জার্মানিতে আবর্জনা আলাদা করবেন যেভাবে
আলাদা আলাদা ধরনের আবর্জনা ফেলতে বাড়ির পেছনের বাগানে নানা রংয়ের ময়লা ফেলার বাক্স রাখা হয়৷ ইউরোপের দেশ জার্মানি ময়লা, আবর্জনা আলাদা করে ফেলার ব্যাপারে বেশ সচেতন৷ চলুন জেনে নিই, ঠিক কী প্রক্রিয়ায় এটা করা হয়৷
এই পাত্রে কোনো ভুল দেখছেন?
জার্মানিতে তিনটি আলাদা ময়লার বাক্সে কাঁচের বোতল ফেলতে হয়৷ সেগুলো হচ্ছে সাদা, বাদামী এবং সবুজ৷ এসব রংয়ের ছাড়াও নীল বা হলুদ রংয়ের বোতল সবুজ বাক্সে ফেলা যাবে৷ তবে ভাঙা কাঁচের গ্লাস বা জানালার কাঁচ সেখানে ফেলা যাবে না৷ সেগুলো অন্য ধরনের কাঁচ, যা বোতলের সঙ্গে মেশালে রিসাইকেল করা যাবে না৷ ফলে বাড়ির কাজে ব্যবহৃত কাঁচ ফেলতে হবে অন্যত্র৷
সবার জন্য কন্টেইনার
আপনার বাড়িতে যদি গ্লাস বা কাঁচ ফেলার আলাদা আলাদা পাত্র না থাকে, তাহলে রাস্তার পাশে থাকা বড় কন্টেইনারগুলো ব্যবহার করতে পারেন৷ তবে খেয়াল রাখবেন যে, দুপুর একটা থেকে তিনটা এবং রাত আটটার পর ও সপ্তাহান্তে এবং ছুটির দিনে সেসব কন্টেইনারে বোতল ফেলা যাবে না৷ কেননা, তখন বোতল ফেলা হলে সেই শব্দে আশেপাশের বাসিন্দারা বিরক্ত হতে পারেন৷
বোতল ফিরিয়ে দেয়া
যেসব খালি বোতল দোকানে ফিরিয়ে দিলে রিফান্ড, মানে কিছু টাকা ফেরত পাওয়া যায়, সেসব বোতল রাস্তার পাশের গ্লাসের কন্টেইনারে ফেলা যাবে না৷ জার্মানির অধিকাংশ সুপারমার্কেটে সেসব বোতল ফেরত দেয়ার মেশিন রয়েছে৷ মেশিনে বোতলগুলো একের পর এক দেয়া হলে, মেশিন সেগুলো হিসেব করে আপনি যে টাকা ফেরত পাবেন, তার রশিদ দেবে৷ সেই রশিদ ক্যাশে দিলে আপনাকে টাকা দেয়া হবে৷
বোতল ফেলার আরেক উপায়
শহুরে এলাকায় যারা বোতল সুপারমার্কেটে ফেরত দিতে চান না, তারা চাইলে সেগুলো রাস্তার পাশের ময়লার বাক্সগুলোর কাছে রেখে দিতে পারেন৷ এটা শুনতে কিছুটা অস্বাভাবিক মনে হলেও, যারা পয়সার জন্য রাস্তায় বোতল কুড়ান, তাদের জন্য উপকারের৷ তারা তখন সেগুলো ময়লার বাক্সের মধ্যে খোঁজার চেয়ে সহজে কুড়িয়ে নিতে পারবেন৷ জার্মানির কার্লসরুয়ে শহরে আবার বোতল রাখার সুবিধার্থে এরকম ব্যবস্থাও করে দেয়া হয়েছে৷
কাগজের জন্য নীল বাক্স
সব জার্মানই জানেন যে, নীল ময়লার বাক্স হচ্ছে কাগজ এবং কার্ডবোর্ড ফেলার জন্য৷ তবে অনেকেই এটা বোঝেন না যে, পিৎসার বাক্স এবং পেপারের প্লেট সেই বাক্সে ফেলা যাবে না৷ প্লেটে থাকা খাবারের বাড়তি অংশ রিসাইক্লিং প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটায়৷ মোটের উপর গ্লসি পেপার, মানে পোস্টারও সাধারণ কাগজের সঙ্গে রিসাইকেল করা যায় না৷ আর হ্যাঁ, সেই ১৭৭৪ সাল থেকে জার্মানিতে কাগজ পুর্নব্যবহার করা হয়৷
বায়োডিগ্রেডেবল আবর্জনার জন্য বাদামি বা সবুজ বাক্স
বায়োডিগ্রেডেবল বা জীবাণুবিয়োজ্য আবর্জনা ফেলার জন্য বাদামি বা সবুজ বাক্স ব্যবহার করতে হয়৷ রান্না করা বা না করা বাড়তি খাবার, দুধ জাতীয় পণ্য, মাংস এবং মাছ এই ক্যাটাগরিতে পরে৷ সেগুলো পচে গেলেও ফেলতে পারেন এসব বাক্সে৷
সব প্যাকেজিং প্রোডাক্টের জন্য হলুদ
