বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও জঙ্গি!
৪ জুলাই ২০১৬গুলশানের রেস্তোরাঁর যে পাঁচ হামলাকারীর ছবি তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর বরাত দিয়ে সাইট ইন্টেলিজেন্স প্রকাশ করেছে, তাদের মধ্যে চারজনের পরিচয় জেনে অনেকেই বিস্মিত৷ তারা সবাই ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল৷ বেশ কিছুদিন ধরে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নও ছিল তারা৷
চার হামলাকারীর একজন রোহান ইমতিয়াজ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ও বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের উপ-মহাসচিব এস এম ইমতিয়াজ খানের ছেলে৷ সে গত জানুয়ারি থেকে নিখোঁজ ছিল৷ রোহান ইমতিয়াজ ঢাকার স্কলাসটিকা স্কুলের সাবেক ছাত্র৷
আরেক হামলাকারী নিবরাস ইসলাম নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র৷ তার তিন চাচার মধ্যে একজন সরকারের উপ-সচিব, একজন পুলিশ কর্মকর্তা, আরেকজন গবেষক৷
মীর সামেহ মুবাশ্বেরের বাবা মীর হায়াত কবির অ্যালকাটেল-লুসেন্ট বাংলাদেশের কর্মকর্তা৷ মা খালেদা পারভীন সরকারি কলেজের শিক্ষক৷ বড় ভাই পড়ছেন কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ মুবাশ্বের ‘এ লেভেল' পরীক্ষার আগে গত মার্চে নিখোঁজ হন বলে থানায় জিডি করা হয়েছিল৷
আকেজন হলো খাইরুল৷ তার বাড়ি বগুড়ায় ৷ গণমাধ্যমে ছবি দেখেই বাবা-মা ও প্রতিবেশীরা খায়রুলকে চিনতে পারেন৷ পুলিশ খায়রুলের মা-বাবাকে আটক করেছে৷ তবে তার ঢাকার বন্ধুরা তাকে তাসিন রওনক নামে চেনে৷ সে-ও ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করত৷
আইএস-এর প্রকাশ করা ছবিতে পাচঁজনের মধ্যে একজনের পরিচয় সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মাহবুবুল আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে চার হামলাকারীর যে পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে, তা ঠিক আছে৷ আমরা তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি৷''
এদিকে উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান এ সব ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই জঙ্গি তত্পরতায় নড়ে চড়ে বসেছে পুলিশ প্রশাসন৷ তারা বিস্মিত হচ্ছেন৷ বাংলাদেশে হরকাতুল জিহাদ, জেএমবি, হিযবুত তাহরির ও ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম' নামের জঙ্গি সংগঠনগুলোর ধারাবাহিক উত্থান ঘটেছে৷ এর মধ্যে হিযবুত তাহরির বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যেই প্রধানত সক্রিয়৷ প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষকও এর সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে৷ হিযবুত তাহরিরের প্রধান অধ্যাপক মহিউদ্দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ-র শিক্ষক৷ তিনি ২০১০ সালে একবার গ্রেপ্তার হওয়ার পর জামিনে মুক্ত হয়ে এখন পলাতক আছেন৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও অপরাধ বিজ্ঞানের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আধুনিক এই তরুণদের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা দুঃখজনক৷ তবে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আশেপাশের পরিবেশ এবং হয়ত পরিবারও এর জন্য দায়ী৷ তাদেরকে নানা কৌশলে জিহাদের প্রতি আকৃষ্ট করা হয়৷ আর উন্নত যোগাযোগ প্রযুক্তির কারণেও তারা এ সবে জড়িয়ে পড়ছে৷ এর মাধ্যমে তারা জঙ্গিদের সংস্পর্শে আসছে৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষকও এই জঙ্গি মোটিভেশন কাজে জড়িত বলে অভিয়োগ আছে৷''
প্রসঙ্গত, গুলশান হামলার ঘটনায় ৬ জঙ্গি ও দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ মোট ২৮ জন নিহত হয়েছে৷ তবে পুলিশ নিহতদের মধ্যে একজনের নাম ‘আকাশ' বলে জঙ্গি হিসেবে সংবাদ মাধ্যমে ছবি পাঠিয়েছিল৷ কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে জঙ্গি নয়৷ সে আর্টিজান রেস্টুরেন্টের শেফ সাইফুল তালুকদার৷ রেস্টুরেন্টের মালিক সাদাত মেহেদি তা নিশ্চিত করেছেন৷
ধর্মের নামে সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদের বিস্তার বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? আপনার মতামত জানতে চাই আমরা৷ লিখুন নীচের ঘরে৷