চাকরি প্রার্থীদের হতাশা বাড়ছে
৪ সেপ্টেম্বর ২০২০তরুণদের কাছে এখন সবচেয়ে আকর্ষণীয় চাকরি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগ দেয়া৷ এ বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চে ৪১ তম বিসিএস-এর প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু করোনার কারণে তা আটকে যায়৷ চাকরি প্রার্থী তরুণদের বড় একটি অংশ এই বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন৷ কিন্তু পরীক্ষা আটকে যাওয়ায় তারা এখন হতাশ৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের ছাত্র নূর আলম অনার্স শেষ করেই সিভিল সার্ভিসের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন৷ তিনিও এখন হতাশ৷ তার কথা, ‘‘আমাদের এই সময়ে দৌড়ের মধ্যে থাকার কথা৷ কিন্তু এখন হল ছেড়ে বাড়িতে বসে ঝিমুচ্ছি৷ আমদের বন্ধুদেরও একই অবস্থা৷’’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে মাস্টার্সের আরেক ছাত্র মীর আরশাদুল হক বলেন, ‘‘এখন তো বেসরকারি চাকরিও নেই৷ পড়াশুনাও বন্ধ৷ কোনো কাজ পাচ্ছি না৷ তাই বাড়িতে বসে আছি৷ পরিবারে হতাশা৷ আর সেই হতাশা আমার নিজের মধ্যেও৷ কবে যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে কেউ বলতে পারছে না৷’’
এদিকে করোনার আগে যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলো দেয়া হয়েছিল সেগুলোও এখন স্থগিত আছে৷ বিশেষ করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে করোনাকালে নতুন করে কোনো নিয়োগ হয়নি৷ আর বিসিএস-এর বাইরে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে নিয়োগও বন্ধ রয়েছে৷ বিশেষ করে পুলিশে সাব-ইন্সপেক্টর পদে বড় একটি নিয়োগ হওয়ার কথা ছিল তা-ও বন্ধ৷ বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও নিয়োগ বন্ধ আছে৷
তবে জুন মাসে ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়েছে৷ তাতে ২২০৪ জন বিভিন্ন ক্যাডারের জন্য মনোনীত হন৷ এছাড়া গত জুলাই মাসে ৩৮ তম বিসিএস নন ক্যাডার পদের জন্য অনলাইনে আবেদন চাওয়া হয়েছে৷ ৩৯ তম বিশেষ বিসিএস থেকে করোনার মধ্যে ২০০০ চিকিৎসককে সাময়িকভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে৷
৪১তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য চার লাখ ১২ হাজার প্রার্থী আবেদন করেছিলেন দুই হাজার ১৩৫ পদের বিপরীতে৷ ৪০ তম বিসিএস-এর লিখিত পরীক্ষার ফল আটকে আছে৷ পাবলিক সার্ভিস কমিশনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কারোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তারা নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হবে না৷
বাংলাদেশে ৯০ লাখ মানুষ আনুষ্ঠানিক খাতে চাকরি করেন৷ এর মধ্যে ১৫ লাখ সরকারি খাতে, বাকি ৭৫ লাখ বেসরকারি খাতে৷ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন ছয় কোটি ৮ লাখ মানুষ৷
বাংলাদেশে প্রতি বছর চাকরির বাজারে প্রবেশ করেন ২৫ লাখ তরুণ৷ তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২০ লাখ তরুণের চাকরির সংস্থান হয়, বাকিরা বেকার থাকেন৷
বাংলাদেশের সরকারি খাত সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থানে সক্ষম৷ বাকি ৯৬ শতাংশ এখনো বেসরকারি, ব্যক্তিমালিকানা বা আত্মকর্মসংস্থানে জড়িত৷
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, বাংলাদেশে কর্মসংস্থানে সরকারি খাতে চাকরি আছে মাত্র ৩.৮ ভাগ, বেসরকারি খাতে ১৪.২ ভাগ, ব্যক্তি খাতে ৬০.৯ ভাগ এবং অন্যান্য খাতে ২১.১ ভাগ৷
বাংলাদেশ ইন্সটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্ট্যাডিজ (বিআইডিএস) অনলাইনে ৫ মে থেকে ২৯ মে পর্যন্ত ২৯ হাজার ৯০৯ জনের ওপর একটি জরিপ চালায়৷জরিপে অংশ নেয়া ১৩ শতাংশ মানুষ ফর্মাল সেক্টরে কাজ করতেন, তবে তারা জানান, তারা চাকরি হারিয়েছেন৷
এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে নিয়োগ পুরোপুরি বন্ধ ছিল৷ এ সময় প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ ছিল৷ তবে এখন খুব স্বল্প পরিসরে নিয়োগ শুরু হয়েছে ৷ বিডি জবস-এর প্রধান নির্বাহী একেএম ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘‘এই নিয়োগও হচ্ছে লার্জ স্কেল কোম্পানিতে৷ এসএমই খাত আসলে নতুন নিয়োগ এখনো শুরু করতে পারেনি৷ কারণ, তাদের ব্যবসা বসে গেছে৷’’
কিছু নিয়োগ হচ্ছে কোম্পানির স্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে৷ আরেকটি অংশ হলো করোনার সময় যার চাকরি হারিয়েছেন বা গ্রামে গিয়ে আর ফেরেননি তাদের জায়গায়৷ আর নতুন কাজ তৈরি হওয়ার যে আশা করা হয়েছিল তা হয়নি৷ সার্ভিস সেক্টরে ডেলিভারি ম্যানের মতো কিছু নতুন কাজের সুযোগ হয়েছে৷ মাশরুর বলেন, ‘‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরো সময় লাগবে৷ তবে উন্নতি হচ্ছে৷ স্বাভাবিক অবস্থায় আমরা প্রতিদিন গড়ে ৩০০ চাকরির বিজ্ঞাপন পেতাম, এখন তা অনেক কম৷’’
তবে আগামীতে কর্মসংস্থানের সুযোগ কতটা বাড়বে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সন্দেহ আছে৷ কারণ, উৎপাদনের ধরনে পরিবর্তন আসতে পারে৷ সিপিডির অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘‘কম জনশক্তি দিয়ে কতটা সক্ষমভাবে উৎপাদন করা যায় তার একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেলেও আগের মতো কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকবে কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে৷’’
এই করোনায় একমাত্র কৃষি খাতই সক্ষমতার সাথে টিকে আছে৷ এই খাতটিকে করোনা দুর্বল করতে পারেনি বলে জানান ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক এ কে এম মোরশেদ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেশের বেকার সমস্যাকে করোনা আরো তীব্র করেছে৷ ছয় মাস তো অর্থনীতিই অচল হয়ে পড়েছিল৷ তবে এখন পরিস্থিতি ধীরে ধীরে পাল্টাচ্ছে৷’’