জার্মান নির্বাচনে নব্যনাৎসীদের উত্থানের আশঙ্কা
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭শরণার্থী ইস্যু, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কসহ আরো বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্ক শেষ৷ এখন সবার অপেক্ষা কার বক্তব্য, কার অবস্থান ঠিক মনে করছেন বেশিরভাগ ভোটার৷ কিন্তু ভোটগ্রহণের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ভোটাররা ঠিকঠাক নিজেদের মত প্রকাশ করবেন কিনা, সে বিষয়েই নিশ্চিত হতে পারছে না দলগুলো৷
২০০৫ সালের ফেডারেল নির্বাচনে প্রথমবার চ্যান্সেলর নির্বাচিত হন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ সেই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিলো ৭৭.৭ ভাগ৷ কিন্তু হঠাৎই এর পরের নির্বাচনগুলোতে কমে যায় উপস্থিতির হার৷ ২০০৯ সালের ফেডারেল নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিলো ৭০.৮ শতাংশ৷ ২০১৩ সালে তা কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ৭১.৫ শতাংশে৷
প্রায় সব জনমত জরিপেই শেষ মুহূর্তেও এগিয়ে আছে ম্যার্কেলের খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী ইউনিয়ন - সিডিইউ এবং বাভেরিয়ায় সহযোগী দল খ্রিষ্টীয় সামাজিক ইউনিয়ন – সিএসইউ৷ খুব কাছাকাছি থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে মার্টিন শুলৎসের সামাজিক গণতন্ত্রী দল – এসপিডি৷ ফলে ম্যার্কেলের চতুর্থবারের মতো চ্যান্সেলর হওয়ার সম্ভাবনাও বেশ প্রবল৷
বিশ্লেষকদের আশংকা, এই সম্ভাবনা প্রবল আকারে দেখা দেয়ায় এবার ভোটার উপস্থিতি হতে পারে আরো কম৷ জরিপে দেখা গেছে, এ বছর অন্তত ৩৪ শতাংশ ভোটারই ভোট দেয়ার ব্যাপারে দ্বিধায় আছেন৷ অর্থাৎ, এই জরিপ সঠিক হলে এবারের উপস্থিতি হতে পারে ৬৬ শতাংশের কাছাকাছি৷
ভোট দিয়ে আর লাভ কি, ম্যার্কেল তো নির্বাচিত হয়েই যাচ্ছেন - এমন চিন্তাভাবনা ভোটারদের নির্বাচনবিমুখ করে তুলতে পারে বলেও মনে করছেন তাঁরা৷ তবে এমন চিন্তাভাবনার বিপদের দিকটাও দেখিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা৷ প্রথমত, জরিপে যে সবসময় মূল নির্বাচনের ফলের প্রতিফলন ঘটে না ব্রেক্সিট ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন তার অন্যতম উদাহরণ৷
মূল আশংকা এএফডি
এবারের নির্বাচনকে গত কয়েকবারের চেয়ে আলাদা হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা৷ কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে কট্টর ডানপন্থি অলটারনেটিভ ফর ডয়েচলান্ড – এএফডির উত্থানকে৷ প্রতিষ্ঠার মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে ২০১৩ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে পাঁচ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেয়ে সাড়া ফেলে দেয় এই দল৷
তবে ২০১৭ সালে আরো পরিপক্ব হয়েছে দলটি৷ এমনকি প্রথম তিন দলের মধ্যে এএফডির চলে আসার সম্ভাবনাও দেখছেন অনেকে৷ অভিবাসী ও ইউরোপীয় ইউনিয়নবিরোধী এই দলকে নব্য-নাৎসীদের আশ্রয়স্থল হিসেবেও আখ্যা দিয়েছেন অন্যান্য দলের নেতারা৷
এএফডি নিয়ে কেন শংকা?
জার্মানির ভোটারদের দুটি করে ভোট দিতে হয়৷ একটি সরাসরি প্রার্থীকে এবং অপরটি পার্লামেন্টে যে দলকে তাঁরা দেখতে চান, সেই দলকে৷ আর এই দ্বিতীয় ভোট নিয়েও চলছে যতো আলোচনা৷
২০১৩ সালের সবশেষ সংসদ নির্বাচনে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে ছিলো যথাক্রমে সিডিইউ এবং এসপিডি৷ তৃতীয় স্থান দখল করেছিলো বাম দল৷ তবে এবার আগস্টের এক জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, বাম দল, সবুজ দল এবং মুক্ত গণতন্ত্রী দল – এফডিপির চেয়ে কয়েক শতাংশ ভোটে এগিয়ে আছে কট্টর ডানপন্থি দল - এএফডি৷
এবারের নির্বাচনেও কোন দলের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম৷ ম্যার্কেল এরই মধ্যে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এএফডির সঙ্গে কোন ধরনের কাজ করবেন না তাঁরা৷ বাম দলের সাথেও কাজ না করার কথা বিভিন্ন সময়ে জানিয়েছেন ম্যার্কেল৷
ফলে ম্যার্কেলের সামনে এসপিডি এবং সবুজ দল ছাড়া, তেমন বিকল্পও থাকছে না সরকার গঠনের জন্য৷ জরিপে কোন আসনেই এএফডির প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা দেখা না গেলেও, মোট ভোটে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে এএফডির পার্লামেন্টে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে৷ প্রধান বিরোধী দল হলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কমিটির সভাপতিত্ব এবং জার্মানির ভবিষ্যত নীতিনির্ধারণেও প্রভাব রাখার ক্ষমতা থাকবে কট্টরপন্থি দলটির হাতে৷
ফলে চ্যান্সেলর কে হচ্ছেন, তা নিয়ে খুব একটা আগ্রহ এই মুহূর্তে না থাকলেও, জার্মানি ও ইউরোপের ভবিষ্যত রক্ষার জন্য হলেও সব ভোটারকে ব্যালটে নিজেদের সিদ্ধান্ত জানানো আহ্বান জানাচ্ছেন সব দলের নেতাকর্মীরা৷
এডিকে/এপিবি (এপি, ডি ডাব্লিউ)