মাদক খোঁজার প্রযুক্তি
১১ জানুয়ারি ২০১৪অপরাধবৃত্তি দেশ বা সীমান্ত চেনে না৷ আন্তর্জাতিক অপরাধী চক্রগুলির খোঁজে থাকে জার্মান পুলিশ৷ পুলিশের হাতে সেরা অস্ত্র হল আধুনিক ফরেন্সিক প্রযুক্তি৷
হামবুর্গ বন্দরে প্রতি বছর ৯০ লাখ টন মাল নামে, সারা বিশ্ব থেকে আসা নানা ধরনের পণ্য৷ রুটটা আন্তর্জাতিক মাদক পাচারকারীদেরও চেনা৷ সম্প্রতি হামবুর্গের শুল্ক বিভাগ দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা পণ্যের মধ্যে ১১ কিলো কোকেন খুঁজে পেয়েছে৷
শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তার কাজ হলো পাচার করা মাদকের খোঁজ করা৷ হামবুর্গ বন্দরের শুল্ক বিভাগের কর্মী ডিটার লেন্ডজেভস্কি বলেন, ‘‘এই কার্গোটা আমি বেছে নিয়েছি কেননা এর সবটাই এসেছে এশিয়া থেকে, কাজেই এতে হেরোইন পাবার সম্ভাবনা আছে৷''
এ কাজে তাঁকে সাহায্য করে একটি মাদক সন্ধানী কুকুর৷ এ সব কুকুর প্রশিক্ষণেই শেখে: কোকেন, হেরোইন, আফিম, গাঁজা, অ্যাম্ফেটামাইন, মারিজুয়ানা ইত্যাদি কীভাবে শুঁকে বার করতে হয়৷ লেন্ডজেভস্কি বলেন, ‘‘মানুষের চেয়ে কুকুরের নাকে গন্ধ শোঁকার বহু লক্ষগুণ কোষ আছে৷ গন্ধের যে মস্তিষ্ক রয়েছে, মানুষের ক্ষেত্রে তা মটরশুঁটির মতো বড়ো৷ কুকুরের ক্ষেত্রে তা আখরোটের মতো৷ কুকুরের নাকের গঠনও আলাদা৷ বৃষ্টির পর জঙ্গলের মধ্য দিয়ে হাঁটার সময়ও সে ঠিক গন্ধ শুঁকে নিতে পারে৷ সে সময় গন্ধ আরও জোরালো হয়ে ওঠে৷ কুকুর তার ভিজে নাকে আরও সূক্ষ্ম গন্ধ পায়৷ এই কার্গোটায় কিছু নেই, কিন্তু কুকুরটাকে ট্রেনিং-এ রাখতে হবে৷ কুকুরটা যাতে একটা কিছু খুঁজে পায়, সে জন্য আমি এখানে মাদক লুকিয়ে রেখেছি৷ তার ফলে ও ভবিষ্যতেও খোঁজার উৎসাহ পাবে৷''
কুকুরটার জন্যে এটা একটা খেলা, কিন্তু হামবুর্গের শুল্ক বিভাগের কর্মীদের কাছে মাদক খোঁজার কাজে এই কুকুরগুলো অপরিহার্য৷
হামবুর্গ বন্দরে চোরাচালান হয়ে আসে প্রধানত কোকেন৷ কোকেন খুঁজে পাওয়া গেলে সেটা পাঠানো হয় ল্যাবরেটরিতে৷ সেই সাদা গুঁড়া পরীক্ষা করে দেখা হয়৷ হামবুর্গ বন্দরের কেমিস্ট টোমাস গেরেস বলেন, ‘‘সব কিছু হতে পারে – ময়দা, পাউডার করা চিনি, কিন্তু আবার কোকেনও হতে পারে৷ সেটা টেস্ট করে দেখতে হয়৷''
টোমাস সাদা গুঁড়াটাকে একটা সলিউশনে মিশিয়ে দেখছেন: সলিউশন নীল হয়ে গেলে গুঁড়াতে কোকেন আছে, প্রমাণ হবে৷ তবে আদালতে প্রমাণ হিসেবে এই টেস্ট পর্যাপ্ত নয়৷ গেরেস বলেন, ‘‘এই প্রাথমিক পরীক্ষার ফলাফল আদালতে পেশ করা চলে না, কেননা এতে অনেক গোলমাল থাকতে পারে৷ ওদিকে বহু মামলা শেষমেষ আদালতে যায় বলে আমাদের স্পষ্ট প্রমাণ চাই যে, এতে সত্যিই কোকেন আছে৷''
সেই প্রমাণই দিতে পারে একটি মাস স্পেকট্রোমিটার, যাতে গুঁড়ো পদার্থের সলিউশনটি ২৮০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড টেম্পারেচারে বিশ্লেষণ করা হয়৷ গেরেস বলেন, ‘‘পদার্থটিকে ইলেকট্রন বর্ষণ করে জর্জরিত করা হয়, ফলে মলিকিউলগুলি ভেঙে পড়ে এবং তার টুকরোগুলি মাস স্পেকট্রোমিটারে তাদের ওজন অনুযায়ী বিশ্লেষণ করা হয়৷''
একটি নমুনা নিঃসন্দেহে কোকেন৷ গেরেস বলেন, ‘‘এই যন্ত্রটি দিয়ে আমরা বলতে পারি, সলিউশনে কতটা কোকেন আছে, অর্থাৎ কোকেনের কনসেনট্রেশন কতো৷''
শুল্ক বিভাগের তদন্তকারীদের কাছে এই টেস্টের ফলাফল দরকারি: কোকেন যতো বিশুদ্ধ হবে, ততোই বোঝা যাবে যে, এর পিছনে পাচারকারীরা রয়েছে৷ কোকেন যারা বেচে, তারা ঐ কোকেন বাড়িয়ে পাঁচগুণ করে৷ গেরেস বলেন, ‘‘ওর কাছে পাঁচ গ্রামের বেশি কোকেন হাইড্রোক্লোরাইড বের হলে সেটা খুব কম নয়, উঁচু সাজা হতে পারে৷''
অপরাধীদের আদালতে হাজির করার আগে জোরকদমে তদন্ত চলেছে – যাতে হামবুর্গ বন্দর মাদকমুক্ত থাকে৷
বিশেষ ঘোষণা: এই সপ্তাহের অন্বেষণ কুইজে অংশ নিতে ক্লিক করুন এখানে৷