ঢাবি শিক্ষক সমিতিতে ‘অটো পাস’
২২ ডিসেম্বর ২০২০৩০ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু তার আর প্রয়োজন হয়নি৷ কারণ নীল দল ছাড়া আর কেউ প্যানেল দেয়নি৷ আলাদা ভাবে কেউ প্রার্থীও হয়নি৷ বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সাদা দল আর বামপন্থীদের গোলাপী দল নির্বাচনে অংশ নেয়ায় বিরত থাকে ৷ ফলে নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদ চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরই ২০ ডিসেম্বর রাতে নীল দলের ১৫ জনকেই বিজয়ী ঘোষণা করে৷
আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহকে সভাপতি এবং, পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়াকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়৷
কিন্তু এটা মানতে চাইছেন না সাদা দলের নেতারা৷ তারা বলছেন, এটা এক তরফা এবং অটো পাসের নির্বাচন হয়েছে৷ সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ‘‘শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মাকসুদ কামাল প্রো-ভিসি হয়ে যাওয়ায় গত ছয় মাস ধরে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন সাদা দলের অধ্যাপক লুৎফর রহমান৷ গত নির্বাচনে একমাত্র তিনিই সাদা দল থেকে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন৷ এটা নীল দল মানতে পারেনি৷ তাই এই করোনা মহামারির মধ্যেও তারা এক তরফা নির্বাচন করে নিল৷’’
তিনি বলেন, করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বডি- সিনেট, সিন্ডিকেট, ডাকসুর নির্বাচন হচ্ছেনা৷ আমাদের বেশ কয়েকজন শিক্ষক করোনায় মারা গেছেন৷ তাই নির্বাচন স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছিলেন৷ শিক্ষক সমিতি এবং নির্বাচন পরিচালনা পর্যদের কাছেও আবেদন করেছিলেন৷ কিন্তু কেউই তাদের আবেদনে সাড়া দেননি৷ তাই তারা নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে বিরত থেকেছেন৷
তার অভিযোগ, ‘‘গণতন্ত্রের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও নির্বাচনে অটো পাস সিস্টেমে চলে গেল৷ এই সরকার ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে রাতে নির্বাচন করেছে৷ আর এখন তো নির্বাচনই হয় না৷ সবাই অটো পাস৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও অটো পাসের কবলে পড়ল৷’’
অবশ্য এই অভিযোগ মানতে চান না নীল দলের নেতারা৷ তারা বলছেন, সাদা দলের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্রও কিনলেন কিন্তু জমা দিলেন না৷
আসলে তারা প্রার্থী জোগাড় করতে না পেরে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন৷ গত ১০ বছরে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে সাদা দল থেকে দুই-একজন ছাড়া কেউ পাশ করতে পারেননি৷ শিক্ষক সমিতির নতুন সভাপতি অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ বলেন, ‘‘শিক্ষক সমিতির গঠনতন্ত্রেও ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা বাধ্যতামূলক৷ তাই এটা পেছানো বা স্থগিতের সুযোগ ছিল না৷ সিনেট, সিন্ডিকেট বা ডাকসুর বিষয় আলাদা৷ নানা কারণে এই নির্বাচনগুলো সঠিক সময় হয়না৷ তাদের নির্বাচন পেছানোর বিধান আছে৷’’
তিনি দাবি করেন, "নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয় শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির সভাপতিত্বে৷ তিনি তো নীল দলের৷ তিনি তো কোনো ধরনের বিরোধিতা করেননি৷ তার তো নোট অব ডিসেন্ট দেয়ার সুযোগ ছিলো৷”
ওয়ান ইলেভেনের সময়ও তো শিক্ষক সমিতির নির্বাচন হয়নি৷ এর জবাবে তিনি বলেন,‘‘ তখন সরকারের দিক থেকে নিষেধাজ্ঞা ছিলো৷ কোনো নির্বাচনই তখন হয়নি৷ আর এখন তো সব নির্বাচন হচ্ছে৷’’
নির্বাচন পরিচালনা পর্যদ বলছে, তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই নির্বাচনের আয়োজন করেছিলো৷ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য অনেক বেশি ভোট বুথ স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল৷ এমনকি শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের সময় ঐতিহ্যগতভাবে যে খাবার দাবারের আয়োজন করা হয় তাও বাতিল করা হয়েছিল৷ পার্কিং মোহসিন হলের মাঠে নেয়া হয়েছিল৷ তারপর সাদা দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি৷ নির্বাচন পরিচালক অধ্যাপক জাকির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘‘নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষক সমিতি৷ আমাদের শুধু নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷ আমাদের নির্বাচন করার ক্ষমতা আছে৷ বন্ধ বা স্থগিত করার ক্ষমতা নাই৷ এটা চাইলে শিক্ষক সমিতি করতে পারত৷’’
আর অধ্যাপক মো. উল্লাহ দাবি করেন, ‘‘আমরা নির্বাচিত৷ এক পদে একাধিক প্রার্থী না থাকলে সব নির্বাচনেই তাদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়৷ আমাদের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে৷’’
অবশ্য অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘‘নির্বাচনই তো হয়নি৷ তারা নির্বাচিত হলেন কীভাবে?’’