জার্মানিতে কিংমেকার গ্রিন ও এফডিপি কোন বিষয়ে ভিন্ন মেরুতে
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১জার্মানিতে ভোটের ফলাফলের পর দেখা যাচ্ছে, দলগুলির সামনে দুইটি বিকল্প খোলা। প্রথম বিকল্প হলো, সিডিইউ/সিএসইউ এবং এসপিডি হাত মিলিয়ে সরকার গঠন করবে। এসপিডি সবচেয়ে বড় দল হয়েছে। তারা পেয়েছে ২০৬টি আসন। সিডিইউ/সিএসইউ পেয়েছে ১৯৬টি আসন। দুই দল হাত মেলালে সরকার গঠন করতে পারবে।
দ্বিতীয় বিকল্প হলো, দুই নয়, তিন দলের জোট। এসপিডি বা সিডিইউ/সিএসইউ হাত মেলাবে গ্রিন পার্টি ও এফডিপি-র সঙ্গে। এসপিডি নেতা শলৎস এবং সিডিইউয়ের লাশেট জানিয়ে দিয়েছেন, তারা সরকার গঠনের চেষ্টা করবেন। তাই জার্মানিতে তিন দলের জোট এবার সরকার গঠন করতে পারে, এমন সম্ভাবনা ষোলআনা আছে। প্রশ্ন হলো, ট্র্যাফিক লাইট জোট হবে না কি জামাইকা-জোট হবে। এসপিডি-র রং লাল, গ্রিন পার্টির সবুজ এবং এফডিপি-র হলুদ। তাই তারা জোট করলে সেটা ট্র্যাফিক লাইট জোট (লাল, হলুদ, সবুজ) হবে। আর সিডিইউ-র রং কালো। তারা গ্রিন ও এফডিপি-র সঙ্গে হাত মেলালে সেটা হবে জামাইকার পতাকার রংয়ের জোট(কালো, সবুজ, হলুদ)।
রাজ্যস্তরে এই দুই ধরনের জোট আছে। প্রশ্ন হলো কেন্দ্রীয় স্তরে কি এই জোট হবে? গ্রিন ও এফডিপি কোন বিষয়ে সহমত বা ভিন্নমত?
দুই দলের অবস্থান
গ্রিন পার্টি একটি রাজ্যে সিডিইউ-র সঙ্গে জোটে আছে। দলের সহকারি নেতা রবার্ট হাবেক বলেছেন, ''অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, প্রথমেই কোন কোন বিষয়ে দলগুলির মতবিরোধ আছে, তা না দেখে, কোন বিষয়ে তারা একমত, সেটা দেখাই শ্রেয়। আমি এরকম বেশ কয়েকটা বিন্দু এখনই বলতে পারি।''
গ্রিন পার্টির চ্যান্সেলার পদপ্রার্থী বেয়ারবক ও হাবেকের মধ্যে কিছু বিষয়ে বিরোধ আছে। প্রচারের সময় তারা বিরোধ মিটিয়ে একজোট হয়েছিলেন। কিন্তু জোটের বিষয়ে আবার বিরোধ সামনে আসতে পারে। সিডিইউ-র সঙ্গে জোটে কাজ করার অভিজ্ঞতা হাবেকের আছে। আবার প্রচারের সময় দেখা গেছে, শলৎস ও বেয়ারবক একসঙ্গে হয়ে লাশেটের সমালোচনা করেছেন।
এফডিপি নেতা লিন্ডনার রোববার রাতে ভোট পরবর্তী জোট নিয়ে কিছু ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এফডিপি ও গ্রিন পার্টি আগে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নিক। ঠিক করুক, সামনে যা আসছে, কীভাবে তার জন্য প্রস্তুত হবে দুই দল। বেয়ারবক অবশ্য তার প্রতিক্রিয়ায় সরাসরি কিছু বলেননি। তবে তিনি এই প্রস্তাব খারিজও করেননি।
