জামাল খাশগজি: রহস্যময় অন্তর্ধান ও মৃত্যু
সৌদি সাংবাদিক তিনি৷ ছিলেন সরকারের সমালোচক৷ ইস্তানবুলে সৌদি দূতাবাস থেকে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে গেলেন৷ বারবার বদলেছে তাঁর নিখোঁজ হওয়া বা মৃত্যু নিয়ে কর্তৃপক্ষের ভাষ্য৷ ছবিঘরে দেখুন কী কী ঘটেছে এ পর্যন্ত৷
যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেলেন
তুর্কি বাগদত্তা হাতিজে জেঙ্গিসকে বিয়ে করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে ২ অক্টোবর ইস্তানবুলের সৌদি দূতাবাসে যান সাংবাদিক জামাল খাশগজি৷ কিন্তু এরপর আর বের হননি৷ তাতেই বাইরে অপেক্ষা করতে থাকা তাঁর বাগদত্তা হাতিজে উদ্বিগ্ন হয়ে খবরটি ছড়িয়ে দেন৷
সংশয়ের ডালপালা মেলা শুরু
৩ অক্টোবর: তুর্কি ও সৌদি কর্তৃপক্ষ ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরেন খাশগজি সম্পর্কে৷ দূতাবাস কর্তৃপক্ষ দাবি করে, কাজ শেষে বেরিয়ে গেছেন খাশগজি৷ তুর্কি কর্তৃপক্ষ বলে যে, দূতাবাস থেকে বেরই হননি তিনি৷
হত্যার অভিযোগ
৬ অক্টোবর: তুরস্কের প্রশাসন জানায়, সৌদি দূতাবাসের ভেতর খাশগজিকে হত্যা করা হয়েছে৷ যে পত্রিকায় খাশগজি নিয়মিত লিখতেন, সেই মার্কিন পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, তাঁকে হত্যা করতে সৌদি আরব থেকে ১৫ সদস্যের একটি দল আসে ইস্তানবুলে৷
আঙ্কারা চায় প্রমাণ
৮ অক্টোবর: তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ান সৌদি আরবের কাছে খাশগজি যে বেরিয়ে গেছেন সে প্রমাণ দেয়ার দাবি জানান৷ তুরস্ক দূতাবাস প্রাঙ্গন তল্লাশি করার অনুমতি চায়৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন৷
অনুমতি দেয় রিয়াদ
৯ অক্টোবর: দূতাবাস প্রাঙ্গন তল্লাশির অনুমতি দেয় সৌদি আরব৷ স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, ২ অক্টোবর একটি ভ্যান দূতাবাসে প্রবেশ করে৷ এরপর সেটি সৌদি রাষ্ট্রদূতের বাসায় যায়৷ এতে বিতর্ক আরো মাথাচাড়া দেয়৷
অর্থনীতিতে ধাক্কা
১২ অক্টোবর: খাশগজির ঘটনায় ব্রিটিশ বিলিওনেয়ার রিচার্ড ব্রানসন তাঁর ভার্জিন গ্রুপের মহাকাশ প্রকল্পে সৌদি আরবের এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের বিষয়ে আলোচনা থামিয়ে দেন৷ রিয়াদে অনুষ্ঠেয় বিনিয়োগ সম্মেলন যোগ দেয়াও বাতিল করেন তিনি৷ উবার, জেপি মর্গানসহ বড় বড় কোম্পানির বিনিয়োগকারীরাও একই সিদ্ধান্ত নেন৷
অনুসন্ধান বন্ধ নেই
১৫ অক্টোবর: তুর্কি তদন্তকারী দল দূতাবাসে তল্লাশি চালায়৷ প্রায় আট ঘন্টা ধরে এই তল্লাশি চলে এবং তদন্তকারীরা ভবন, বাগানের মাটি ও একটি ধাতব দরজা থেকে কিছু নমুনা নিয়ে আসেন৷
হাতাহাতি থেকে মৃত্যু
১৯ অক্টোবর: সৌদি আরব এবার খাশগজির মৃত্যুর বিষয়টি স্বীকার করে৷ তারা বলে যে, হাতাহাতি করতে গিয়ে দূতাবাসে মারা যান খাশগজি৷ তুরস্কের ক্ষমতাসীন দল কঠোর ভাষায় জানিয়ে দেয় যে, ‘হত্যার কোনো আষাঢ়ে গল্প’ মেনে নেবে না আঙ্কারা৷ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল রিয়াদের ব্যাখ্যা ‘অপর্যাপ্ত’ বলে আখ্যা দেন৷
‘চরম ভুল’
২১ অক্টোবর: সৌদি আরব এবার আবার কথা পাল্টায়৷ তারা বলে, ওই সাংবাদিকের মৃত্যু দুর্বৃত্তদের কারণে হয়৷ এটাকে ‘বিরাট ও চরম ভুল’ বলে আখ্যা দেয় তারা৷ সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এই ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানতেন না বলে দাবি করে তারা৷ রিয়াদ বলে যে, সাংবাদিকদের লাশ কোথায় তা তাদের জানা নেই৷
অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেয় জার্মানি
২১ অক্টোবর: আঙ্গেলা ম্যার্কেল ঘোষণা দেন যে, জামাল খাশগজির হত্যার সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত সৌদি আরবে অস্ত্র রপ্তানি করবে না জার্মানি৷ যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের পর সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র রপ্তানি করে জার্মানি৷