তরুণ প্রজন্মের বঙ্গবন্ধু পাঠ
১৫ আগস্ট ২০২৩তরুণ প্রজন্মের যাদের সঙ্গে কথা হয়েছে তারা সবাই এই বই দুইটি পড়েছেন৷ তারা জানিয়েছেন, তাদের বন্ধু ও সহপাঠীদের অনেকেই বই দুইটি কম বেশি পড়েছেন৷ এমনকি বই দুইটি নিয়ে তারা স্ট্যাডি সার্কেলও করেন৷ ওই বই দুইটি থেকে তারা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে নির্মোহভাবে জানতে পারছেন বলে জানিয়েছেন তারা৷
পারিসা মেহজান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা যখন বড় হয়ে উঠেছি তখন সংবাদপত্র, টেলিভিশন রেডিও এবং পাঠ্যপুস্তকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে জানতে পেরেছি৷ ডকুমেন্টারি , ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকেও জেনেছি৷ তবে জানার আগ্রহকে পরে বাড়িয়ে তুলেছে দুইটি বই ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী' এবং ‘কারাগারের রোজনামা৷' ওই দুইটি বই আমাকে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দিয়েছে৷ এরপর আরো জানার চেষ্টা করছি৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমি বঙ্গবন্ধুকে বুঝতে পারছি একজন গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক এবং গণমানুষের নেতা হিসেবে৷ আর এই কারণেই তার পক্ষে একটি জাতিকে স্বাধীনতা এনে দেয়া সম্ভব হয়েছে৷'' তবে তিনি মনে করেন, তার অভাব এখন সবচেয়ে বেশি অনুভব করা যাচ্ছে৷ কারণ ওই তিনটিরই অভাব এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি৷ তিনি যে স্বপ্নের সোনার বাংলার কথা বলেছেন সেখানে আমরা যেতে পারিনি৷
তার মত, ‘‘স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন৷ আমরা দেখছি সেই প্রবাদটিই এখন আমাদের জন্য বাস্তব হয়ে উঠেছে৷ এখনো স্বাধীনতাবিরোধী এবং সাম্প্রদায়িক শক্তি সক্রিয়৷ কাঙ্খিত গণতন্ত্র আমরা এখনো পাইনি৷''
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজির শেষ বর্ষের ছাত্র পিয়াল দাস অনুপ বলেন, ‘‘আমরা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, বঙ্গবন্ধুকে দেখিনি৷ আমরা শুনেছি, তার সম্পর্কে জেনেছি৷ সাধারণ মানুষের জন্য তার দরদ, তার গণতান্ত্রিক এবং অসাম্প্রদায়িক নেতৃত্ব আমাকে আকর্ষণ করে৷ আমি অবাক হয়ে যাই একজন নেতা কীভাবে পুরো জাতিকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ধাপে ধাপে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করেছেন৷ ৭০-এর নির্বাচনের পর তিনি চাইলে অনেক কিছু করতে পারতেন৷ কিন্তু তিনি তা না করে বিচক্ষণতার সঙ্গে জাতিকে নিয়ে ধৈর্যের সঙ্গে এগিয়েছেন৷''
অনুপ বলেন, ‘‘আমি তার অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা পড়েছি৷ যত পড়ি ততই তার প্রতি আকৃষ্ট হই৷'' তার মত, বঙ্গবন্ধু যে আদর্শিক নেতৃত্বের পথ আমাদের দেখিয়েছেন তার প্রয়োজনীয়তা কখনোই শেষ হবে না৷ আমরা তার চিন্তার গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক মুক্তি, সামাজিক ন্যায়বিচার অর্জন করতে পেরেছি বলে মনে হয় না৷ সেটার জন্য প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পুরোপুরি বাস্তবায়ন৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মাস্টর্সের শিক্ষার্থী মো. রেজাউল আলম বলেন, ‘‘আমাদের এই প্রজন্মের মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে জানার আগ্রহ অনেক৷ আর এই আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে৷ তার যারা সমালোচক তারাও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে জানছেন৷ জানার চেষ্টা করছেন৷ আমাদের এখানে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমরা স্ট্যাডি সার্কেল করি৷ তাতে নানা বিতর্ক হয়৷ কিন্তু তা সবই হয় বঙ্গবন্ধুকে জানার আগ্রহ থেকে৷ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এখন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পড়ানো হয়৷''
