জার্মানিতে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে অন্যতম আরডাব্লিউটিএইচ
২৭ জুন ২০১১রাইনিশে ভেস্টফেলিশে টেশনিশে হোখশুলে আখেন বা সংক্ষেপে আরডাব্লিউটিএইচ৷ জার্মানির সর্ববৃহৎ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে এই বিশ্ববিদ্যালয়৷ আরডাব্লিউটিএইচ প্রতিষ্টিত করা হয় ১৮৭০ সালে৷ তখন তা শুধুমাত্র পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবেই পরিচিত ছিল৷ ১৮৯৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স এবং ডক্টরেট প্রোগ্রাম চালু করা হয়৷
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে সবমিলিয়ে প্রায় ৩১ হাজার ছাত্র-ছাত্রী৷ এবং এর মধ্যে পাঁচ হাজারেরও বেশি রয়েছে বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী৷ ভিক্টোরিয়া বুশ বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের বিষয়টি দেখাশোনা করেন৷ আবেদন পত্র থেকে শুরু করে কবে কখন কোন ছাত্র বা ছাত্রী জার্মানিতে এসে পৌঁছবে, সে বিষয়ের দিকেও নজর রাখেন তিনি৷ তাঁর কথায়, ‘‘বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীর গ্রুপটি বিশাল৷ এখানে পাঁচ হাজারের বেশি ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করছে৷ ভারত থেকে এসেছে প্রায় ২৬০ জন৷ এদের বেশির ভাগই মাস্টার্স করছে এবং তা করছে ইংরেজি ভাষায়৷ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সের ছয়টি বিষয় পড়ানো হয় পুরোপুরি ইংরেজিতে৷''
তার মানে এই নয় যে জার্মান ভাষা শেখার প্রয়োজন নেই৷ জার্মান ভাষা জানা থাকলে কী কী সুযোগ সুবিধা একজন বিদেশি ছাত্র বা ছাত্রী পেতে পারে, সে প্রসঙ্গে ভিক্টোরিয়া বুশ বললেন, ‘‘ভাষা কোন কোন সময় একটি সমস্যা হিসেবে দাঁড়ায় বৈকি! জার্মানিতে ইংরেজি ভাষায় পড়ানো হচ্ছে – এটা কোন সমস্যা নয়, এটা একটা কৃতিত্ব৷ তবে যদি জার্মান জানা থাকে তাহলে সুবিধা অনেক৷ সামাজিক দিক থেকে সুবিধা সবচেয়ে বেশি৷ সবার সঙ্গে মেলামেশার একটি সুযোগ থাকে৷ নেটওয়ার্কও তৈরি করা যায় সহজে৷ ইংরেজি জানা থাকলেও তা সম্ভব৷ তবে কেউ যদি পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করতে চায়, তাহলে তাকে অবশ্যই জার্মান ভাষা জানতে হবে৷ কারণ ভাষা জানা থাকলে, কোন দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞান আরোহণ করা যায় খুব সহজেই৷''
এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম – আইআইটি চেন্নাইয়ের সঙ্গে
গত বছর রাইনিশে ভেস্টফেলিশে টেশনিশে হোখশুলে আখেন ভারতের আইআইটি চেন্নাই'এর সঙ্গে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম শুরু করেছে৷ এর ফলে প্রতি বছর পাঁচ জন জার্মান ছাত্র-ছাত্রী ভারতে একটি সেমেস্টার কাটাতে পারবে এবং আইআইটি চেন্নাই'এর পাঁচ জন ছাত্র-ছাত্রী জার্মানিতে আসতে পারবে৷ এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ডঃ ফোটিয়োস রিসভানিস৷ তিনি বললেন, ‘‘২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে একটি স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম আমরা চালু করেছি৷ এর মাধ্যমে জার্মানির আখানে অবস্থিত আরডাব্লিউটিএইচ'এর পাঁচ জন ছাত্র-ছাত্রী ভারতের চেন্নাই'এ অবস্থিত আইআইটি'তে যেতে পারবে৷ আর সেখান থেকে পাঁচ জন ছাত্র-ছাত্রী আসতে পারবে আখেনে৷ আগামী অগাস্ট মাসে আখেনের এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঁচ জন ছাত্র-ছাত্রী চেন্নাই'এ যাচ্ছে৷ প্রথমবারের মত৷''
বিদেশি ছাত্রদের ভাষ্য
ভিয়েতনামের এক ছাত্র ওয়া মিং থিং আরডাব্লিউটিএইচ'এ ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছে৷ সে জানায়, ‘‘আখেনে পৃথিবীর অনেক দেশের মানুষকেই দেখা যায়৷ এছাড়া এখান থেকে নেদারল্যান্ডস এবং বেলজিয়াম খুব কাছে৷ তাই বলা যেতে পারে আখেন একটি আন্তর্জাতিক শহর৷ আমি অনেকবার শুনেছি যে, এই শহরে জার্মান নাগরিকই চোখে পড়ে না, সচরাচর৷ সবাই বিদেশি৷'' আর সায়েম অনুরয় চৌধুরি নামের ভারতীয় এক ছাত্রের কথায়, ‘‘প্রযুক্তির জন্য জার্মানি যে বিখ্যাত, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই৷ জার্মানির মিউনিখের পর আখেনের এই বিশ্ববিদ্যালয় ইঞ্জিনিয়ারিং-এর জন্য সবচেয়ে বিখ্যাত৷ ভারত ছাড়া এশিয়ার অন্যান্য দেশ এবং আফ্রিকা থেকেও ইঞ্জিনিয়াররা এখানে আসছে, পড়াশোনা করছে৷ কেউ যদি ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করতে চায়, তাহলে চোখ বন্ধ করে সে আরডাব্লিউটিএইচ'এ চলে আসতে পারে৷''
পড়া শেষে চাকরি পাওয়া প্রসঙ্গে ভারতের আরেক ছাত্র রঞ্জন বালাচানান জানায়, ‘‘এই রাইনিশে ভেস্টফেলিশে টেশনিশে হোখশুলে আখেন থেকে যারা পড়াশোনা শেষ করেছে, তারা সবাই এখানে কাজ করছে৷ কেউই বসে নেই৷ এখানে পড়াশোনা এত সহজ নয়৷ সারাক্ষণ পড়াশোনার চাপ থাকে৷ এখান থেকে কেউ যদি গ্র্যাজুয়েট বা মাস্টার্স করে, তাহলে সে চাকরি পাবেই৷ এতে কোন সন্দেহ নেই৷''
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: দেবারিত গুহ