এফডিপি নেতা তার একটা উচ্চাশার কথা প্রচারের সময়ও গোপন করেননি, তা হলো, তিনি দেশের অর্থমন্ত্রী হতে চান।
দুই দলের মিল
এফডিপি ও গ্রিন পার্টির ভোটদাতারা হলেন তরুণ, শিক্ষিত, শহরে মানুষ। দুই দলের সামাজিক নীতিও প্রায় একই। কিন্তু অর্থনীতির প্রশ্নে তারা দুই মেরুতে দাঁড়িয়ে। অন্তত বার্লিন ভিত্তিক সংগঠন সোস্যাল সায়েন্স সেন্টার দুই দলের ইস্তাহার বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তেই এসেছে। জাতি ও লিঙ্গ সাম্য এবং মানবাধিকারের প্রশ্নে তাদের মত এক। কিন্তু সামাজিক সমস্যার আর্থিক সমাধানের বিষয়ে তারা ভিন্নমত।
তবে তাদের মধ্যে সব চেয়ে বেশি বিরোধ পরিবেশের প্রশ্নে। জার্মানির দলগুলির মধ্যে পরিবেশ সংক্রান্ত টার্গেট নিয়ে এফডিপি সবচেয়ে কম উচ্চাকাঙ্খী। গ্রিন পাটি ঠিক তার উল্টো। তারা ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লার ব্যবহার বন্ধ করতে চায়। ২০৪১ সালের মধ্যে তারা জার্মানিকে কার্বন-নিউট্রাল করতে চায়। এফডিপি এই কাজ করতে চায় ২০৫০ সালের মধ্যে।
ভিন্ন মতাদর্শ
গ্রিন পার্টি সরকারি ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে পরিবর্তন আনতে চায়। কিন্তু এফডিপি চায় সরকারের ক্ষমতা আরো সীমাবদ্ধ করতে। কর বাড়ানো এবং জার্মানির সরকারি ঋণ নিয়ে তাদের সঙ্গে অন্য দলগুলির মতের বিস্তর ফারাক আছে। জোটের আলোচনায় এই বিষয়গুলি বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
তবে গ্রিন পার্টির ইস্তাহার বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞ পোলা লেহম্যান বলেছেন, ২০১৭ থেকে গ্রিন পার্টি সেন্টার-রাইট জোটের দিকে ঝুঁকছে। ২০১৭ সালে গ্রিন ও এফডিপি-র ইস্তাহার দেখে বোঝা যাচ্ছে, তারা অনেক বিষয়ই কাছাকাছি এসেছে। তার মতে, গ্রিন পার্টি সম্ভবত কোনো কঠোর অবস্থান নেবে না। বরং তারা এফডিপি-র কাছাকাছি আসতে চাইবে। তাই সিডিইউ-র সঙ্গে এফডিপি ও গ্রিন একসঙ্গে আসতে পারে এমন সম্ভাবনা আছে।
তবে এসপিডি-র নেতৃত্বাধীন ট্রাফিক লাইট জোট হওয়ার সম্ভাবনাও যথেষ্ট। তার তিনটি কারণ আছে। প্রথমত, লাশেটের তুলনায় শলৎস যে জনপ্রিয় নেতা এবং চ্যান্সেলার প্রার্থী হিসাবে আরো জনপ্রিয় তা ভোটের ফলে বোঝা গেছে। দ্বিতীয়ত, এসপিডি, গ্রিন এবং এফডিপি এই নির্বাচনে তাদের আসনসংখ্যা বাড়িয়েছে। এই তিন দল জোট করলে পার্লামেন্টে তাদের সংখ্যা বেশি হবে। সিডিইউ, এফডিপি ও গ্রিন জোট করলে তাদের সদস্যসংখ্যা তুলনায় কম হবে।
তবে সিডিইউ সরকার গঠনের আশা ছাড়েনি। ফলে আগামী দিনগুলিতে জোট নিয়ে অনেক তৎপরতা দেখবে জার্মানি।
বেন নাইট/জিএইচ