বিপন্ন ইরাকের ঐতিহ্য
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪আজকের সিরিয়া ও ইরাক সব বিস্তীর্ণ অঞ্চল এককালে মানবসভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল৷ প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে এই অঞ্চলে একে একে মেসোপটেমিয়া থেকে শুরু করে ব্যাবিলন ও রোমান সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিলো৷ সেই ইতিহাসের নিদর্শনেরও অভাব নেই৷ ইরাকে এর আগের কয়েকটি যুদ্ধে তার কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে৷ আজ সিরিয়া ও ইরাক জুড়ে আইসিস জঙ্গিদের তাণ্ডব প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলির জন্য আরও বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
ইসলামিক স্টেট (আইএস বা আইসিস) নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলি বর্তমানে অস্তিত্বের সংকটের মুখে৷ একদিকে উগ্র ধর্মীয় মতবাদের বলে জঙ্গিরা কিছু নিদর্শন সরাসরি ধ্বংস করে ফেলছে৷ অন্যদিকে অর্থ সংগ্রহের স্বার্থে তারাই আবার প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী আন্তর্জাতিক কালোবাজারে বিক্রি করছে৷ এই অবস্থায় সিরিয়া ও ইরাকে প্রত্নতত্ত্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, যে দুই দেশের প্রাচীন ইতিহাস কার্যত মুছে দেওয়া হচ্ছে৷
ইরাকের ১২,০০০ নথিভুক্ত ঐতিহাসিক স্থানের মধ্যে প্রায় ১,৮০০টি মসুল শহরের কাছে নিনেভা প্রদেশে অবস্থিত৷ গত জুন মাসে এলাকাটি আইএস জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়৷ কালহু, দুর শারুকিন ও আশুর-এর মতো অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্যের উল্লেখযোগ্য কেন্দ্রগুলি এখানেই ছড়িয়ে রয়েছে৷ অরাজকতার সুযোগ নিয়ে কালোবাজারিরা জঙ্গিদের সঙ্গে সহযোগিতায় অবাধ লুটপাট চালিয়ে অমূল্য ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলি পাচার করছে বলে সংবাদ সংস্থা এপি-র কাছে দাবি করেছেন ইরাকের সরকারি জাদুঘর বিভাগের কর্মকর্তা কাইস হুসেন রশিদ৷ মসুলের সিটি মিউজিয়ামের অমূল্য সম্পদও চিরকালের জন্য হারিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি৷
আইএস জঙ্গিরা শুধু প্রাক-ইসলামি সভ্যতার বিরুদ্ধেই রোষ দেখাচ্ছে না৷ শিয়া – এমনকি কিছু সুন্নি ধর্মীয় স্থানও ধ্বংস করে দিচ্ছে তারা৷ পৌত্তলিকতার সামান্য আভাস পেলেই তারা ধ্বংসলীলা শুরু করেছে৷ তবে ঐতিহাসিক নিদর্শন বিক্রির সুযোগ পেলে সংকীর্ণ ধর্মীয় বিশ্বাসের বদলে বাস্তব মুনাফাই তাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে৷ জঙ্গিরা হয় নিজেরাই সরাসরি সে সব বিক্রি করছে, অথবা কালোবাজারিদের হাতে তুলে দিচ্ছে৷
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংগঠন ইউনেস্কো ইরাকের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সুরক্ষায় এক আপদকালীন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে৷ আর্ট ডিলার ও মিউজিয়াম-গুলির উদ্দেশ্যে ইরাক থেকে পাচার করা চোরাই মালপত্র না কেনার আবেদন করেছে এই প্রতিষ্ঠান৷
এসবি/ডিজি (এপি)