জলবায়ু পরিবর্তনের লড়াইয়ে বাংলাদেশের কৃষকের অস্ত্র ভাসমান খেত
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়ছেন বাংলাদেশের কৃষকরা। সাধারণ জীবনযাপনের মাঝেই বহুকালের পুরনো পদ্ধতি মেনেই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইছেন তারা। দেখুন ছবিঘরে..
ভাসমান খেত
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নিয়মিত বিরতিতে বন্যার কবলে পড়ছে বাংলাদেশ। খাদ্য নিরাপত্তাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পিরোজপুর জেলার একজন কৃষিজীবী ভাসমান খেতে সেচের কাজ করছেন। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অনেক কৃষকই ফসলের চারা রোপণ করেন। বর্ষাকালে শুষ্ক জমিতে কচুরিপানার মতো জলজ উদ্ভিদ থেকে তৈরি ভাসমান ভেলায় সবজি চাষ করেন।
কীভাবে যত্ন
বাংলাদেশের পিরোজপুর জেলার নাজিরপুরে ৪২ বছর বয়সি কৃষক মোহাম্মদ মোস্তফা তার ভাসমান খামারে চারার শিকড়ের উপরে জলের আগাছাগুলিকে রাখার চেষ্টা করছেন৷ তিনি রয়টার্সকে বলেন, "আমার বাবা এবং পূর্বপুরুষরা সবাই এ কাজ করেছেন৷ কিন্তু কাজটা খুব কঠিন। পাঁচ বছর আগে ভাসমান খেতে চাষ করতে শুরু করি। এটি আমার জীবনে বড়সড় পরিবর্তন এনেছে।"
‘ওরা কাজ করে’
কৃষক মোহাম্মদ সেলিম বাংলাদেশের পিরোজপুর জেলায় তার খামারে ভাসমান খেতের ছাদে দড়ি দিয়ে একটি লাউ ঝুলিয়ে দিচ্ছেন। এই কৌশলটি শুষ্ক মৌসুমে শাকসবজিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
বিক্রিবাটা চলছে
বাংলাদেশের পিরোজপুরের বেলুয়া নদীর তীরে একটি দ্বি-সাপ্তাহিক ভাসমান বাজারে কৃষকরা তাদের সবজি, ফল এবং চারা বিক্রি করেন মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে।
জীবন বাঁচানোর উপায়
জলজ আগাছার ডালপালা থেকে বোনা ভেলাগুলি তাদের পরিবারকে বাঁচিয়ে রেখেছে। চরম বর্ষায় যখন শুষ্ক জমি দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়ে, তখন এটি কাজে লাগে। এভাবেই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন তারা।
কাজ ভাগ করে নেয়া
বছর ৩৫-এর মুর্শেদা বেগম তার স্বামী মোহাম্মদ ইব্রাহিমের সঙ্গে পিরোজপুর জেলায় তাদের বাড়ির ভাসমান খামারে রোপণের জন্য একটি নৌকায় চারা তুলে রাখছেন। ঝড়, বন্যা এবং ক্ষয়জনিত বৃষ্টির প্রভাবে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশে আশার আলো মুর্শেদা-মোহাম্মদরা।
হাল ছেড়ো না
ভাসমান খামারগুলি এখন পিরোজপুর জেলায় মোট ১৫৭ হেক্টর (৩৮৮ একর) জুড়ে বিস্তৃত। নাজিরপুরে এগুলি ১২০ হেক্টর জুড়ে বিস্তৃত। পাঁচ বছর আগে এমন জমি ছিল মাত্র ৮০ হেক্টর। ২০০ বছরের পুরোনো পদ্ধতি ব্যবহার করে ফল পাচ্ছেন কৃষকরা।
খামারে ভরসা
পিরোজপুরের একজন কৃষক ভাসমান খামারের কাজ করছেন। জলবায়ুর প্রভাব প্রাকৃতিক কারণে আরো জটিল হচ্ছে। টেকটোনিক পরিবর্তনের ফলে খেত ডুবে যাচ্ছে। উজানের বাঁধগুলি পলিকে ধরে রাখছে, যেগুলি আসলে ক্ষয়প্রাপ্ত ব দ্বীপ গঠনের কাজে লাগে।
প্রকৃতির পুত্র
পিরোজপুর জেলার এই কিশোরের নাম রাতুল ইসলাম। বাড়ির কাছে পুকুরে স্নান করার জন্য নৌকা থেকে লাফ দিচ্ছে সে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় উদ্যোগী এই কিশোরও।
মায়ের পাশে
বাংলাদেশের পিরোজপুর জেলায় মুর্শেদা বেগমের ছেলে রাতুল। দুপুরে মায়ের সঙ্গে আড্ডা দেয় ঠিকই, তবে সে ভাসমান খেতের কাজেও সাহায্য করে।
নারী শক্তির উদ্যোগ
পিরোজপুরে মুর্শেদা, তার মেয়ে এবং প্রতিবেশীরা স্থানীয়ভাবে গাছের পাতাগুলোকে পাতলা টুকরো করে কেটে ওয়াটার লেটুসের বীজের বল বেঁধেছেন।
হাতে কালো দাগ
ওয়াটার লেটুস চারা থেকে ক্রমাগত বল তৈরি করার ফলে কালো দাগে ভরে গিয়েছে মুর্শেদার হাত। কিন্তু হাল ছাড়ছেন না তিনি। প্রকৃতির সঙ্গে এভাবেই বাঁচার চেষ্টা করছেন মুর্শেদা তার পরিবার।
রোজের জীবন
পিরোজপুরে গ্রামবাসীরা আখ কেনার জন্য একজন বিক্রেতার সঙ্গে দর কষাকষি করছেন। চাষবাস, সংসার, ছোটদের পড়াশোনা, বাজার হাটের পাশাপাশি প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেঁচে থাকা- এভাবে আশার আলো দেখাচ্ছেন পিরোজপুরের এই কৃষিজীবী পরিবারগুলি।