1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গৌরবের খেলায় মূল্যবোধের ঘাটতির অগৌরব

একুশ তাপাদার ঢাকা
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ফেসবুকে নারীদের নিয়ে মন্তব্য করে একজন ক্রিকেটার নানা শ্রেণি পেশার মানুষের তীব্র সমালোচনায়। কর্মজীবী নারী ও ক্রিকেট অভিজ্ঞরা মনে করেন, মানবিক ও উদার শিক্ষার ঘাটতির কারণেই বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কেউ কেউ বিতর্কে জড়ান৷

https://p.dw.com/p/4WhNs
বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ ২০২৩
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP via Ggetty Images

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুরোনো পোস্টের সূত্র ধরে সম্প্রতি আলোচনায় আসেন তানজিম হাসান সাকিব। তার একাধিক পোস্টের স্ক্রিনশট ভাইরাল হলে তীব্র সমালোচনায় পড়েন তিনি। সেসব পোস্ট তার নিজেরই দেওয়া বলে পরে বিসিবির কাছে স্বীকার করেন এই ক্রিকেটার।

একটি পোস্টে ২০ পেরোনো তরুণ ক্রিকেটার লিখেছিলেন, ‘‘স্ত্রী চাকরি করলে স্বামীর হক আদায় হয় না, স্ত্রী চাকরি করলে সন্তানের হক আদায় হয় না, স্ত্রী চাকরি করলে তার কমনীয়তা নষ্ট হয়, স্ত্রী চাকরি করলে পরিবার ধ্বংস হয়, স্ত্রী চাকরি করলে পর্দা নষ্ট হয়, স্ত্রী চাকরি করলে সমাজ নষ্ট হয়।''

আরেক পোস্টে তানজিম হাসান সাকিব বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের বিষয়ে লেখেন,  ‘‘ভার্সিটির ফ্রি-মিক্সিং আড্ডায় অভ্যস্ত মেয়েকে বিয়ে করলে আর যা-ই হোক সন্তানের জন্য একজন লজ্জাশীলা মা দিতে পারবেন না।''

এছাড়াও জাতীয় দিবস পালনের বিরুদ্ধেও পোস্ট দিয়েছিলেন গত এশিয়া কাপে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষিক্ত হওয়া এই খেলোয়াড়। এমনকি অমুসলিমদের মূর্তি ভাঙার উস্কানি-নির্ভর পোস্টও শেয়ার করতে দেখা যায় তাকে।

সারা দেশে তুমুল সমালোচিত হলেও বিসিবির কাছে দুঃখপ্রকাশ করে ছাড় পেয়ে যান তানজিম হাসান সাকিব। বিসিবি শুধু সতর্ক করেছে তাকে৷ তবে বিভিন্ন শ্রেণি, পেশার মানুষ এই ক্রিকেটারের ‘উগ্র' চিন্তার বিষয়ে নিজেদের ক্ষোভ জানিয়েছেন। বিসিবি তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দেয়ায় বিস্ময়ও প্রকাশ করেছেন তারা। 

তানজিম নারীদের চাকরি করা নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করলেও তিনি যে আঙিনায় আছেন, সেই ক্রিকেটেও আছে নারীদের পাদচারণা। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পুরুষদের পাশাপাশি আছে নারী ক্রিকেট দল। মজার কথা হলো, পুরুষ ক্রিকেট দল এখনো বড় কোনো ট্রফি না জিতলেও মেয়েরা এর মধ্যে একবার এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।

নারীদের মাঝে এখন অনেক ক্রীড়া সাংবাদিকও আছেন৷ তাদের একজন এনটিভি অনলাইনের  হিমু আক্তার।

তিনি জানান, নিজের অফিসে কাজের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা না হলেও খেলার মাঠে তিনি দৃষ্টিভঙ্গিগত কারণে কিছুটা অস্বস্তি-বোধ করেন,  ‘‘চাকরি ক্ষেত্রে অফিসে কোনো ডিফিকাল্টিজ ফেইস করিনি। কাজের জায়গা ক্রিকেট, বিসিবিতে গিয়ে কাজ করতে হয়। সেখানে কাজ করার সময় বিব্রতকর অনেক কিছুই হয়। অনেক ক্রিকেটার উপেক্ষা করে, কারণ, আমি নারী।''

এটা আমার জন্য অস্বস্তির: হিমু

হিমু জানান, তানজিমের মন্তব্য তার চরম বিব্রতকর এবং অপমানজনক  মনে হয়েছে, ‘‘কর্মজীবী নারী হিসেবে এটা আমার জন্য খুবই বিব্রতকর, কারণ, পরে যখন তার (তানজিম সাকিব) প্রেস কনফারেন্সে যাবো, তখন আমার মনে হবে সে তো আমাকে এখানে দেখতে চায় না।''

তবে ক্রীড়া সাংবাদিক হিমু তানজিম সাকিবের মতো চিন্তার ক্রিকেটার আরো আছে, তারা ভেতরে একই ধরনের চিন্তা পুষে রাখলেও হয়ত প্রকাশ্যে আনেন না,  ‘‘আসলে আমরা মুখে অনেকেই বলি, নারীদের অধিকার…কিন্তু চোখে দেখার সময় নারীদের দৃষ্টিকটুভাবেই দেখি। তানজিম সাকিব হয়ত প্রকাশ্যে বলেছে, অনেকে হয়ত মুখে না বললেও মনে পোষণ করে।''

হিমু আক্তার আরো বলেন, ‘‘তানজিম সাকিব বলায় আরও অনেকে উৎসাহ পেতে পারে। লাই পেয়ে গেল মনে হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় খেয়াল করলে দেখা যায় অনেকেই ওর ‘পক্ষে'। এটা আমাদের কাজ করার পরিবেশ আরও কঠিন করে দিচ্ছে। এটা আমার জন্য অস্বস্তির।''

