিনের ফিরে আসার ব্যাপারে আশাবাদী ছিল বাংলাদেশ৷ এ কারণেই অতি দ্রুত তাসকিনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য বিসিবি আবেদন করেছিল আইসিসির কাছে৷ আইসিসি দ্রুতই সিদ্ধান্ত দিয়েছে৷ তবে সেই সিদ্ধান্ত তার আগের সিদ্ধান্ত বহাল রাখার৷ আর তা বাংলাদেশের হতাশা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে৷
আগের সিদ্ধান্ত বহাল রেখে আইসিসির জুডিশিয়াল কমিশন বলেছে, ‘ফিরে আসার জন্য যথাযথ শুদ্ধি প্রক্রিয়া শেষে তাসকিন যে কোনো সময় তাঁর বোলিং অ্যাকশন পরীক্ষা করানোর জন্য আইসিসির কাছে আবেদন করতে পারবেন৷ যেভাবে তাঁর প্রথম পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল, ঠিক সেভাবেই তাঁকে আবারও পরীক্ষা দিতে হবে৷'
তারা আরো বলেন, ‘বিশেষ ডেলিভারি (পরীক্ষা) দেওয়ার সময় তাসকিনের কনুই সহনীয় পর্যায় (১৫ ডিগ্রি) অতিক্রম করে বলে তাঁকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ অর্থাৎ তাসকিনকে তাঁর কনুই অবশ্যই ১৫ ডিগ্রির মধ্যে রাখতে হবে৷'
এর প্রতিক্রিয়ায় দিপু রায় চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তাসকিনকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে আমরা আপত্তি করেছি কয়েকটি কারণে৷ তাঁর ‘রেগুলার' বা স্টক বোলিং-এ কোনো সমস্যা নেই৷ অভিযোগ করার পর তাঁর বিশেষ (পরীক্ষা) বোলিং-এর ভেরিয়েশনে ন'টির মধ্যে তিনটিতে সমস্যা পাওয়া গেছে বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে৷ তাছাড়া যে ম্যাচ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, সেই ম্যাচে তো অবৈধ বোলিং-এর ঘটনা ঘটেই নাই৷ তাহলে কেন তাঁকে নিষিদ্ধ করা হলো? আর এটা এই সময়ে কেন করা হলো? তাই তাসকিনকে নিষিদ্ধের বিষয়টি আমাদের কাছে বিতর্কিতই থাকবে৷ তবুও বলবো, তারা হয়ত কিছু একটা পেয়েছেন৷ যার জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা৷''
তিনি বলেন, ‘‘এখন আমাদের একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে৷ তাসকিন ও সানি দু'জনেরই পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ আছে৷ আমরা এখন তাঁদের বোলিং অ্যাকশনের যে ত্রুটির কথা বলা হচ্ছে, তা সংশোধনের চেষ্টা করব৷ তাঁদের নিয়ে কোচরা কাজ করবেন৷ আশা করি শুধু তাসকিন নয়, সানিও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অল্প সময়ের মধ্যেই ফিরে আসবেন৷''
দীপু রায় চৌধুরীর কথায়, ‘‘এর আগে আব্দুর রাজ্জাক, সোহাগ গাজী, আল-আমিন একই ধরনের অভিযোগে নিষিদ্ধ হয়েছিলে৷ তাঁরাও পরে আবার ফিরে এসেছেন৷ বাংলাদেশের বাইরে অন্যান্য দেশের ক্রিকেট দলের সদস্যরা বোলিং অ্যাকশনের কারণে নিষিদ্ধ হয়েছেন, আবার কারেকশনের মাধ্যমে ফিরেও এসেছেন৷''
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার পর থেকে তাসকিন এবং সানিই প্রথম, যাঁরা অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের দায়ে নিষিদ্ধ হলেন৷
আগে, টি-টোয়েন্টির বাইরে, বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে ২০০০ সালে ভারতের বিপক্ষে উদ্বোধনী টেস্টের পর সর্বপ্রথম নাইমুর রহমান দুর্জয়ের বিরুদ্ধে অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের অভিযোগ ওঠে৷ অভিযোগ উঠেছিল মোহাম্মদ রফিকের বিরুদ্ধেও৷ তবে স্পিনার আব্দুর রাজ্জাকই প্রথম বাংলাদেশি বোলার, যিনি ২০০৮ সালের নভেম্বরে নিষিদ্ধ হন৷ তবে ২০০৯ সালে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে বোলিংয়ে ফেরেন তিনি৷
সোহাগ গাজী ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে বোলিং অ্যাকশনের জন্য নিষিদ্ধ হন৷ পরে অ্যাকশন পরীক্ষায় মাধ্যমে পার পান৷ সোহাগ গাজীর পরে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পেসার আল-আমিনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ ওঠে৷
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বাইরে ১৯৯৫ সালে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়া-শ্রীলঙ্কা বক্সিং ডে টেস্টে মুত্তিয়া মুরালিধরনের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে অভিযোগ আনেন ম্যাচ আম্পায়ার ড্যারেল হেয়ার৷ তবে কখনও নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হয়নি মুরালিকে৷ প্রকৃতিগতভাবেই তাঁর হাত একটু বাঁকা বলে পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়৷
বোলিং অ্যাকশনের জন্য নিষিদ্ধের খাড়ায় প্রথম পড়েন পাকিস্তানের ‘রাওয়াল পিন্ডি এক্সপ্রেস' হিসেবে খ্যাত শোয়েব আক্তার৷ ১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট খেলতে গিয়ে সন্দেহজনক বোলিং অ্যাকশনের জন্য নিষিদ্ধ হন তিনি৷ তবে পাকিস্তানের আপিলে আইসিসি ১০ দিনের মাথাতেই সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়৷ এরপর অবস্য তাঁকেও বোলিং অ্যাকশন শুধরাতে হয়৷
ক্যারিবিয়ান স্পিনার মারলন স্যামুয়েলসও ২০০৮ সালে রিপোর্টেড হন৷ পরে তাঁর কুইকার ডেলিভারি নিষিদ্ধ করে আইসিসি৷ স্যামুয়েলস মাঝে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলে যাওয়ার অনুমতি পান৷
দীপু রায় চৌধুরী বলেন, ‘‘শোয়েব আখতার অল্প দিনেই ফিরেছেন৷ তবে তা ক্রিকেট কূটনীতি দিয়ে নয়, তাঁকে আবার পরীক্ষা দিয়ে যথার্থতা প্রমাণ করতে হয়েছে৷ তাসকিনের জন্য কতদিন সময় লাগবে, তা বলা মুশকিল৷ এটা সাত দিনেও হতে পারে, আবার ১১ দিনেও হতে পারে৷ তবে আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত তাঁকে আন্তর্জাতিক ম্যাচে ফিরিয়ে আনতে৷ দুঃখ শুধু একটাই যে, তিনি এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আর খেলতে পারলেন না৷''