গ্রাম বাংলায় আদিবাসী উৎসবে
সভ্যতার অগ্রগতি হলেও ভারতের আদিবাসী সম্প্রদায় তাঁদের আপন সংস্কৃতি ও জীবনচর্যাকে বাঁচিয়ে রেখেছে৷ অনার্য জনগোষ্ঠী নানা উৎসবে সেই আদিম আচারের অভিজ্ঞতা আজও পাওয়া যায়৷ এমনই এক সংস্কৃতির খোঁজে চলুন নদিয়ার টিয়াবালি গ্রামে৷
করমের দর্শক
করম উপলক্ষে কোনো আলাদা সাজ নেই আদিবাসীদের গ্রামে৷ সকাল থেকেই মাটির দাওয়ায় নানা বয়েসি মানুষের ভিড় জমতে থাকে৷
বৃক্ষদেবতা
করম বৃক্ষ আদিবাসীদের দেবতা৷ আজও তার আরাধনা করা হয়৷ করমের তিনটি শাখা পোঁতা হয় মাটিতে৷ তার পাশে দুটি ঝুড়িতে কলাই-ধান-সরষের চারা৷
পরিবেশের পক্ষে
শিল্প সভ্যতার আগ্রাসনে বৃক্ষচ্ছেদন করছি আমরা৷ অথচ আদিবাসীরা সেই আশ্রয়দাতা বৃক্ষের উপাসক৷ হিন্দু হলেও তাঁরা পৌত্তলিকতায় বিশ্বাসী নয়৷ বরং সনাতন ভারতীয় সভ্যতার চিরন্তন রক্ষক৷
প্রাচীন জীবিকা
এখনও কৃষিকাজ ও পশুপালন এই অনার্য জনগোষ্ঠীর প্রধান জীবিকা৷ চাকরির সঙ্গে যুক্ত মুষ্টিমেয় মানুষ৷ এই গ্রামে ঢুকলেই মেলে সেই আদিম অনুভব৷
বলিদানের প্রথা
ভারতীয় সংস্কৃতিতে ঈশ্বরের তুষ্টির জন্য বলিদান অবিচ্ছেদ্য প্রথা৷ আর্য ও অনার্যদের মধ্যে এ ব্যাপারে কোনও ভেদ নেই৷ বৃক্ষদেবতাকে খুশি করতে মুরগি বলির প্রথা বিদ্যমান অনার্য সংস্কৃতিতে৷
শেষ ইচ্ছাপূরণ
করম দেবতার সামনে বলিপ্রদত্ত মুরগির শেষ আহার৷ তাকে খাওয়ানো হয় খুদকুঁড়ো৷
মুরগি নিবেদন
করম দেবতার উদ্দেশে বলি দেওয়া হয় জোড়া মুরগি৷ একটি লাল ও একটি সাদা৷
আদিম রীতি
করম পরবের জন্য তৈরি হয় পিঠা৷ ছোট আকারের লুচির মতো দেখতে৷ সঙ্গে চাল-গোলা জল৷ অনেকটা গঙ্গাজলের মতো এর ব্যবহার৷
নৃত্য-গীত-বাদ্য
আদিবাসী উৎসবের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ নাচ-গান৷ করমের সামনে গোল করে ঘুরে অবিরাম চলতে থাকে নাচ৷ সঙ্গে চমকপ্রদ লিরিকে সাজানো গান৷
হাঁড়িয়ার মৌতাত
আদিবাসী সংস্কৃতির আরেক অঙ্গ নেশার পানীয় হাঁড়িয়া৷ করম উৎসবে সবাইকে একটু গলায় ঢালতেই হবে৷ প্রবীণ বা মহিলারাও বঞ্চিত হন না৷
তিন কন্যার করম
লাল-হলুদ শাড়িতে এই তিন কিশোরী কন্যা করমের সেবা করে৷ উপোস ও রাত্রি জাগরণের পর তাদের হাতেই তুলে দেওয়া হয় তিনটি করম শাখা৷
বিসর্জনের পথে
দুর্গোৎসবের নবমী তিথিতে হয় করমের বিসর্জন৷ দিনভর চলে নাচ-গান-পান৷ গ্রামের সব পাড়া ঘুরে করমের যাত্রা শেষ হয় জলাশয়ে৷