চীনের প্রভাব-প্রতিপত্তি কাজে লাগাতে চায় ইউক্রেন
২৭ এপ্রিল ২০২৩গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া ইউক্রেনের উপর হামলা শুরু করার পর থেকে চীন একবারও সরাসরি নিন্দা তো করেইনি, বরং নানাভাবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনকে সমর্থন জুগিয়ে এসেছে৷ উলটে পশ্চিমা বিশ্বকে বর্তমান সংকটের জন্য দাবি করে আসছে বেইজিং৷ ইউক্রেন সংকট মেটাতে নিজেকে ‘নিরপেক্ষ' মধ্যস্থতাকারী হিসেবেও তুলে ধরছে চীন৷ সে দেশ ১২ দফা প্রস্তাবও পেশ করেছে৷ অথচ ইউক্রেন বার বার রাশিয়ার উপর চীনের প্রভাব কাজে লাগিয়ে নিজস্ব অবস্থান স্পষ্ট করতে ব্যর্থ হয়েছে৷ অবশেষে বুধবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন৷
যুদ্ধ শুরু হবার পর চীন ও ইউক্রেনের শীর্ষ নেতার আলোচনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় নি৷ জেলেনস্কি আশা প্রকাশ করে বলেন, তিনি চীনের প্রভাব কাজে লাগিয়ে সংকট মেটানোর চেষ্টা করবেন৷ বুধবার রাতে তাঁর দৈনিক ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, চীনের রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে আবার সব নীতির শক্তি পুনর্বহাল করার সুযোগ এসেছে, যেগুলির ভিত্তিতে শান্তি আসা উচিত৷ তিনি বলেন, বিশ্বের সংখ্যালঘু অংশের মতো ইউক্রেন ও চীনও রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার শক্তিতে আগ্রহী৷ শি জিনপিং-এর সঙ্গে দীর্ঘ ও ‘যুক্তিপূর্ণ' আলোচনা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে বলে জেলেনস্কি আশা প্রকাশ করেন৷ শি জিনপিং ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য রপ্তানি সংক্রান্ত চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষেও সমর্থন জানিয়েছেন বলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট দাবি করেন৷
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনার সময় শি জিনপিং ইউক্রেন ও অন্যান্য দেশের জন্য বিশেষ দূত পাঠানোর ইচ্ছা প্রকাশ করে সব পক্ষের সঙ্গে সংকটের রাজনৈতিক সমাধানসূত্র সম্পর্কে মতামত বিনিময়ের উপর জোর দিয়েছেন৷ চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমের সূত্র অনুযায়ী চীনা প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনে পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে সব পক্ষকে শান্ত থাকার ডাক দিয়েছেন৷ শি জিনপিং চীন ও ইউক্রেনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের রাজনৈতিক ভিত্তি হিসেবে সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন৷
আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিরোধ মেটানোর ক্ষেত্রে চীনের সাম্প্রতিক সাফল্য মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করছে৷ ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক আবার স্বাভাবিক করতে বেইজিং-এর উদ্যোগের জের ধরে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সমীকরণের পরিণতি নিয়ে বিতর্ক চলছে৷ তবে ইউক্রেন সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের ক্ষেত্রে চীন অবদান রাখতে পারলে সেই তুলনায় ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাবে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির মতো ইউক্রেনের সহযোগী দেশ শি জিনপিং ও জেলেনস্কির আলোচনাকে স্বাগত জানিয়েছে৷ জার্মান সরকারের এক মুখপাত্র বলেছেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার আগ্রাসী হামলা বন্ধ করার ক্ষেত্রে চীনের বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে৷ আন্তর্জাতিক আইন ভেঙে রাশিয়া এই হামলা চালিয়েছে বলে তিনি মনে করিয়ে দেন৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, রয়টার্স)