1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘জিআই নিয়ে আমাদের আইনটা খুবই অসম্পূর্ণ’

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই ভারত দাবি করার পর জিআই নিয়ে আলোচনা আবার ফিরে এসেছে ৷ জিআই আসলে কী, জিআই কীভাবে এলো এবং না থাকলে কী হবে - এসবের উত্তর খুঁজছেন অনেকেই৷

https://p.dw.com/p/4cUnk
বাংলাদেশের জামদানি
‘জিআই নেই মানে আমরা ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইটস হারাচ্ছি’ - বলেন মাসউদ ইমরান মান্নুছবি: Mortuza Rashed/DW

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মাসউদ ইমরান মান্নু জিআই সংক্রান্ত অনেক বিষয়েই কথা বলেছেন ডয়চে ভেলের সঙ্গে...

ডয়চে ভেলে : জিআই' বলতে কী বোঝায়? এর ধারণা কীভাবে এসেছে?

অধ্যাপক মাসউদ ইমরান মান্নু : জিআই বলতে আসলে বোঝায় জিওগ্রাফিক ইন্ডিকেশন৷ এর বাংলা হচ্ছে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য৷ অর্থাৎ, একটি পণ্যকে ভৌগোলিকভাবে চিহ্নিত হতে হবে৷ একেকটি পণ্য অনেক স্থানে উৎপাদিত হলেও, মানুষ বোঝার চেষ্টা করে এর আসল রূপ কোনটি? পণ্যের ব্যাপারে কপিরাইট বা স্বত্বের প্রশ্নও চলে আসে৷ কে এই অধিকার ভোগ করবে? আবিষ্কার বা ঐতিহ্যের অধিকার কার হবে? কীভাবে অন্যায্য প্রতিযোগিতা বন্ধ করা যাবে সেই কনভেনশন এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করে৷ পরবর্তী সময়ে এই ব্যাপারগুলো দেখাশোনা করে ডাব্লিউআইপিও বা ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি অর্গ্যানাইজেশন৷ এই প্রতিষ্ঠান যে কোনো পণ্যর জন্য কোনো দেশকে একক বা যৌথভাবে জিআই প্রদান করে৷ গত শতাব্দীর বিশের দশকে ইউরোপে প্রথম এর ভাবনা আসে কোনো একটি পণ্য বা সংস্কৃতির অথেনটিক বা বিশুদ্ধ অবস্থার সন্ধানের জন্য৷

ভালো উদাহরণ কুমিল্লার মাতৃভাণ্ডার: মাসউদ

জিআই-এর প্রয়োজন হলো কেন? যে কোনো জিনিস তো যে কেউ উৎপাদন করতে পারেন?

প্রয়োজন হলো এই কারণে যে, এর একটা ভালো উদাহরণ হতে পারে কুমিল্লার মাতৃভাণ্ডার৷ প্রথম একটি পরিবার বিক্রি করতে শুরু করে৷ সেটা দেখেই অনেকে এই ব্যবসা শুরু করেন৷ এখন কুমিল্লা শহরে নানা নামে প্রায় সাড়ে ৪শ'র বেশি মাতৃভাণ্ডার আছে৷ অর্থাৎ, মূল যিনি বানালেন তার স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে না৷ যদি তার স্বার্থরক্ষা করা যেতো, তাহলে আসল জিনিসটা রাখা যেতো৷ একই ফর্মুলা নিয়ে বানাচ্ছেন অন্যরা, কিন্তু একই টেস্ট হচ্ছে না৷ এজন্যই লিগ্যাল প্রোটেকশন তৈরি করা জরুরি৷ কারণ, এটা একটা মেধাস্বত্ব৷  

কোনো দেশকে যদি কোনো পণ্যের জিআই দেওয়া হয়, তাহলে অন্য দেশ কি সেই পণ্য উৎপাদন করতে পারবে না?

