জার্মানদের বিয়ের ঐতিহ্যবাহী রীতি-নীতি
অধিকাংশ মানুষের জীবনেই বিয়ের দিনটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে৷ আর কেউ যদি ঐতিহ্য আর রীতি-নীতি মেনে দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে চান, তাহলে তো কথাই নেই৷ জার্মানদের সেরকমই কিছু বিয়ের ছবি দেখে নিন ছবিঘর থেকে৷
ব্রাউটস্ট্রাউস বা নববধূর ফুলের তোড়া
জার্মানদের বিয়েতে পোশাকের সাথে মিল রেখে প্রতিটি কনের হাতেই থাকে সাদা রঙের একটি ফুলের তোড়া৷ গির্জায় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে নববধূ ফুলের তোড়াটি ছুড়ে দেন অতিথীদের লক্ষ্য করে৷ কে পাবে এই তোড়া? মনে করা হয়, এই বিশেষ তোড়াটি যে পাবেন, তারই নাকি সবচেয়ে তাড়িতাড়ি বিয়ে হবে৷ এই দৃশ্যটি দেখতে কিন্তু ভারি মজার, বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের জন্য৷
বিয়ের আগে নববধূর ড্রেস দেখা যাবে না!
বিয়ের আগেই বর যদি কনের পোশাক দেখে ফেলেন, তাহলে নাকি অমঙ্গল হয়৷ যদিও এ সব কথা আজকাল কেউ তেমন বিশ্বাস করেন না৷ তারপরও বিয়ের দিনের চমক হিসেবে কনে এই বিশেষ দিনের পোশাকটি হবু বরের কাছ থেকে আড়াল করে রাখেন৷ অর্থাৎ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বর তাঁর হবু স্ত্রীকে বিয়ের সাজ-পোশাকে দেখতে পান বিবাহ অনুষ্ঠানের ঠিক কয়েক মিনিট আগে৷
সুখ আনতে বাসন ভাঙুন, মজা করুন!
এই রীতিটিকে বলে ‘পল্টারআবেন্ড’, যার আয়োজন করে বর-কনে, তাদের পরিবার ও বন্ধুবান্ধব৷ এতে আমন্ত্রিত অতিথিরা পুরনো কাঁচের থালা-বাসন নিয়ে আসেন, সেগুলো মাটিতে ছুড়ে ভাঙার জন্য৷ বলা হয়, বাসন ভাঙার শব্দ নাকি ভাবি দম্পতিকে অশুভ শক্তি থেকে দূরে রাখে৷ শেষে বাসনের ভাঙা টুকরোগুলো পরিষ্কার করতে হয় বর-কনেকেই৷ দাম্পত্য জীবনে তাঁরা একে-অন্যকে কতটা সাহায্য করবে, সেটাই দেখা হয় এর মাধ্যমে৷
নতুন, পুরনো ও ধার করা জিনিস
সহ্যক্ষমতা, বিশ্বস্ততা ও দাম্পত্য সুখের চিহ্ন হিসেবে কুসংস্কারে বিশ্বাসী অনেক কনেই বিয়ের সময় নানা-দাদি, মা-খালা, ফুপু বা বান্ধবীর কাছ থেকে নীল রঙের কিছু, একটা নতুন ও একটা পুরোনো জিনিস ধার করে পরেন৷ জিনিসগুলো ছোটখাটোও হতে পারে৷ দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের অভিজ্ঞতা আছে, এমন কারো জিনিস পরলে নাকি কনের বিয়েও মজবুত হবে, টিকবে বহুদিন৷
বিয়েতে সাক্ষীদের দায়িত্ব
জার্মানির আইন অনুযায়ী, রেজিস্ট্রি অফিসে বিয়ে নথিভুক্ত করার সময় যাঁরা সাক্ষী থাকেন, তাঁদেরও কিছু দায়-দায়িত্ব থাকে৷ বিয়ের অনুষ্ঠানে তাঁদেরও নানা আয়োজনে অংশগ্রহণ করতে হয়৷ যেমন ব্যাচেলার পার্টির আয়োজন করা, বিয়ের অনুষ্ঠানকে আরো আনন্দময় করে তোলার জন্য বিভিন্ন মজার খেলা পরিবেশন করা, বর-কনের ছোটবেলার ছবি দেখিয়ে তাঁদের প্রেমের গল্পটা সবাইকে বলা, আরো কত কী!
আংটি পরেন বাঁ হাতের আঙুলে
অধিকাংশ দেশেই বিয়ের আংটি পরানো হয় বাঁ হাতের অনামিকায়৷ কিন্তু জার্মানরা পরেন ডান হাতের অনামিকায়৷ এর আসল কারণটা যে কী, সেটা কিন্তু কেউ তেমন জানেন না৷ তবে অনেকে বলেন, ডান হাতেই নাকি ভালোবাসার শিরা থাকে৷ তাছাড়া বিয়ের আংটি হারিয়ে যাওয়া দুর্ভাগ্যের লক্ষণ – এমন একটা বিশ্বাস কাজ করে অনেকের মধ্যেই৷ তাই নিজের আংটিটি খুবই যত্ন করে পরেন জার্মানরা৷
মজার প্রথা
নবদম্পতিকে পুরনো একটি চাদর থেকে হৃদয়ের আকারে খানিকটা কাটতে হয় এবং তারপর ঐ গর্ত বা কাটা জায়গার ভেতর দিয়ে নববধূকে কোলে নিয়ে যেতে হয় বরকে৷ বর যদি অনায়াশেই সেটা করতে পারেন, তবে মনে করা হয় আগামীতে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে গেলেও দু’জনে ঠিকই দাম্পত্য সুখকে জয় কতে পারবে৷
একসাথেই শক্তি!
আরো কঠিন পরীক্ষা! এবার গাছের একটা বিশাল টুকরোকে কাটতে হবে নতুন বর-কনেকে৷ এই কঠিন পরীক্ষায় পাশ করা, অর্থাৎ গাছের বড় টুকরোটির মাঝখানে করাত দিয়ে কাটতে পারার অর্থ হচ্ছে, সারাজীবন তাঁরা একসাথে থেকে সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করতে পারবে৷
স্বাগতম
বিয়ের পর প্রথমবার বাড়িতে ঢোকার সময় বরকে নববধূকে একেবারে কোলে নিয়ে সিঁড়ি ভেঙে তবে ঘরে ঢুকতে হয়৷ বলা হয়ে থাকে, এতে নাকি কোনো অশুভ শক্তি থেকে রক্ষা পায় নববধূ৷ আর এভাবেই নতুন বউকে অভিবাদন করে শুরু হয় নবদম্পতির যুগল জীবন৷
যুগল জীবনের নেতৃত্ব কে দেবে?
সুখি দাম্পত্য জীবনের মূল শর্তই হচ্ছে দু’জনের মধ্যে ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ বা বোঝাপড়া, এক সাথে মিলেমিশে কাজ করা৷ জার্মান বিয়েতে নবদম্পতির একসাথে কেক কাটাটাও তাই বেশ গুরুত্বপূর্ণ৷ তবে মজার ব্যাপার হলো, কেক কাটার সময় অতিথিদের চোখ কিন্তু চলে যায় কার হাত ওপরে থাকে, তা দেখার জন্য৷ যাঁর হাত ওপরে থাকে, সংসার জীবনে তাঁর প্রভাব বা ভূমিকাই নাকি শক্তিশালী হয়৷