পানি যখন পানের অযোগ্য
২৫ এপ্রিল ২০১৪পানির গুণগত উৎকর্ষের বাৎসরিক জরিপটি করে ভূমি ও সম্পদ মন্ত্রণালয়৷ গতবছর তারা দেশের ২০৩টি শহরে ‘গ্রাউন্ডওয়াটার' পরীক্ষা করে দেখে এবং তা পান করা সম্ভব কিনা, সে অনুযায়ী ‘অতি খারাপ' ও ‘অপেক্ষাকৃত খারাপ' তকমা এঁটে দেয়৷ সরকারি সিনহুয়া সংবাদ সংস্থা গত মঙ্গলবার এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে৷
২০১৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৬০ শতাংশ ভূগর্ভস্থ পানি পানের অযোগ্য৷ ২০১২ সালে পানের অযোগ্য পানির অনুপাত ছিল ৫৭ দশমিক ৪ শতাংশ, অর্থাৎ এবার তা আরও বেড়েছে৷ এবং দূষণ যদি শুধু পানিতেই সীমাবদ্ধ থাকতে, তাহলে তো কথা ছিল না৷ চীনের পরিবেশ মন্ত্রণালয় গত সপ্তাহে ঘোষণা করে যে, দেশের ১৬ শতাংশ জমি দূষিত; কৃষিজমির প্রায় বিশ শতাংশ নাকি ক্যাডমিয়াম গোত্রীয় ধাতুর দ্বারা দূষিত৷
বিপদ সহসাও ঘনাতে পারে, যার উদাহরণ হলো পশ্চিম চীনের লানঝু শহর, যেখানে এ মাসের সূচনায় কলের জলে মাত্রাধিক বেনজিন পাওয়া যাবার পর বাসিন্দারা বোতলে সোডাওয়াটার কিনে তৃষ্ণা মেটানোর চেষ্টা করছিলেন৷ – বেশ কয়েক দশকের লাগামছাড়া প্রবৃদ্ধির দাম চোকাতে হয়েছে চীনের পরিবেশকে৷ আপাতত চীনের পরিবেশ সুরক্ষা আইনের সংশোধন নিয়ে বিতর্ক চলেছে এবং চীনের জাতীয় গণকংগ্রেসে সেই সব সংশোধন পেশ করা হয়েছে৷ গত ২৫ বছরের মধ্যে পরিবেশ আইনে এই প্রথম পরিবর্তন, কাজেই তা আশার সঞ্চার করবে বৈকি৷
অপরদিকে দূষণ প্রতিরোধ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের ক্ষেত্রে কিছু কিছু সাফল্যের দাবি করছেন চীন সরকার৷ কিন্তু বাধা কি শুধু একটি? জাতিসংঘের কার্বন ক্রেডিট প্রক্রিয়া থেকে ভালোই রোজগার হচ্ছিল চীনের সংস্থাগুলির: গতবছর সেটা কমে ২০১২ সালের দশ ভাগের এক ভাগ হয়ে যায়৷ জাতিসংঘের ক্লিন ডেভেলপমেন্ট মেকানিজম বা সিডিএম বস্তুত কিয়োতো চুক্তির অংশ৷ উন্নয়নশীল দেশগুলির কোনো প্রকল্প যদি প্রমাণ করতে পারে যে, সেই প্রকল্পের ফলে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন কমেছে, তাহলে সেই প্রকল্প সার্টিফায়েড এমিশনস রিডাকশনস বা সিইআর সার্টিফিকেট পায়৷ প্রকল্পটি তখন সেই ‘কার্বন ক্রেডিট' অন্যান্য সরকার কিংবা কোম্পানিকে বেচে মুনাফা করতে পারে৷
২০০৬ সাল থেকে চীনা কোম্পানিগুলি মোট ৮৭৩ মিলিয়ন ডলার মূল্যের কার্বন ক্রেডিট পেয়েছে এবং তা জাপান ও ইউরোপে বেচেছে অন্তত ৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যে! সেই অর্থ আবার অন্যান্য পরিবেশ সুরক্ষা প্রকল্পে বিনিয়োগ করা সম্ভব হয়েছে, যেমন নবায়নযোগ্য জ্বালানি কিংবা জ্বালানির অপচয় রোধ৷
কিন্তু বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকটের ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শিল্পসংস্থাগুলির কার্বন নির্গমন কমে গেছে, যার ফলে কার্বন ক্রেডিটের জন্য ইইউ-এর অ্যালাওয়েন্স নেমে এসেছে ২৫ ডলার থেকে ২৩ সেন্টে! কাজেই বাজারে কার্বন পার্মিট বেচার তরফে লোক বেশি, কেনার তরফে লোক কম৷ ফলে চীন এখন যে পন্থাটি নিচ্ছে, সেটি হলো: স্বদেশেই একটি এমিশনস মার্কেট সৃষ্টি করা, যা থেকে নতুন পুঁজি সৃষ্টি হবে৷
এসি/ডিজি (এএফপি, রয়টার্স)