পারবে৷ কিন্তু এর জন্য সেই দেশ থেকে কপিরাইট নিতে হবে৷ মনে রাখতে হবে, জিআই নেই মানে আমরা ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইটস হারাচ্ছি৷ এখন যে টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে৷ অনেকে বলছেন, আমরা টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই পেয়ে গেছি৷ আসলে আমরা এখনও পাইনি৷ প্রোসিডিরওটা হচ্ছে, আমরা যদি কোনো কিছুর জন্য দাবি করি, তাহলে ন্যূনতম তিন মাস সময় লাগে, যদি কেউ আপত্তি না করে৷ আর আপত্তি করলে আরো বেশি সময় লাগে৷ কেউ আপত্তি না করলে পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে ৬ মাস সময় লেগে যায়৷ এখন ভারত দাবি করেছে, টাঙ্গাইলের শাড়ি হুলিয়াডাঙ্গার৷ এখানে কিন্তু একটা শেয়ার কালচার আছে৷ ইউরোপে এই সংকটা হয়েছিল৷ তখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন যেটা করেছিল, সেটা হলো শেয়ার কালচার৷ অনেকগুলো দেশ একই ধরনের পণ্য উৎপাদন করে৷ সে তার আইনের ভেতরে সবগুলো দেশকে নিয়ে এসেছে৷ আমরাও যদি প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে এই প্রক্রিয়ায় যেতে পারতাম তাহলে অনেক সমস্যার সামাধান হয়ে যেতো৷ এটা এমন নয় যে, এক দেশ জিআই নিয়েছে, এই কারণে আরেক দেশ পাবে না৷ যেমন, ধরেন আমাদের সিলেটের শীতল পাটি জিআই পেয়েছে৷ আবার দেখেন, ঝালকাঠিতেও শীতল পাটি হয়৷ সেটাও কিন্তু ঝালকাঠির শীতল পাটি হিসেবে জিআই পেতে পারে৷  

রসগোল্লা নকশিকাঁথাসহ যেসব পণ্যের জিআই আমরা হারিয়েছি, সেগুলো কি আবার ফিরে পাওয়ার সুযোগ আছে?

এই কথাটার সঙ্গে আমি দ্বিমত পোষণ করি৷ আমরা বলছি, হারিয়েছি, বিষয়টা এমন না৷ এর প্রতিটি আমরা দাবি করতে পারি৷ সম্প্রতি আমরা গোপালগঞ্জের রসগোল্লার জন্য দাবি করেছি৷ এটা কিন্তু গোপালগঞ্জের রসগোল্লা৷ আবার ধরেন নকশিকাঁথা, আমরা যদি জামালপুরের বা মানিকগঞ্জের নকশিকাঁথা নাম দিয়ে দাবি করি, তাহলে সেটা পেতে পারি৷ এটা আসলে হারিয়ে ফেরার বিষয় না, সতর্ক হওয়ার বিষয়৷ আর মূল বিষয়টা হলো, আমাদের আইনটা খুবই অসম্পূর্ণ একটা আইন৷ খুবই হেলাফেলাভাবে এটা করা হয়েছে৷

জিআই নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলো কতটা সোচ্চার, আর আমরা আসলে কতটা তৎপর?

জিআই নিয়ে আমরা একেবারেই সচেতন ছিলাম না৷ আমরা টিআরআইপিএসের অ্যাগ্রিমেন্টে সই করেছি ১৯৯৫ সালে৷ ঠিক একই বছর ভারতও এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে৷ অথচ দুই দেশ এই নিয়ে পুরো উলটো আচরণ করলো৷ ভারত পরের বছরই নিজেদের দেশে জিআই আইন প্রণয়ন করলো, এই নিয়ে বিপুল গবেষণা এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন পণ্যে জিআই দাবি করতে লাগলো৷ অন্যদিকে আমরা যেন ঘুমিয়ে পড়লাম৷ আমাদের সরকার ব্যাপারটি বেমালুম ভুলে গেল৷ অবশেষে আমরা ২০১৩ সালে আইন প্রণয়ন করি আর এর প্রথম বাস্তবায়ন হয় ২০১৭ সালে৷ ততদিনে ভারত অনেকটাই এগিয়ে গেছে৷ ভারত সেই সময়ের মধ্যে ১০৮টা পণ্যের ওপর জিআই অধিকার প্রতিষ্ঠা করে ফেলে৷ ২০১৩ সালে আমরা কেন আইনটা করলাম, কারণ, ২০১১ সালে ভারত জামদানির জিআই দাবি করে ফেললো৷ তখন আমাদের মনে হলো, আইনের কথা৷ আমাদের সরকার মাত্র তিনটি জিনিস নিয়ে কাজ করেছে৷ ইন্টেকলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইটসের মধ্যে তিনটি ব্যাপার আমাদের আছে, ট্রেডমার্ক, কপিরাইটস আর পেটেন্ট৷ এগুলো দেখার দায়িত্ব কার সেটাও এখনও ঠিক নয়৷ এটা আমাদের আইনেও নেই৷

জিআই নিয়ে গবেষণা কতটা জরুরি? আর গবেষণা হচ্ছে কতটা?

