1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
উদ্ভাবনবেলজিয়াম

ডিপ্রেশন কাটাতে স্বজনদের নিয়ে মিউজিয়াম দর্শন

৪ এপ্রিল ২০২৩

ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা শনাক্ত করা, করলেও সেটা স্বীকার করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া অনেকের জন্যই কঠিন৷ বেলজিয়ামে এক পরীক্ষামূলক প্রকল্পে অভিনব উপায়ে এমন রোগীদের সাহায্যের চেষ্টা চলছে৷

https://p.dw.com/p/4PdIG
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবিছবি: Axel Bueckert/Zoonar/picture alliance

বিষণ্ণতা মনের অন্ধকার এক দিক৷ দৈনন্দিন জীবনে ডিপ্রশেনের প্রভাব যে কত কঠিন, দীর্ঘদিনের ভুক্তভোগী হিসেবে স্টেফান কঁপিয়ঁ তা হাড়ে হাড়ে বোঝেন৷ নিজের সমস্যার উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘জামাকাপড় বদলে বাইরে যাওয়া, অন্যদের সঙ্গে দেখা করা, কোনো যানে ওঠা, সবই কঠিন৷''

তবে আজ তিনি তাঁর থেরাপিস্টের কাছ থেকে ভিন্ন ধরনের প্রেসক্রিপশন পাচ্ছেন৷ তিনি ও তাঁর ডাক্তার ভ্যাঁসঁ লুস্তিজিয়ে ছয় মাসের এক পরীক্ষামূলক প্রকল্পে অংশ নিচ্ছেন৷ তার আওতায় প্রেসক্রিপশন হিসেবে ডিপ্রেশনের রোগীদের ব্রাসেলস শহরে পছন্দের পাঁচটি মিউজিয়াম ঘুরতে বলা হয়৷ ব্রুগমান হাসপাতালের চিকিৎসক ভ্যাঁসঁ লুস্তিজিয়ে বলেন, ‘‘আমাদের মতে, এটা সবার জন্য উপকারী হতে পারে৷ কিন্তু কেউ কেউ নিজের বাসার চেনা পরিবেশ ছেড়ে বাইরে যেতে লজ্জা পায় বলে যেতে চায় নি৷ তবে বেশিরভাগ রোগী আগ্রহ দেখিয়েছেন৷''

স্টেফান কঁপিয়ঁ এখন স্বেচ্ছায় এক অন্ধকার জায়গায় যাচ্ছেন৷ তিনি আমাদের ব্রাসেলসের ড্রেন বা নর্দমা মিউজিয়ামে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন৷

আর্ট থেরাপি নতুন কিছু নয়৷ ডিপ্রেশনের রোগীদের মিউজিয়ামে যাবার পরামর্শও নতুন নয়৷ কিন্তু পরীক্ষামূলক প্রকল্পের আওতায় এই প্রথম সেই পরামর্শকে প্রেসক্রিপশন হিসেবে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে৷ ফলে রোগীরা সম্ভবত সত্যি বের হবার প্রেরণা পাচ্ছেন৷

সেইসঙ্গে তাঁরা বিনামূল্যে তিন জন পর্যন্ত মানুষকে সঙ্গে নিতে পারেন৷ সেটা অত্যন্ত জরুরি, কারণ, ডাক্তারদের মতে যে মানুষটি মনস্তাত্ত্বিক এবং সম্ভবত আর্থিক কষ্টেও ভুগছেন, তাঁর জন্য সমাজের অংশ হবার অনুভূতি আবার জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করা উচিত৷ লুস্তিজিয়ে বলেন, ‘‘রোগী কাছের মানুষ বা নিজের পরিবারের সঙ্গে যেতে পারেন৷ আমাদের জন্য সেটা একটা নতুনত্ব, তাই আমরাও খুব রোমাঞ্চ বোধ করছি৷''

মিউজিয়াম দেখুন ডিপ্রেশন ভুলুন

ব্রাসেলস শহরের ডেপুটি মেয়র ডেলফিন উবা এই প্রকল্প চালু করেন৷ ক্যানাডায় একই রকম উদ্যোগের কথা শুনে তিনিও এমন পরীক্ষা চালাতে চেয়েছিলেন৷ তিনি মনে করিয়ে দেন, ‘‘বেলজিয়ামে দশ বছরে ডিপ্রেশনের রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গেছে৷ এটা বিশাল সমস্যা৷ কত লোক যে বাইরে বা হয়তো ভেতরে কষ্ট পাচ্ছেন, আমরা তা জানি না৷ তাই এটা ঠিক, যে আমাদের হারানোর কিছু নেই৷ ডাক্তার ও রোগীদের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না৷ আর মিউজিয়ামে দর্শনার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে৷''

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক রিপোর্টে ৯০০টিরও বেশি গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী স্বাস্থ্যের উপর শিল্পকলার ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে৷

মার্চ মাসে পরীক্ষামূলক প্রকল্প শেষ হবে বটে, কিন্তু উবা বলেন যে চূড়ান্ত পরিসংখ্যানের আগেই বিশাল মাত্রায় ইতিবাচক সাড়া পেয়ে তিনি সেই কর্মসূচি আরও সম্প্রসারণের আশা করছেন৷ ডেলফিন উবা বলেন, ‘‘অন্য কয়েকটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানও আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, অনেক ডাক্তারও প্রকল্পে যোগ দিতে চেয়েছেন৷ মানুষের মধ্যে অনেক উৎসাহ দেখতে পাচ্ছি৷ এই কর্মসূচি সম্পর্কে  মানুষকে বোঝাতে এবং তাদের এখানে আসার সাহস দিতে হয়তো আরও সময় লাগবে৷ তবে আমার মতে, কয়েকজন মানুষ উপকার পেলেও সেটা খুব ইতিবাচক ফল৷''

কয়েকজন দর্শনার্থী প্রেসক্রিপশন ছাড়াই উপকার পাচ্ছেন৷ স্টেফান কঁপিয়ঁ-র অভিজ্ঞতা দেখিয়ে দিচ্ছে, যে চাঙ্গা বোধ করতে ‘সুন্দর' কিছু দেখারও প্রয়োজন নেই৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি অনেক ভালো বোধ করছি, সন্দেহ নেই৷ নিজের সমস্যা ভুলে পৃথিবীর বিস্ময় দেখছি৷''

পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে মিলে তিনি যা শিখেছেন, তা সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে তিনি আগ্রহী৷ এভাবে তিনি আরও কিছুটা অন্ধকার দূর করতে চান৷

টেরি শুলৎস/এসবি