গ্রামীণ ব্যাংককে নিয়ন্ত্রণ
৩ অক্টোবর ২০১৩বৃহস্পতিবার বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে গ্রামীণ ব্যাংক আইন ২০১৩-এর খসড়া অনুমোদন করা হয়৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়৷ বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসাইন ভূইঞা জানান, গ্রামীণ ব্যাংকের আর্থিক বিষয়সহ অন্যান্য দিক তদারকি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক৷ অন্যান্য ব্যাংককে যে ভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রতিবেদন দিকে হয়, গ্রামীণ ব্যাংককেও তাই করতে হবে৷ একই সঙ্গে আগের মতো সরকারকেও প্রতিবেদন দিতে হবে৷ তিনি জানান, গ্রামীণ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান এই ব্যাংকের নাম বা প্রতীক ব্যবহার করতে পারবে না৷ আর গ্রামীণ ব্যাংক এবং এর অধীনে যত প্রতিষ্ঠান আছে সবই বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে৷
খসড়া আইন অনুযায়ী, গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য আগের মতোই ১২ জন থাকবেন৷ তবে এই সদস্যদের নির্বাচন পরিচালনা করবে সরকার মনোনীত একটি কমিশন৷ এতে সদস্যদের মেয়াদ হবে তিন বছর৷ আর সদস্য হবেন দুই ধরণের – ব্যাংকের সদস্যদের মধ্য থেকে এবং সরকার মনোনীত৷ এছাড়া, গ্রামীণ ব্যাংকের শেয়ার সরকারের হাতে থাকবে ২৫ ভাগ এবং বাকি ৭৫ ভাগ সদস্যদের হাতে৷
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রি পরিষদের সচিব বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা এমডি নিয়োগের বিধান নিয়ে এই আইনে কিছু বলা হয়নি৷ এর জন্য আলাদা একটি আইন পরীক্ষা করে দেখছে আইন মন্ত্রণালয়৷ তিনি জানান, গ্রামীণ ব্যাংকের আর্থিক বিষয় বাংলাদেশ ব্যাংক দেখলেও কেউ যাতে গ্রামীণ ব্যাংকে ক্ষমতার অপব্যবহার করতে না পারে, সেটা দেখবে সরকার৷ তিনি বলেন, ১৯৮৩ সালে একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংক কাজ শুরু করে৷ এবার তার পূর্ণাঙ্গ আইনি কাঠামো দেয়া হলো৷
তবে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালকদের একজন তাহসিনা খাতুন ডয়চে ভেলেকে বলেন, সরকার গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এমডি-র পদ থেকে সরানোর পর ব্যাংকটি দখলে নেয়ার চেষ্টা করছে৷ গ্রামীণ ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে নেয়ার এই আইন মূলত সরকারে নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্যই করা হচ্ছে৷ তাঁর কথায়, ব্যাংকের সদস্যরাই এতদিন পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের নির্বাচন করে আসছিল৷ সরকার এখন তাদের পছন্দের লোকজনকে পরিচালনা পর্ষদে ঢুকাতে চাচ্ছে৷
তাই তিনি প্রশ্ন তোলেন, গ্রামীণ ব্যাংক যে নিয়মে চলছে তাতে তো ব্যাংকের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না৷ তাহলে সরকারে নিয়ন্ত্রণে কেন নিতে হবে? সরকারের অনেক ব্যাংকই তো ঠিকমতো চলছে না৷ সরকার বরং সেগুলো ভালোভাবে চালানোর ব্যবস্থা করুক৷ তাহসিনা খাতুনের মতে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি ক্ষোভ থেকেই সরকার গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে এসব করছে৷ সে কারণেই এই ব্যাংকের কোনো ক্ষতি ব্যাংকের সদস্যরা মানবেন না, বলেন তাহসিনা খাতুন৷