রপ্তানি পড়েছে, কমেছে প্রবৃদ্ধি
১০ জানুয়ারি ২০১৩জার্মান ফেডারেল পরিসংখ্যান দপ্তরের বিবরণ কিন্তু ঠিক তা বলে না৷ মাস থেকে মাসের বিচারে নভেম্বরে জার্মানির রপ্তানির পরিমাণ ৩ দশমিক ৪ শতাংশ কমে ঠিকই, কিন্তু সেটা সংকট পীড়িত ইউরো এলাকায় রপ্তানি ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ার ফলে৷ আর তারও খানিকটা সামলে দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে জার্মানির রপ্তানি ভালোমতো বাড়ার ফলে৷ চমকটা আসলে ছিল এই যে, জার্মানির আমদানি অক্টোবরে প্রায় তিন শতাংশ বাড়া সত্ত্বেও, নভেম্বরে সেটা ৩ দশমিক ৭ শতাংশ কমে যায়৷
তবে ইউরো এলাকায় জার্মানির রপ্তানি যে কমেছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ বছর থেকে বছরের হিসেব ধরলে, ২০১১ সালের নভেম্বরের তুলনায় ২০১২ সালের নভেম্বরে ইউরো এলাকার ১৭টি দেশে জার্মানির রপ্তানি কমে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ৷ কিন্তু সে'মাসে উদাহরণস্বরূপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর চীনে জার্মান রপ্তানির পরিমাণ বাড়ে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ৷ সব মিলিয়ে ২০১১ সালের নভেম্বরের তুলনায় ২০১২ সালের নভেম্বরে জার্মানির রপ্তানি প্রায় একই থাকে বলা চলে৷
কাজেই জার্মানির ট্রেড সারপ্লাস, বা রপ্তানি ও আমদানির ব্যবধান, অর্থাৎ বাণিজ্যিক বাড়তি বেড়েছে ঠিকই৷ সেটা ঐ আমদানি অপ্রত্যাশিতভাবে এক শতাংশের বেশি কমে যাওয়ার ফলে৷ নভেম্বর মাসে জার্মানির বাণিজ্যিক বাড়তি ছিল ১৭ বিলিয়ন ইউরো, মানে অক্টোবরের চেয়ে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ইউরো বেশি৷ যদি আরো বড় আঙ্গিকে দেখতে চান, তাহলে পরিসংখ্যান দপ্তর বলছে, ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর জার্মানি রপ্তানি করেছে এক ট্রিলিয়ন ইউরোর বেশি পণ্য; আমদানি করেছে ৮৪২ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের পণ্য৷
জার্মানির জোরটা আসলে এই যে, বহির্বিশ্বে জার্মান পণ্যের কদর আর চাহিদা, দুটোই বেড়ে চলেছে৷ শুধু মোটরগাড়ির কথা ধরলেই চলে৷ ফেডারেল পরিসংখ্যান দপ্তর নয়, জার্মান গাড়িনির্মাতারাও নিয়মিত তাদের পরিসংখ্যান পেশ করে থাকে৷ সেই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১২ সালে মিউনিখের বিএমডাব্লিউ সংস্থা চীনে রেকর্ড সংখ্যক গাড়ি বিক্রি করেছে৷ শুধু বিএমডাব্লিউ আর মিনি, এই দু'টি মিলিয়েই তারা চীনে গাড়ি বেচেছে ৩ লাখ ২৬ হাজারের বেশি৷ বলতে কি, এই প্রথম তারা চীনে তিন লাখের বেশি গাড়ি বিক্রি করল৷ ২০১২ সালটা বিএমডাব্লিউ-এর জন্য এমনিতেই ছিল একটা রেকর্ড৷ সারা বিশ্বে তারা গাড়ি বেচে ১৮ লাখের বেশি৷ ওদিকে জার্মানিতে কি বিশ্বের বাজারে তাদের জার্মান প্রতিদ্বন্দ্বী আউডি-ও চীনে গতবছর দারুণ ব্যবসা করেছে, এই প্রথমবার চীনে চার লাখের বেশি গাড়ি বেচেছে৷
বিএমডাবলিউ আর আউডি – অথবা আউডি-র মালিক ফোক্সভাগেন-এর ছছল-বছল অবস্থার ঠিক উল্টো চিত্রটি পাওয়া যাবে ওপেলের কথা ভাবলে ওপেলও জার্মান গাড়ির কোম্পানি, যদিও ওপেলের মালিক আজ মার্কিন জেনারেল মোটর্স৷ জার্মানিতে ওপেলের একাধিক কারখানা বন্ধ করার পরিকল্পনা জিএম-এর৷ এবার ধুয়ো উঠেছে, ফ্রান্সের পিউজো-সিট্রোয়েন সংস্থাকে নাকি ওপেল কেনার জন্য চাপ দিচ্ছে ফরাসি সরকার৷ পিউজো-সিট্রোয়েন-এর আবার জিএম-এর সঙ্গে কৌশলগত জোট, বিশেষ করে জিএম পিউজো-সিট্রোয়েন-এর সাত শতাংশ মালিকানা সংগ্রহ করার পর৷ ওপেল কেনার ফলে নাকি ফোক্সভাগেনের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া সম্ভব হবে, এই হলো ফরাসি সরকারের পরিকল্পনা৷
এসি/ডিজি (ডিপিএ, এএফপি)