ঢাকাই চলচ্চিত্রের একাল-সেকাল
এক সময় বাংলাদেশে মধ্যবিত্তের বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম ছিল চলচ্চিত্র, যাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে হাজারো হল, রমরমা শিল্প৷ সময়ের পরিক্রমায় ঢাকাই সিনেমা পর্দার বাইরের কাহিনিতেই বেশি আলোচিত৷
স্বর্ণ যুগ
বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, বিশ শতকের ৯০-এর দশকে প্রতিবছর গড়ে ৮০টির মতো পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশে৷ বিশাল অঙ্কের পুঁজি লগ্নি হতো তখন এই শিল্পে৷ পনেরশোটির মতো প্রেক্ষাগৃহে ১০ লাখেরও বেশি দর্শক ছবি দেখতেন প্রতিদিন৷ চলচ্চিত্রকে কেন্দ্র করে রমরমা ছিল সংগীতসহ অন্যান্য শিল্পও৷
চলচ্চিত্র মুক্তি
বাংলাদেশে চলচ্চিত্রের যাত্রা শুরু হয় ১৯৫৬ সালে, একটি ছবি মুক্তির মধ্য দিয়ে৷ ষাটের দশকে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২০টিতে, যা ৯০-এর দশকে গড়ে প্রায় ৮০টিতে উন্নীত হয়৷ কোনো কোন বছর ১২০টিরও বেশি সিনেমা নির্মাণ হতো৷ ২০২১ সালে সেখানে মুক্তি পেয়েছে মোটে ৩০টি৷
ব্যবসাসফল ছবি
বাংলাদেশে সিনেমা কত ব্যবসা করে তার নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই৷ ১৯৮৯ সালে নির্মীত ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ সবচেয়ে ব্যবসাসফল বলে ধারণা করা হয়, যা আনুমানিক ২০ কোটি টাকা আয় করে৷ নব্বই দশকে সালমান শাহ অভিনীত কয়েকটি চলচ্চিত্র ১০ কোটি বা তার কাছাকাছি পৌঁছে৷ দীর্ঘ মন্দার পর ২০০৯ সালে মনপুরা সেই পর্যায়ে যায়৷ এরপর আয়নাবাজিসহ বেশ কয়েকটি সিনেমা সুপারহিট হলেও কোনটিই এত আয় করতে পারেনি বলে ধারণা করা হয়৷
বিতর্কিত যুগ
২০০০ সালের পর থেকে ঢাকার চলচ্চিত্রের দুর্দশা ঘনিয়ে আসে৷ কমতে থাকে চলচ্চিত্র মুক্তির সংখ্যা৷ গল্পের প্রয়োজন ছাড়াই যৌন উত্তেজক দৃশ্যের ছড়াছড়ি, এমনকি হলে প্রদর্শনীর সময় ‘কাটপিছ’ দৃশ্য জুড়ে দেয়া হতো৷ এই সময়ে শুরু হয় পাইরেসির প্রকোপও৷ চলচ্চিত্র ব্যবসায় নামে ধস৷ বন্ধ হতে থাকে হলগুলো৷ ২০০৭ সালে সরকার টাস্কফোর্স করে এ ধরনের সিনেমার বিরুদ্ধে অভিযানে নামে৷
সিনেমা হল
একটা সময়ে দেশের প্রতিটি শহরে একাধিক সিনেমা হল ছিল৷ হলে গিয়ে সিনেমা উপভোগ মানুষের বিনোদনের প্রধান অনুষজ্ঞ ছিল৷ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির হিসাবে ১৯৯৮ সালে এক হাজার ২৩৫টির মতো সিনেমা হল ছিল দেশে৷ পরবর্তী দুই যুগে কমতে কমতে হলের সংখ্যা ঠেকেছে ১২০টিতে৷ তবে চালু আছে ৬০টির মতো৷
আধুনিক প্রেক্ষাগৃহ
২০০০ সালের পর ঢাকায় আধুনিক প্রেক্ষাগৃহ চালু হয়৷ বর্তমানে ঢাকায় বেশ কয়েকটি আধুনিক মাল্টিপ্লেক্স চালু থাকলেও রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন শহরেও এখন নির্মাণ হচ্ছে মাল্টিপ্লেক্স৷ তবে তাতে ঢাকাই চলচ্চিত্রের কতটা সুবিধা হবে সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে৷ বিদ্যমান মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে মূলত বিদেশি চলচ্চিত্রেরই আধিপত্য৷ এই লেখার সময় স্টার সিনেপ্লেক্সে প্রদর্শনীর তালিকায় থাকা ছয়টি চলচ্চিত্রের চারটিই ছিল বিদেশি৷
বিদেশ পাড়ি
বাংলাদেশের এক সময়কার জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অনেকেই চলচ্চিত্র ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে৷ ২০০০ সালের পর থেকে ঢাকাই চলচ্চিত্রের সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবির নায়ক শাকিব খান৷ গত বছর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ডের আবেদন করেন বলে সংবাদ মাধ্যমে খবর বের হয়৷ শাকিব খান অবশ্য পরে জানিয়েছেন, তিনি দেশটিতে স্থায়ীভাবে বসবাসের পরিকল্পনা করেননি৷
নির্বাচন হাঙ্গামা
চলচ্চিত্র দুর্দশায় থাকলেও সম্প্রতি চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন সারা দেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করে৷ ভোটের আগে থেকে শুরু করে ভোটের পরেও এই নির্বাচন ঘিরে বিতর্ক চলেছে, যা শেষ পর্যন্ত আদালতেও গড়িয়েছে৷