জার্মান স্কুলে ‘উসকানিমূলক’ নামাজ পড়ায় নিষেধাজ্ঞা
৩ মার্চ ২০১৭ভুপার্টাল শহরের ইওহানেস রাও গিমনাজিয়ুমের ঐ নির্দেশনায় লেখা হয়েছে, ‘‘গত কয়েক সপ্তাহে মুসলিম শিক্ষার্থীদের স্কুল ভবনে নামাজ পড়তে দেখা গেছে, যা অন্যদের কাছে দৃশ্যমান ছিল৷ তারা টয়লেটে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী ধোয়াধুয়ি করেছে, প্রার্থনার মাদুর পেতেছে এবং নির্দিষ্ট কিছু অঙ্গভঙ্গি করেছে৷''
নির্দেশনায় লেখা আছে, ‘এটি অনুমোদিত নয়' ৷ যারা নামাজ পড়ে, স্কুল কর্তৃপক্ষকে তাদের নাম জানাতে বলা হয়েছে৷ শিক্ষার্থীদের এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি ‘বন্ধুত্বপূ্র্ণ' আচরণ দিয়ে বলতে বলা হয় নির্দেশনায়৷
সামাজিক মাধ্যমে বিতর্ক
নির্দেশনাটি ফেসবুকে পোস্ট হওয়ার পর অনেকে এর সমালোচনা করেছেন৷ একজন জানতে চেয়েছেন, কেন তারা প্রার্থনা করতে পারবে না? ‘‘এমনকি আমাদের রাখালকন্যা প্রায়ই বাইবেল থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে থাকেন,'' স্পষ্টতই জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে নির্দেশ করে এমন মন্তব্য করেন ঐ ফেসবুক ব্যবহারকারী৷
আরেকজন জার্মান সংবিধানের চার নম্বর ধারা (ধর্ম ও দার্শনিক মতবাদ প্রকাশের অধিকার) উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘‘ধর্মীয় স্বাধীনতা সম্পর্কে যেন কী বলা ছিল? জার্মান সংবিধানের চার নম্বর ধারা?''
তবে স্কুল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের প্রশংসাও করছেন অনেকে৷ একজন লিখেছেন, ‘‘আমার মনে হয় চিঠিটা দারুন৷ এসব জিনিস স্কুলের সঙ্গে যায় না৷'' আরেকজনের প্রশ্ন, ‘‘আমরা কি স্কুলে তাদের কার্পেট পাততে দিতে পারি?''
এদিকে, জার্মানির ইসলামবিরোধী ও ডানপন্থি পপুলিস্ট পার্টি ‘অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি' বা এএফডির ভুপার্টাল শহর শাখা স্কুল কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে যুক্তিসংগত পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছে৷
স্থানীয় প্রশাসনের সমর্থন
বৃহস্পতিবার ‘ডেয়ার ভেস্টেন' পত্রিকায় এই বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত স্কুল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানা যায়নি৷ তবে স্কুলের এই সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন৷ জেলা পরিষদের মুখপাত্র ডাগমার গ্রস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে ‘উসকানিমূলকভাবে' নামাজ পড়ার উপর৷ স্কুলে শান্তি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখার লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷''
তিনি বলেন, স্কুলের অনেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অভিযোগ ছিল, তারা তাদের সহপাঠীদের আচরণের কারণে চাপ অনুভব করছেন৷ তবে নির্দেশনায় ব্যবহৃত কিছু শব্দের ভুল ব্যাখ্যা হতে পারে বলে স্বীকার করেন গ্রস৷
পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে তিনি বলেন, স্থানীয় শিক্ষা অফিস স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করবে, কীভাবে কারও সমস্যা না করে শিক্ষার্থীরা তাদের ধর্ম পালন করতে পারে৷
আগের অভিযোগ খারিজ
২০১১ সালে বার্লিনের এক স্কুল শিক্ষার্থী তাকে তার স্কুলে প্রকাশ্যে শুক্রবারের নামাজ পড়তে না দেয়ার অভিযোগ এনেছিল৷ তবে তার নামাজ স্কুলের শান্তি বিনষ্ট করবে, এই কারণ দেখিয়ে আদালত সেই অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছিল৷