তিনি বলেন, আমার বিবেচনায় বঙ্গবন্ধু গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সেই গণতন্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনার জন্যই৷ কিন্তু আমার মনে হয় সেই জায়গায় আমারা তেমন এগোতে পারিনি৷
বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনি এখনো অধরা
সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ জনের মধ্যে পাঁচ আসামি এখনো দেশের বাইরে পলাতক আছেন৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের মধ্যে দুইজনের অবস্থান জানলেও বাকি তিনজনের অবস্থান জানে না৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরী ক্যানাডায় আছেন৷ বাকিদের অবস্থান আমাদের জানা নেই৷'' পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘‘ওই দুইজনকে ফেরত আনার জন্য ইন্টারপোলসহ দ্বিপাক্ষিক আলাপ আলোচনা এবং রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে অনুরোধ জানানোর পরও তাদের ফেরত পাওয়া যায়ন৷ তারপরও চেষ্টা চলছে৷''
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের অবস্থান জানা ও তাদের ফিরিয়ে আনা নিয়ে এক সময়ে কাজ করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ওয়ালিউর রহমান৷ তিনি বলেন, ‘‘রাশেদ চৌধুরী ও নূর চৌধুরীকে আসলে যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যানাডা ফেরত দেবে না৷ তাদের দেশে ফাঁসির বিধান নেই৷ এটা ধরে তারা বলছে ওই দুইজন যেহেতু মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তাই তারা তাদের ফেরত দিতে পারে না৷ তবে এই দণ্ড নিয়ে একটা নেগোশিয়েট করা যায়৷ কিন্তু তারা তাতেও রাজি নয়৷ ফলে আমার মনে হয়েছে তারা আসলে ওই দুইজনকে ফেরত দিতে চায় না বা ফেরত দেবে না৷''
তিনি বলেন, ‘‘বাকি যে তিনজন শরিফুল হক ডালিম, খন্দকার আব্দুর রশিদ ও মোসলেম উদ্দিন এরা পাকিস্তানি পাসপোর্টধারী৷ লিবিয়ার বেনগাজিতে তাদের একটি অবস্থান আমার জানা ছিলো৷ কেনিয়ার নাইরোবিতে ডালিমের ব্যবসা এখনো আছে৷ তারা এখন পাকিস্তান—নাইরোবিতে যাতায়াত করে৷ আগে ইটালিতে যেত, কিন্তু এখন পারে না৷ তাদের একটা বাড়ি ছিলো সেটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ লন্ডনেও একটা বাড়ি ছিলো সেটাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷''
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ জনের মধ্যে ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি পাঁচ আসামির ফাঁসি কার্যকর হয়৷ তারা হলেন, মেজর(অব.) বজলুল হুদা, লে. কর্নেল (অব.) মহিউদ্দিন আহমেদ, মেজর (অব.) এ কে এম মহিউদ্দিন, কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান ও কর্নেল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান৷
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি লে. কর্নেল(অব.)আব্দুল আজিজ পাশা মারা যান জিম্বাবুয়েতে পলাতক অবস্থায়৷ ২০২০ সালের ৭ এপ্রিল পলাতক আসামি ক্যাপ্টেন (বাধ্যতামূলক অবসর) আব্দুল মাজেদকে ঢাকা থেকে আটক করা হয়৷ ওই বছরের ১২ এপ্রিল তার ফাঁসি কার্যকর হয়৷