ইউরোপীয়রা গ্রীষ্মের ছুটিতে বেড়াতে পারবেন?
১৩ মে ২০২০সদস্য দেশগুলির মধ্যে সীমান্ত কার্যত নিষ্ক্রিয় রাখাই ইউরোপীয় ইউনিয়নের শক্তির অন্যতম মূল উৎস৷ কেনাকাটা বা কাজের সূত্রে সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ অনায়াসে নিজের দেশ থেকে প্রতিবেশী দেশে যাতায়াত করেন৷ অথচ করোনা সংকটের জের ধরে ইউরোপের অভ্যন্তরীণ সীমান্ত মানুষের যাতায়াতের জন্য বন্ধ রাখতে হচ্ছে৷ শুধু ইইউ নাগরিক নয়, শেঙেন এলাকার ২৬টি দেশের মধ্যে কমপক্ষে ১৭টি দেশ সীমান্তে জরুরি নিয়ন্ত্রণ চালু করায় ইউরোপের বাইরের পর্যটকরাও সমস্যায় পড়ছেন৷ ফলে বিশেষ করে পর্যটন ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি ইউরোপীয় মূল্যবোধ ও সংহতি নিয়েও প্রশ্ন উঠছে৷ ধাপে ধাপে সীমান্ত খুলে দেবার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে চাপ বাড়ছে৷
সেই ডাকে সাড়া দিয়ে বুধবার ইইউ কমিশন কিছু নির্দিষ্ট প্রস্তাব পেশ করছে৷ আসন্ন গ্রীষ্মকালীন ছুটির সময় পর্যটন ক্ষেত্র যাতে কিছুটা হলেও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারে, সেই লক্ষ্যে সদস্য দেশগুলির উদ্দেশ্যে পদক্ষেপ নেবার আহ্বান জানাচ্ছে ইইউ৷ ঢালাওভাবে সব মানুষের জন্য সীমান্ত ও ভ্রমণের সুযোগ বন্ধ না রেখে করোনা সংক্রমণ মোকাবিলা করতে সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণ চালু করা যেতে পারে৷ পরিস্থিতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে অভ্যন্তরীণ সীমান্ত খুলে পর্যটকদের প্রবেশের পথে বাধা দূর করার প্রস্তাব দিচ্ছে ইইউ৷ সংক্রমণ বাড়লেও স্বাস্থ্য পরিষেবা কাঠামোর পরিস্থিতি সামাল দেবার ক্ষমতা থাকলে পর্যটনের পথে বাধা দূর করা উচিত৷
বল্টিক এলাকার তিনটি দেশ আগামী ১৫ই মে থেকে নিজেদের নাগরিকদের জন্য সীমান্ত খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ ফলে ইইউ-র কিছু দেশের মধ্যে এমন বিচ্ছিন্ন ‘ভ্রমণের বুদবুদ’-এর মডেল নিয়েও আলোচনা হচ্ছে৷ অর্থাৎ যে সব দেশে করোনা সংকট মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে এসেছে, সেগুলির মধ্যে এক ধরনের ‘পর্যটন করিডোর' সৃষ্টি করে গ্রীষ্মের ছুটির সময় পর্যটনে উৎসাহ দেওয়া হতে পারে৷
ইইউ কমিশনের সূত্র অনুযায়ী বর্তমান সংকটের আগে ইউরোপের পর্যটন ক্ষেত্রে প্রায় এক কোটি ২০ লাখ মানুষ কর্মরত ছিলেন৷ তার মধ্যে ৬৪ লাখ মানুষ কাজ হারাতে পারেন৷ নিজস্ব সূত্র অনুযায়ী চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই এই ক্ষেত্র ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ লোকসানের মুখ দেখেছে৷ উল্লেখ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনৈতিক ‘আউটপুট'-এর প্রায় দশ শতাংশই পর্যটন ক্ষেত্র থেকে আসে৷ তাই এই ক্ষেত্রকে বাঁচাতে বিশাল অঙ্কের আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন হবে বলে পর্যটন সংগঠনগুলি জানিয়েছে৷
করোনা সংকটের কারণে যে সব ভ্রমণ বাতিল করতে হয়েছে, বিমান সংস্থাগুলি সেগুলির টিকিটের নগদ দাম গ্রাহকদের ফেরত না দিয়ে ভবিষ্যতে ভ্রমণের ভাউচার দিচ্ছে৷ জার্মানিসহ কিছু ইইউ সদস্য দেশের ডাকে সাড়া দিয়ে ইইউ কমিশন গ্রাহকদের অধিকার সংক্রান্ত আইন আপাতত বাতিল করতে নারাজ৷ ফলে ফ্লাইট বাতিল হলে টিকিটের পুরো দাম আদায় করার অধিকার অটুট থাকছে৷
বুধবার ইইউ দেশগুলির মধ্যে অভ্যন্তরীণ সীমান্ত খুলে দেবার উদ্যোগ সত্ত্বেও এখনো বহির্সীমানা খোলার কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না৷ কমপক্ষে ১৫ই জুন পর্যন্ত এই সীমানা বন্ধ থাকছে৷
এসবি/কেএম (রয়টার্স, ডিপিএ)