‘জামায়াত নিষিদ্ধ হবে’
২৫ মার্চ ২০১৩বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে চলমান আন্দোলন সম্পর্কে বক্তব্য কী? স্বনামধন্য অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা এই প্রশ্ন থেকেই তেজোদ্দীপ্ত, স্বতস্ফূর্ত৷ স্বতস্ফূর্ততার সঙ্গে সচেতনতাও প্রকট, তাই সাক্ষাৎকারে প্রশ্নের ব্যাখ্যাও জরুরি হয়ে পড়ে, আবার ব্যাখ্যা শুরু হতেই সুবর্ণা বুঝে নেন প্রশ্নের উদ্দেশ্য, এ সাক্ষাৎকার তাই এগিয়েছে অনেকটা আলোচনার ঢংয়ে৷ তাতে হয়তো গৎবাঁধা প্রশ্নে ধরাবাঁধা উত্তরের একঘেয়েমি থেকে মুক্তির আস্বাদ পাবেন ডয়চে ভেলের অনেক পাঠক-শ্রোতা৷
দ্বিধাণ্বিতদের জন্য সুবর্ণা হতে পারেন আস্থার খুব বড় এক উৎস৷ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি নিয়ে প্রশ্ন তোলাই তাঁর কাছে অযৌক্তিক এবং সন্দেহজনক৷ তাঁর মতে, ‘‘ এটাই দুঃখজনক যে (যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে) আন্দোলন করতে হয়, কারণ. যে যু্দ্ধাপরাধী, যাদের যুদ্ধাপরাধের তথ্য-প্রমাণ আছে, যাদের অপরাধ প্রমাণিত, যাদের বিপক্ষে সাক্ষী আছে, তাদের শাস্তির জন্য যে আন্দোলন করতে হয় এটা খুব বেদনাদায়ক৷''
প্রয়াত অভিনেতা গোলাম মুস্তাফার কন্যার কাছে আরো দুঃখজনক হলো, পশ্চিমের কোনো কোনো দেশে যে ফাঁসি নিষিদ্ধ সেই যুক্তিতে, নীরবে বা সুকৌশলে কোনো কোনো ব্যক্তি বা মহলের নিজেদের নিরপেক্ষ প্রমাণের চেষ্টা করা৷ সুবর্ণার কাছে নিরপেক্ষতা সুবিধাবাদেরই নামান্তর, বলছিলেন, ‘‘নিরপেক্ষ কথাটা অনেক ক্ষেত্রে হাস্যকর৷ আপনি যদি আমাকে প্রশ্ন করেন, আমি কি নিরপেক্ষ? না, আমি কেন নিরপেক্ষ হবো! আমি অবশ্যই আমার দেশের পক্ষে৷ আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে৷ আমি রাজাকারদের বিরুদ্ধে৷ যারা যুদ্ধাপরাধ করেছে, আমি মোটেও তাদের পক্ষে নই এবং যারা তাদেরকে মদত দিচ্ছে, যারা তাদেরকে আশ্রয় দেয়ার চেষ্টা করছে বা তাদেরকে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে, আমি অবশ্যই তাদের পক্ষে নই৷ আমি একেবারেই দেশের পক্ষে, স্বাধীনতার পক্ষে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে৷ আমার দেশের শহীদ মিনার ভেঙ্গে ফেলা, পুলিশকে আক্রমণ করা, জাতীয় পতাকা পুড়িয়ে ফেলা – আমি নিশ্চিত যে এগুলোকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা বলে৷'' সুবর্ণা মুস্তাফার কাছে নিরপেক্ষতা তাই ‘গা বাঁচিয়ে চলা'৷ ‘‘কেউ (নিরপেক্ষতার ভান করলে) পরবর্তীতে তার জন্য সুবিধাজনক যে অবস্থাটা ‘আমি তো নিরপেক্ষ ছিলাম' বলে সে সেখানে গিয়ে অবস্থান নিতে পারে৷ আজকের দিনে কেউ নিরপেক্ষ থাকেনা৷ প্রত্যেকের নিজস্ব মত আছে, প্রত্যেকের মত প্রকাশের অধিকার আছে৷ এখন আকাশ উন্মুক্ত৷ প্রযুক্তি কত এগিয়েছে! তাই আসলে নিরপেক্ষ বলে কোনো ঘটনা নেই৷ ''
এটা বুঝেই যাঁরা অন্য দেশের দৃষ্টান্ত তুলে এনে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবির বিরোধিতা করেন, তাঁদের জন্য সুবর্ণা মুস্তাফার জবাব, ‘‘আমার দেশের আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড৷ তাই যতক্ষণ না এই আইন পরিবর্তিত হচ্ছে আমি একজন যুদ্ধাপরাধীর জন্য সর্বোচ্চ শাস্তিটিই চাইবো, যেরকম চেয়েছে তরুণ প্রজন্ম, তাঁরা একটা হতাশার জায়গা থেকে তুলে নিয়ে এসে আমাদের হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো আবারও সাহসী করেছে, আবারও স্বপ্ন দেখাচ্ছে৷ আমার দেশে একটি প্রমাণিত খুনের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, সুতরাং গণহত্যার শাস্তিও মৃত্যুদণ্ডই হওয়া উচিত৷''
শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের আরেক দাবি জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা৷ এ দাবি পূরণের পথেও কৈশোরে অভিনয় জগতে পা রেখেই জনপ্রিয়তা পাওয়া সুবর্ণা কোনো বাঁধা দেখছেন না, কয়েকদিন আগে গণজাগরণ মঞ্চ থেকে সরকারের উদ্দেশ্যে বলে আসা কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে এ প্রসঙ্গে তিনি বললেন, ‘‘ যেদিন জাতীয় পতাকা পোড়ানো হয় গণজাগরণ মঞ্চে দাঁড়িয়ে আমি রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে সরকারকেই বলেছি, আপনার জনগণের ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সংসদে গিয়েছেন, সুতরাং জনগণের ইচ্ছা, জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন আপনাদের মধ্য দিয়েই আমরা দেখবো৷ যেদিন দেশের পতাকা পুড়িয়ে ফেলে এবং শহীদ মিনার ভেঙে ফেলে তারপর থেকে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা আর খুব একটা দূরের পথ নয়৷''
সাক্ষাৎকার: আশীষ চক্রবর্ত্তী
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন