জৈব-চাষের ধুম
২৪ মে ২০১৩আম ও কলার মতো ফলফলারি জার্মানিতে উত্পন্ন হয় না৷ তাই জৈবিক পদ্ধতিতে এসব ফলের চাষ সম্ভব নয়৷ কিন্তু শুধু এই ধরনের ফলমূলই নয়, জৈব বা বায়ো আলু, আপেল, কলা, শশা, শুয়োরের মাংস, দুগ্ধজাত খাদ্য ইত্যাদিও অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা হয়৷ বন ইউনিভার্সিটির এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বায়ো আপেলের প্রতি দুটির একটি বিদেশ থেকে আনা৷ বাজারে জৈব খাদ্যদ্রব্যের চাহিদা ক্রমেই বেড়ে চলেছে৷ কিন্তু সেই সাথে তাল মিলিয়ে কৃষিজমি বাড়ছে না৷ সমগ্র আবাদি জমির মাত্র ৬.৩ শতাংশতে জৈব ফসল উত্পন্ন হয়৷ বায়ো ফসলের ধুম জার্মান চাষিদের পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে৷ এর ফলে কৃষি অর্থনীতিতে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে৷ বিনষ্ট হচ্ছে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র গড়ে ওঠার সম্ভাবনাও৷
লাভজনক হচ্ছে না চাষিরা
বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারের সাহায্য সহযোগিতার অভাবে বায়ো-উত্পাদন ব্যাহত হচ্ছে একথা বলা যায় না৷ কিন্তু কোথাও যেন উন্নয়নটা বিঘ্ন হচ্ছে৷ চাষিরা জৈব উত্পাদনের ব্যাপারে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন৷ তাঁরা মনে করেন এতে কী কোনো লাভ হবে? সরকারের আশ্বাস কতটা নির্ভরযোগ্য? ইত্যাদি ইত্যাদি৷ জার্মানির কয়েকটি রাজ্য সরকার জৈব উত্পাদন খাতে তাদের অনুদানের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে৷ কেউ কেউ একেবারে বন্ধ করে দিয়েছে৷ এছাড়া সাধারণ ও জৈব পণ্যের মধ্যে দামের পার্থক্যও অনেকটা কমে গিয়েছে৷ তাই ব্যয়বহুল বায়োচাষ করে তেমন লাভ হচ্ছে না চাষিদের৷
বেশ কয়েক বছর ধরেই জৈব পদ্ধতিতে ফসল উত্পাদনের জন্য বরাদ্দ কৃষিজমির পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে না৷ অনেক কৃষকই পরিবেশ বান্ধব চাষাবাদ থেকে আবার গতানুগতিক পদ্ধতির চাষাবাদে ফিরে এসেছেন৷ এই প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায় জার্মানির উত্তরের দুটি রাজ্য লোয়ার স্যাকসনি ও শ্লেসভিগ হলশ্টাইন-এ৷
বাকিটুকু পড়তে ক্লিক করুন এখানে...
ফলন কম
এর প্রধান কারণ, যা আগেই বলা হয়েছে, জৈবপণ্য ও প্রচলিত পণ্যের দামের মধ্যে পার্থক্য কমা৷ আর একটি কারণ হলো, জৈব পদ্ধতিতে উত্পাদন করলে কম ফলন পাওয়া যায়৷ ‘‘লক্ষ্য করা গেছে, গতানুগতিক পদ্ধতি থেকে জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করার প্রথম কয়েক বছর উত্পাদন কমে যায়৷'' বলেন জৈব চাষাবাদ আন্দোলনের আন্তর্জাতিক ফেডারেশন-এর মুখপাত্র মার্কুস আর্বেনৎস৷
জৈবিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে চাইলে কিছু কিছু বিষয় মেনে চলতে হয়৷ যেমন জীবজন্তুগুলিকে বড় খামারে রাখতে হয়৷ সুযোগ দিতে হয় চড়ে বেড়ানোর৷ সারের ব্যবহারও তুলনামূলক কম করতে হয়৷ রাসায়নিক সার ওষুধপত্র ব্যবহার করা যায় না৷
জার্মানি পিছিয়ে
গত কয়েক বছরে ইউরোপীয় ইউনিয়নে জৈব পদ্ধতিতে উত্পাদনের জমির পরিমাণ ৫০ শতাংশ বেড়েছে৷ ফ্রান্সে জৈব-খেতের পরিমাণ ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ পোল্যান্ডও এদিক দিয়ে পিছিয়ে নেই৷
জার্মানির প্রতিবেশীরা বায়োচাষের ব্যাপারে এগিয়ে গিয়েছে৷ গতানুগতিক পদ্ধতির চেয়ে জৈবিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে খাটনি বেশি৷ তাই যে সব দেশে শ্রমের মজুরি কম, সে সব দেশ এক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে৷ এছাড়া, আবহাওয়ারও একটা বড় ভূমিকা রয়েছে এখানে৷ কারো যদি শীতকালে টমেটো বা কুমড়া খেতে ইচ্ছা হয়, তাহলে তাকে ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চলের মতো দেশগুলি থেকে আমদানি করা সবজিগুলির দিকেই হাত বাড়াতে হবে৷ কেননা শীতকালে জার্মানির খেতে এই সবজি উত্পন্ন হয় না৷
বাকিটুকু পড়তে ক্লিক করুন এখানে...
অস্ট্রিয়া এগিয়ে
জৈবিক পদ্ধতিতে উত্পাদনের দিকে দিয়ে ইইউ-এর দেশগুলির মধ্যে অস্ট্রিয়া সবার আগে রয়েছে৷ ২০১০ সালে দেশটির সমগ্র কৃষিজমির ১৩ শতাংশ পরিবেশ বান্ধব বলে সার্টিফিকেট পেয়েছে৷ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চেক প্রজাতন্ত্র৷ কমিউনিজমের পতনের পর দ্রুতই দেশটি জৈবিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের দিকে এগিয়ে গেছে৷ গড়ে তুলেছে বায়ো অ্যাসোসিয়েশন এবং প্রয়োজনীয় কাঠামো৷ এর ফলে এক্ষেত্রে লাভবান হচ্ছে দেশটি৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরেও জৈবিক চাষ ও শিল্প-কারখানার প্রসার ঘটছে৷ যেমন আর্জেন্টিনা, ইথিওপিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, চীন, ভারত ও পেরুতে জৈব চাষের ব্যাপারে আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