আমরা যখন জিআই বলি, তখন আমাদের বুঝতে হবে যে, এটা কালচারাল হেরিটেজের একটা পার্ট৷ আমাদের দেশে পড়াশোনার কোথাও লিভিং কালচারাল হেরিটেজ বলে কিছু পড়ানো হয় না৷ এটা এখনও কেউ ভাবছে না৷ এটার জন্য আমাদের ইনভেনটরি বানাতে হবে৷ সরকার ইনভেনটরি বানানোর চেষ্টাই করেনি৷ ইনভেনটরি মানে এই না যে, কোন জেলায় কী আছে? ইনভেনটরি হলো প্রোসিডিওর৷ এটা করতে হলে কালচারাল স্টাডি ভালো করে জানতে হবে৷

এই মুহূর্তে সরকারের করণীয় কী? সরকার কী সেই কাজটা করছে?

করছে কিনা সেটা আমি জানি না৷ কারণ, আমি তো আর সরকারের কোনো পর্যায়ে যুক্ত নেই৷ তবে যেটা করণীয়, সেটা হলো আন্তঃমন্ত্রণালয় ও বিভাগের একটা সমন্বয় জরুরি৷ এই বিষয়ে জানাশোনা আছে এমন ব্যক্তিদের নিয়ে কাজটা করা দরকার৷ কালচারাল হেরিটেজটা, কিন্তু কিন্তু কমনসেন্স দিয়ে হবে না, এর জন্য জানাশোনা থাকতে হবে৷ এখন আমাদের আইনটাকে সংশোধন করা দরকার৷ পাশাপাশি একটা জাতীয় কমিটি করতে হবে৷ তারা আসলে সমন্বয়টা করবে৷ এই কমিটির প্রথম কাজ হবে দেশব্যাপী একটা ইনভেনটরি তৈরি করা৷ 

বেসরকারি পর্যায়ে কি কোনো কাজ হচ্ছে?

আমার জানা মতে, না৷ শুধুমাত্র ২০১১ সালে যখন ভারত জামদানি শাড়ির জিআই লাভ করে, তখন সিপিডি নিজের উদ্যোগে এই নিয়ে মামলা করেছিল৷ তখন তারা প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে, আমাদের ঢাকাইয়া জামদানি আর টাঙ্গাইলের জামদানির সঙ্গে ভারতীয় জামদানির তফাৎ আছে৷ প্রমাণ দেওয়ার পর আমরা জামদানির কপিরাইট ফেরত পাই৷ বাংলাদেশ পুরোপুরিভাবে জামদানির অধিকার পায়, অন্যদিকে ভারতের থাকে কেবল ফুলিয়া জামদানি নামে বিশেষ পণ্যের৷ এছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে আর কোনো উদ্যোগ দেখিনি৷

জিআই-এর স্বীকৃতি না থাকলে আমাদের কবে নাগাদ, কী ধরনের সংকট হতে পারে?

ডাব্লিউআইপিও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ২০২৫ সাল থেকে এইসব ব্যাপার কড়াকড়িভাবে আরোপ করা হবে৷ কিন্তু করোনা মহামারির কারণে তা পিছিয়ে ২০৩০ সালে নেওয়া হয়েছে৷ আবার এই আইন মধ্য আয়ের দেশের জন্য যতটা কড়াকড়ি, ততটা স্বল্প আয়ের দেশের জন্য নয়৷ যেহেতু আমরা নিজেদের মধ্য আয়ের দেশ দাবি করছি, জিআইসহ অন্যান্য কপিরাইটের ব্যাপারে আমাদের কড়াকড়িভাবে আইন মানতে হবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য