1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে অশান্ত বাজার ও সরকারের উদ্যোগ

শাফাআত হিমেল
১১ অক্টোবর ২০২৪

কোনো জিনিসের দাম একবার বাড়লে তা আর কমে না- এমন একটি আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে জীবনের ২৫টি বছর কাটিয়ে যখন ইউরোপে আসি, তখন স্বাভাবিকভাবেই মাথায় ছিল কোনো কিছুর দাম একবার বাড়লে তা তো আর কখনো কমবে না।

https://p.dw.com/p/4lhwS
এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বাড়ি ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচও।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যখন বেড়েছেছবি: Shafaat Himel/DW

সেইসঙ্গে কোনো কিছু কিনতে গেলে মাথায় ইউরো থেকে টাকায় পরিবর্তনের গুণ, ভাগ তো ছিলই।

খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। জার্মানিতে ২০১৮ -২০১৯ সালেও ৩০ ইউরো থেকে ৪০ ইউরোর বাজার করলে একজন মানুষের বেশ ভালোভাবেই এক সপ্তাহ চলে যেতো। তবে সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এই ৩০-৩৫ ইউরোর বাজার বেড়ে হয়েছে ৬০-৭০ ইউরো। তবে ঘণ্টা প্রতি কাজের ন্যূনতম মজুরি কিন্তু দ্বিগুণ বাড়েনি। ২০১৮ সালে ঘণ্টা প্রতি ন্যূনতম মজুরি ছিল আট ইউরো ৮৪ সেন্ট, যা ২০২৪ সালে এসে হয়েছে ১২ ইউরো ৪১ সেন্ট। অর্থাৎ, খাদ্যদ্রব্যের মূল্য দ্বিগুণ বাড়লেও শ্রমের মূল্য বেড়েছে ‘অর্ধেক'। আর স্বাভাবিকভাবেই জার্মানিতে কখনও অর্থনৈতিক মন্দা এলে তার ছোঁয়া লাগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পরিবারের বাকি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর বাজারেও। 

অবশ্য এই ৬ বছরে ঘটে গেছে অনেক কিছুই, রাইনের নদীতে বয়ে গেছে অনেক জল। ২০২০-২০২১ সালে করোনা অতিমারির কারণে বৈশ্বিক পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থাপনা (সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট) ভেঙে পড়লেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভর্তুকি ও সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় তখনও প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর মূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই ছিল। তবে সবচেয়ে বড় ধাক্কা লাগে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর। 

জার্মানিসহ ইউরোপের অনেক দেশ তাদের প্রয়োজনীয় জ্বালানির জন্য অনেকাংশে রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল। জ্বালানি-সংকটে সেই সময় অনেক কোম্পানির উৎপাদন অস্বাভাবিক হারে কমে যায়। ভূ-রাজনৈতিক জটিলতায় টালমাটাল হয়ে পড়ে চাল, গম ও ভোজ্য তেলের বাজার। মনে আছে, তখন প্রায় কয়েক মাস সুপারশপগুলোতে দিনের পর দিন কোনো ভোজ্য তেল পাওয়া যাচ্ছিল না। সে বছর এক লাফে জার্মানির মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়ে ৮% -এর কাছাকাছি চলে যায়, যা ২০২৪-এর সেপ্টেম্বরে এসেও ৫%-এর উপরে অবস্থান করছে।   

বাজার বা সুপারশপগুলো ঘুরে কিছু পণ্যের ২০২২ ও ২০২৪-এর দামের তুলনা করলে হয়তো আরো একটু ভালো চিত্র পাওয়া যাবে। যেমন, ২০২২ সালে এক  কেজির আস্ত মুরগীর দাম ছিল দুই ইউরো ৮৯ সেন্ট, যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় চার ইউরো ২০ সেন্ট। আরো কিছু পণ্যের বেলায় একই চিত্র দেখা যায়। যেমন, দুধের দাম বেড়েছে লিটার প্রতি প্রায় ৩৩%, পাউরুটির ৪০%, মাখনের ৩৯%, প্রতি ডজন ডিমের দাম বেড়েছে ৪০%, আলুর ৩৬%, টমেটোর ৩৬% এবং ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে লিটার প্রতি প্রায় ৪০%। মাংসের বাজারের পরিস্থিতও একইরকম। আর যদি আপনি 'হালাল' সিলসহ কিনতে চান, সেক্ষেত্রে গুণতে হতে পারে বাড়তি টাকা।

শাফাআত হিমেল, ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগ
শাফাআত হিমেল, ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগছবি: Tanjir Mehedi/DW

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যখন বেড়েছে, তখন এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বাড়ি ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচও। তবে জার্মান সোশাল ডেমোক্র্যাট সরকার দেশের বাইরে পরোক্ষভাবে যুদ্ধে জড়ালেও নিজের দেশের নাগরিকদের ব্যাপারে পুরোপুরি উদাসীন ছিল না। সেই সময়টায় সরকার খাদ্যদ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনার পাশাপাশি নাগরিকদের স্বস্তি দিতে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছিল। স্বল্প আয়ের মানুষদের বাড়ি ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিলে যুক্ত করেছিল প্রণোদনা, সাথে ৪৯ ইউরোর টিকেট দিয়ে এক মাস পুরো জার্মানির গণপরিবহণ ব্যবহার করাসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়ার কারণে কিছুটা স্বস্তিতে থাকতে পেরেছিলেন দেশটিতে বসবাসরত মানুষজন।

পরিসংখ্যান বলছে, জার্মানি টানা দ্বিতীয় বছরের মতো অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে মুদ্রাস্ফীতির হার কমে আসবে বলে জার্মান সরকার বারবার তার নাগরিকদের আশ্বস্ত করে আসছেন। তবে বর্তমান বাজার বিশ্লেষণ ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অর্থনীতির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করলে সামনের মাসগুলোতেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে না কমলেও যদি একটি স্থিতিশীল অবস্থায় থাকে, পাশাপাশি মজুরিও বৃদ্ধি পায় তাহলে অন্তত মানুষের মৌলিক চাহিদার একটি 'খাদ্য' নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না।