জার্মানির নতুন অভিবাসন আইনের রূপরেখা প্রস্তুত
৩০ নভেম্বর ২০২২জার্মানির নিজস্ব স্বার্থেই যে আরও অভিবাসী প্রয়োজন, সে বিষয়ে শিল্প-বাণিজ্য জগত ও বিশেষজ্ঞ মহলে কোনো সংশয় নেই৷ পড়তি জন্মহার, জনসংখ্যার মধ্যে বয়স্ক মানুষের বেড়ে চলা অনুপাত, একের পর এক ক্ষেত্রে দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীর অভাবের মতো সমস্যা মেটাতে দ্রুত বিদেশ থেকে উপযুক্ত মানুষ আনতে না পারলে জার্মানির পক্ষে সমৃদ্ধি ধরে রাখা এবং সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা অটুট রাখা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে সতর্কবাণী শোনা যাচ্ছে৷
এমন বাস্তবতা সম্পর্কে জার্মানির রাজনৈতিক মহল সচেতন হলেও ভোটের রাজনীতির তাগিদে একাধিক দল প্রকাশ্যে কড়া অবস্থান নিয়ে নিজেদের রক্ষণশীল ও জাতীয়তাবাদী মোড়কে পেশ করার চেষ্টা চালাচ্ছে৷ জার্মানির সরকারি জোট অভিবাসন আইন সংস্কারের যে উদ্যোগ নিচ্ছে, তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠছে বিরোধী সিডিইউ ও সিএসইউ দলের ইউনিয়ন শিবির৷ এমনকি নির্বাচনি প্রচারে শিল্প ও বাণিজ্য জগতের স্বার্থে আধুনিক অভিবাসন আইনের দাবিতে সোচ্চার থাকলেও সরকারের সবচেয়ে ছোট শরিক উদারপন্থি এফডিপি দলও এখন প্রকাশ্যে এমন উদ্যোগ সম্পর্কে কড়া অবস্থান নিচ্ছে৷
তবে যাবতীয় সমালোচনা সত্ত্বেও ঘোষিত নীতি কার্যকর করার পথে এগিয়ে চলেছে চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের সরকার৷ বুধবারই মন্ত্রিসভা বিদেশ থেকে দক্ষ কর্মী আনার লক্ষ্যে পরিবর্তিত নীতির রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করছে৷ শ্রমমন্ত্রী হুব্যার্টুস হাইল বলেন, জার্মানির সমৃদ্ধি ধরে রাখাই এই উদ্যোগের মূলমন্ত্র৷ তিনি মনে করিয়ে দেন, শুধু জার্মানি নয়, সেরা মগজ আকর্ষণের ক্ষেত্রে একাধিক দেশ প্রতিযোগিতায় নেমেছে৷ তাই তাঁর সরকার ইউরোপের আধুনিকতম অভিবাসন আইন প্রণয়ন করতে চায়৷ আগের মতো শুধু আমলাতান্ত্রিক স্তরে অভিবাসন মেনে নিলেই চলবে না, সব স্তরে মনেপ্রাণে অভিবাসন চাইতে হবে বলে হাইল মনে করেন৷ উল্লেখ্য, জার্মান সরকার একই সঙ্গে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে বিদেশিদের জন্য আরও দ্রুত জার্মান নাগরিকত্ব পাবার সুযোগ দেবার উদ্যোগ নিচ্ছে৷
জার্মানির সরকার ক্যানাডার মতো দেশের আদলে পয়েন্ট সিস্টেমের ভিত্তিতে দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী আকর্ষণ করতে চায়৷ এমনকি জার্মানিতে চাকুরির প্রমাণ না থাকলেও এমন মানুষ ভাষার জ্ঞান ও যথেষ্ট অভিজ্ঞতার মতো পূর্বশর্ত পূরণ করলেই সহজে প্রবেশ করতে পারবেন৷ শিক্ষাগত যোগ্যতা, বয়স ও জার্মানির সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়কেও বিবেচনা করা হবে৷ প্রাথমিক আলোচনা ও তর্কবিতর্কের পর ২০২৩ সালের প্রথম দিকেই সেই লক্ষ্যে আইন প্রণয়ন করতে চায় শলৎসের সরকার৷ শ্রমমন্ত্রী বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যেই সেই সিদ্ধান্তের সুফল স্পষ্ট হয়ে যাবে বলে তিনি আশা করছেন৷
শিল্পবাণিজ্য জগত ও শ্রমিক সংগঠনগুলি সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে৷ শিল্প ও বাণিজ্যের কেন্দ্রীয় সংগঠন বরং অভিবাসন আইনের খসড়ায় আরও কিছু সাহসী পদক্ষেপ যোগ করার প্রস্তাব দিয়েছে৷ শুধু দক্ষ কর্মী নয়, প্রশিক্ষণ পাবার উপযুক্ত ও ইচ্ছুক বিদেশিদেরও আকর্ষণ করতে চায় শিল্পবাণিজ্য জগত৷ তাছাড়া এমন মানুষ আকর্ষণ করতে আরও দ্রুত ভিসা দেবার দাবিও করছে তারা৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, রয়টার্স)