ট্রাম্পের জয়ে নিজের নয়, দেশের স্বার্থ দেখি
২০ জুন ২০১৭এ কথা সত্য যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়, গোটা বিশ্বের জন্যই এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উগ্রপন্থিদের বিরুদ্ধে লড়াই কিংবা উন্নয়নখাতে সহায়তা অবধি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম বড় পরাশক্তির একটা ভূমিকা থাকে৷ বৈশ্বিক ইস্যুতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা অন্যতম৷
এ রকম একটি রাষ্ট্রের ‘প্রধান' কে হচ্ছেন সেদিকে তাই নজর থাকে সবারই৷ সর্বশেষ মার্কিন নির্বাচন নিয়ে তাই বাঙালির আগ্রহও ছিল অনেক৷ দুই প্রার্থীর একজন ছিলেন হিলারি ক্লিনটন, যিনি একাধিকবার বাংলাদেশ সফর করেছেন এবং বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল পুরস্কারজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসের বন্ধুস্থানীয় ব্যক্তি, অন্যজন ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি বাংলাদেশ সফর তো দূরের কথা রাজনীতিতেই নবীন৷
বিশ্বের অনেক দেশ, অনেক মানুষকে অবাক করে দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকেই মার্কিনিরা প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করেছেন৷ যদিও মুসলিমবিরোধী, অভিবাসীবিরোধী, নারীর প্রতি অবমাননাকর বিভিন্ন বক্তব্যের জন্য তিনি অত্যন্ত সমালোচিত হন৷ এখনো নিয়মিতই সংবাদ শিরোনামে থাকেন তিনি, তবে সেটা যতটা না ইতিবাচক অর্থে, তার চেয়ে আরো বেশি নেতিবাচক অর্থে৷
এ রকম একজন মানুষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ায় কোন দেশের কেমন লাভ কিংবা ক্ষতি হতে পারে সে বিষয়েও নানা রকম বিচার-বিশ্লেষন চলছে৷ এ কথা পরিষ্কার যে, ‘রক্ষণশীল' এই প্রেসিডেন্ট তাঁর নীতির ক্ষেত্রে মার্কিন স্বার্থকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেবেন বলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ তবে এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে গিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোর সঙ্গেও সম্পর্ক জটিল করে ফেলছেন৷ সম্প্রতি ইউরোপ সফরের সময় তিনি মন্তব্য করেছেন, ‘জার্মানরা খারাপ, খুব খারাপ৷' অথচ জার্মানির সঙ্গে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের সম্পর্ক সে দেশের৷ পরিস্থিতি এমন যে, খোদ ম্যার্কেলকেও বলতে হচ্ছে, ‘‘জোট সঙ্গীদের উপর আর আস্থা রাখা যাচ্ছে না৷'' এখানে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের দিকে ইঙ্গিত করেছেন৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের প্রতি ভূয়সী সমর্থন জানানের আগে বাংলাদেশের উচিত লাভ-ক্ষতি বিবেচনা করা৷ ট্রাম্প যেসব সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁর প্রভাব বাংলাদেশের উপর কী হতে পারে সেটা নিয়ে ভাবা জরুরি৷ ইতোমধ্যে তিনি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় করা প্যারিস চুক্তি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছেন৷ এখানে খেয়াল রাখতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম৷ ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের উপর তার প্রভাব কী হতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে করণীয় কী, তা নির্ধারণের কোনো উদ্যোগ কি নেয়া হয়েছে?
পাশাপাশি ট্রাম্পের অভিবাসীবিরোধী মনোভাব, জাতিসংঘের শান্তি মিশনের বাজেট কমানো, পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ির মতো বিষয়গুলোতেও বাংলাদেশের স্বার্থ বিঘ্নিত হচ্ছে কিনা দেখতে হবে৷
আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন, সার্বভৌম দেশ৷ একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্কের জন্য একটি দেশের ক্ষতি করবেন, এমন ভাবনা পুরোপুরি অমূলক৷ তাদের কাজের ধরণের মধ্যে এটা পড়ে না এবং একজন প্রেসিডেন্ট স্বেচ্ছাচারী হয়ে এ রকম কিছু করতে গেলে নিজের দেশেই সবচেয়ে বেশি বাধার মুখে পড়বেন৷ তাই শুধুমাত্র হিলারি ক্লিনটনকে অপছন্দ করি বলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানানোটা সঠিক হবে না বলে আমি মনে করি৷ বরং ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে দেশের লাভ-ক্ষতি হিসেব করে সমর্থন বা বিরোধিতা করলেই মঙ্গল৷
আপনার কী কিছু বলার আছে? লিখুন মন্তব্যে৷