‘ট্রাক্টর কর’-এর বিরুদ্ধে ব্রিটেনে ব্যাপক কৃষক বিক্ষোভ
২০ নভেম্বর ২০২৪কেউ কেউ লন্ডনের রাস্তায় ট্রাক্টর চালিয়ে উত্তরাধিকার কর বাতিলের দাবি করেছে। মঙ্গলবারের বিক্ষোভে অনেকেই বলছেন, এই কর বাতিল করা না হলে পারিবারিক খামারগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে এবং খাদ্য উৎপাদন হুমকির মুখে পড়বে।
অক্টোবর মাসে যুক্তরাজ্যের নতুন সরকার বাজেটে তহবিল সংগ্রহের জন্য ঘোষিত এই পদক্ষেপটি কৃষকদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। অনেকই অভিযোগ করছেন, ক্ষমতাসীন লেবার পার্টি গ্রামীণ সম্প্রদায়কে বোঝে না। সরকারের সমালোচকরা এই পদক্ষেপকে ‘ট্রাক্টর কর' নামে অভিহিত করেছেন।
বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী কায়ার স্টারমারকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন, যার মধ্যে কোনোটিতে লেখা ছিল "কোনো কৃষক নেই, কোনো খাদ্য নেই, কোনো ভবিষ্যৎ নেই", আবার কোনোটিতে ছিল "স্টারমার দ্য ফার্মার হারমার (স্টারমার কৃষকের বিনাশকারী)"। পুলিশের দেয়া তথ্য অনুসারে, আনুমানিক ১০ হাজার কৃষক এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন।
কৃষক এমা রবিনসন বলেছেন, তিনি 'একেবারে হতাশ' এবং সরকার যদি এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে, তাহলে তিনি খাদ্য সরবরাহ ব্যাহত করার কার্যক্রমে অংশ নেবেন বলেও সতর্ক করেছেন। তিনি জানান, উত্তর-পশ্চিম যুক্তরাজ্যে তার খামারটি ৫০০ বছর ধরে তার পরিবারে অংশ ছিল। এখন তিনি খামারটি তার সন্তানদের দিতে চলেছেন। এমা রবিনসন বলেন,"এটি এমন একজন ব্যক্তি আমার হাত থেকে কেড়ে নিতে চাইছেন, যিনি আক্ষরিক অর্থেই মাত্র কয়েক দিন ধরে সংসদে রয়েছেন।"
প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে খামারগুলো করের আওতামুক্ত ছিল। তবে অর্থমন্ত্রী র্যাচেল রিভস গৃহীত নতুন নীতি অনুসারে, ২০২৬ সাল থেকে, ১০ লাখ পাউন্ডের বেশি কোনো খামারের মূল্য হলে তার উপর ২০% কর প্রদান করতে হবে।
কৃষকরা দাবি করছেন, তাদের জমি ও যন্ত্রপাতির মূল্য বেশি হলেও খামারগুলোর নিজেদের মুনাফার পরিমাণ কম। এ কারনে তাদের সন্তানদের কর পরিশোধ করতে হলে খামারের জমি বিক্রয় করতে হবে। টপ গিয়ার-এর সাবেক উপস্থাপক জেরেমি ক্লার্কসনও একটি খামারের মালিক। বিক্ষোভে অংশ নিয়ে তিনি সরকারকে সতর্ক করে বলেন "অনুগ্রহ করে এই সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসুন।''
তবে সরকার বলেছে, এই সংস্কারগুলো শুধুমাত্র সবচেয়ে লাভজনক খামারগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে এবং প্রান্তিক কৃষকদের প্রয়োজনে অর্থায়নেও সহায়তা করবে। পরিবেশ মন্ত্রী স্টিভ রিড বলেছেন তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষকদের থেকে কোনো কর গ্রহণের আশা করছেন না।
সরকার আরো জানিয়েছে, কর গ্রহণের এই পরিবর্তনটি ২০২১-২২ সালে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত খামারের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে বছরে প্রায় ৫০০টি খামারের উপর প্রযোজ্য হবে, যা ১০বছরেরও বেশি সময় কিস্তিতে পরিশোধ করা যাবে।
তবে কৃষকরা বলছেন, ক্ষতিগ্রস্তদের সংখ্যা অনেক বেশি হবে। তাদের দাবি, সরকারের ৫০০ খামারের তালিকায় গবাদি পশু ও ট্রাক্টরের মতো সম্পদ অন্তর্ভুক্ত নয়। কান্ট্রি ল্যান্ড অ্যান্ড বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন অনুমান করছে দেশটির প্রায় ৭০ হাজার খামারের মূল্য ১০ লাখ পাউন্ডের বেশি। এ কারণে এই করের প্রভাব অনেক বেশি হবে।
কৃষকরা বলছেন, তারা অসম প্রতিযোগিতার শিকার। সাম্প্রতিক সময়ে সস্তা আমদানিকৃত পণ্য, সুপারশপের কারণে আয় কমে আসা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বারা তারা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে দাবি তাদের।
এসএইচ/এসিবি (রয়টার্স)