অ্যালুমিনিয়াম, প্লাস্টিক, পলিস্টিরিন কিংবা টিন ক্যানের মতো প্যাকেজিং প্রোডাক্ট ফেলতে পারেন হলুদ বাক্সে৷ খেয়াল রাখবেন, প্যাকেট ফেলার আগে সেটি খালি করে নিলে ভালো৷ তবে সামান্য কিছু ভেতরে থাকলে কেউ আপত্তি করবে না৷
মাঝে মাঝে এটি হলুদ ব্যাগ
জার্মানির কিছু এলাকায় বিভিন্ন প্যাকেট ফেলার জন্য হলুদ বাক্সের বদলে হলুদ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা হয়৷ তবে সেগুলো নির্ধারিত দিনে ফেলতে হবে৷
কালো হচ্ছে বাকি সবের জন্য
কালো বা ধূসর বাক্স হচ্ছে বাকি সবকিছু ফেলার জন্য৷ আর এই বাকি কিছুর মধ্যে শিশুদের ব্যবহৃত ডায়পার বা সিগারেটের শেষাংশের মতো আবর্জনা থাকতে পারে৷ তবে ঝুঁকিপূর্ণ আবর্জনা এই বাক্সে ফেলা যাবে না৷
ঝুঁকিপূর্ণ আবর্জনা
অনেক সুপারমার্কেটে ব্যবহৃত ব্যাটারি সংগ্রহের ব্যবস্থা রয়েছে৷ এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ আবর্জনা ফেলার জন্য প্রতিটি শহরেরই নির্দিষ্ট ব্যবস্থা আছে৷ নির্ধারিত দিনে এলাকার নির্দিষ্ট স্থানে নগর কর্তৃপক্ষের ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকে৷ সেই ট্রাকে এসব আবর্জনা রেখে আসা যায়৷ ব্যাটারির মতো আবর্জনা সাধারণ আবর্জনার বাক্সে না রাখার যুক্তি হচ্ছে সাধারণ আবর্জনায় সেগুলো থাকলে রিসাইক্লিং প্রক্রিয়ার সময় আগুন লেগে যেতে পারে৷
আসবাব ফেলবেন কোথায়?
বাড়িতে ব্যবহৃত কিছু আইটেম আছে, যেগুলো ময়লা ফেলার বাক্সে ফেলা সম্ভব নয়৷ তবে সেগুলো ফেলার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা আছে৷ সোফা, পুরনো টিভি কিংবা ভবন তৈরির উপাদান এই ধরণের আবর্জনার মধ্যে পড়ে৷ কিছু শহরে অবশ্য এ ধরণের ময়লা নির্দিষ্ট দিনে বাড়ির সামনে রাখা যায়৷ নগর কর্তৃপক্ষ তখন গাড়িতে করে সেগুলো নিয়ে যায়৷
কাপড়ের জন্য বিশেষ বাক্স
ব্যবহৃত কাপড় বা জুতা সাধারণ ময়লার বাক্সে ফেলার দরকার নেই৷ সেগুলো সংগ্রহের জন্য বিশেষ বাক্স প্রায় সব শহরেই রয়েছে৷ বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা পুরনো কাপড় ও জুতা সংগ্রহ করে সেগুলো ব্যবহারোপযোগী থাকলে পুনরায় বিক্রি করে৷ কিছু মানুষ অবশ্য তাদের কাপড় ময়লার বাক্সের পাশে রেখে যান যাতে করে যাদের প্রয়োজন, তারা সেখান থেকে চাহিদা অনুযায়ী নিয়ে নিতে পারেন৷
বেশি ভরবেন না
একটি ময়লার বাক্স যদি ধারণক্ষমতার বেশি ভর্তি থাকে, তাহলে সংগ্রহ করতে আসা ব্যক্তিরা সেটি নিতে অস্বীকার করতে পারেন৷ তাই যদি ময়লার বাক্স ভর্তি হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে সেটির উপরে বাড়তি ময়লা রাখবেন না৷ এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, কেন অনেক বাড়িতে ময়লার বাক্সে তালা লাগানো থাকে? এটা এজন্য যে, প্রতিবেশিরা যাতে সেগুলো ভরে ফেলতে না পারেন৷
ধারণার চেয়ে বেশি বিশৃঙ্খল
যদিও জার্মানরা ময়লা, আবর্জনা নিয়মমতো ফেলার ব্যাপারে বেশ সচেতন, তারপরও মাঝেমাঝে বিশৃঙ্খলা দেখা যায়৷ বিশেষ করে গ্রীষ্মের সময় সোমবার সকালে পার্কে গেলে দেখা যাবে এখানে-সেখানে ময়লা, আবর্জনা পড়ে আছে৷ বার্লিনের পার্কের এই ছবিই বলে দিচ্ছে পরিস্থিতি আরো উন্নতির সুযোগ রয়েছে৷