এই তরুণ সাংবাদিক মনে করেন বিসিবির কাছে মুখে দুঃখ প্রকাশ করলেও নিজের আচরণে এখনো অনুতপ্ত হননি তানজিম সাকিব, ‘‘আমরা ভাবিনি বিসিবি কোনো পদক্ষেপ নেবে না। অন্তত তিনি নিজের প্রোফাইলে দুঃখপ্রকাশ করবেন- এমন আশা ছিল। কিন্তু তিনি এই ধরনের পোস্ট পরেও শেয়ার করেছেন। অর্থাৎ, তিনি অনুতপ্ত নন। উনি পুরো নারী সমাজকে অপমান করেছেন। বিসিবি তাকে শাস্তি না দিলেও প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়াতে পারতো।''

‘বিসিবি সভাপতি আপোষ করছেন এটা আমি মেনে নিতে পারছি না'

শহীদ বুদ্ধিজীবী আলতাফ মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদ এই ঘটনায় ভীষণ মর্মাহত। ‘নারী বিদ্বেষীদের' পক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু মানুষকে কথা বলাকে শিক্ষা ব্যবস্থার গলদের প্রভাব মনে করছেন তিনি, ‘‘নারী-বিদ্বেষী কথা যারা বলছে, নারী বিদ্বেষীদের পক্ষে যারা কথা বলছে, তাদের শিক্ষা নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে। নারী ছাড়া বাংলাদেশ, নারী মুক্তিযোদ্ধা ছাড়া বাংলাদেশ আসলে চিন্তাও করা যায় না।''

‘‘নারী-পুরুষ আমরা একসঙ্গে কাজ করবো। এই জায়গাটা থেকে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ। শহীদ নারী কবি মেহেরুন্নেছা, মার্চে প্রথমে যে পতাকা উঠিয়েছিলেন জয় বাংলা বলে, তিনি তো একজন নারী কবি ছিলেন এবং সাংবাদিক ছিলেন। এই জায়গাগুলো যদি আমরা না পড়ি, না জানি বা জানতে না চাই, বলবো আমাদের অনেক ধরনের ঝামেলা রয়ে গেছে।''

বিসিবি বিষয়টাকে হালকা করেছে: শাওন

তানজিম সাকিব এমন সব মন্তব্য করার পরও শাস্তি না পাওয়ায় চরম হতাশ শাওন, ‘‘আমি ভেবেছিলাম বিসিবি আর কিছু না হোক একটা ব্যবস্থা নেবে। নারী-বিদ্বেষ তো আছেই, জাতীয় পতাকার অবমাননা,  জাতীয় সংগীতে কণ্ঠ না মেলানোসহ বিভিন্ন রকমের বাজে পোস্টগুলোর জন্য তাকে শাস্তি দেবে ভেবেছিলাম। বর্ণবাদীতার জন্য শাস্তির উদাহরণ তো আছে ক্রিকেটে। ক্ষমা চাওয়ানো হয়েছে। বিসিবি বিষয়টাকে হালকা করেছে। বিভিন্ন জায়গায় বলা হচ্ছে, ও ছোট মানুষ। তার মানে ছোট মানুষ হলে কি নারীর প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ করা যাবে? জাতীয় দিবসের অবমাননা করা যাবে? বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, যার বাবা-মা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, ভাষা আন্দোলন করেছেন, যার মা প্রাণ দিয়েছেন রাজনীতির জন্য, তাদের সন্তান এরকমভাবে এই জায়গায় আপোষ করছে- এটা আমি মেনে নিতে পারছি না।''

পশ্চাৎপদ চিন্তা খারিজ করে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়

তানজিম যে অঞ্চল থেকে উঠে এসেছেন সেই সিলেট অঞ্চলেরই ৭০ পেরোনো অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা শাহানারা বেগমের সঙ্গে কথা বলেছে ডয়েচে ভেলে। ধর্মপ্রাণ শাহানারা নিজে চাকরি করে সন্তানদের লেখাপড়া করিয়েছেন। তাঁর ছেলে-মেয়েরা এখন চাকরি করে প্রতিষ্ঠিত। তিনি জানান, প্রায় পঞ্চাশ বছর আগেই তাঁরা রক্ষণশীলতার বৈরি পরিবেশ তোয়াক্কা না করে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে গেছেন,  ‘‘আমি ১৯৭৬ সালে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে সরকারি চাকরিতে যোগদান করি। আমার পরিবারের প্রয়োজনেই আমি চাকরিতে যোগদান করি। এতে আমার স্বামী ও বাবার সমর্থন ছিল। কিন্তু সমাজ আমাদেরকে স্বীকৃতি দেয়নি। যখন কাজে বের হতাম, কিছু মানুষ আমাদেরকে অশ্লীল কথাবার্তাও বলতো। আমার পরনে একদিন সাদা অ্যাপ্রন ছিল, মাথায় স্কার্ফ ছিল। আমি মাঠ পরিদর্শনে যাচ্ছিলাম। একজন ‘হুজুর' কিছুটা দূর থেকে আমাকে সালাম দিলো। কিন্তু কাছে এসে যখন দেখলো আমি মহিলা, তখন বলে উঠলো, "নাউজুবিল্লাহ, নাউজুবিল্লাহ।” এইসব শ্রেণির লোকজন আমাদের অসুবিধা করেছে, কিন্তু আমরা কাজ করে গেছি। কাজে কোনো গাফিলতি করিনি।''

শাহানারা জানান, চাকরি করায় তার ধর্ম পালনে অসুবিধা তো হয়ইনি, বরং চাকরি করে প্রাপ্ত পেনশনের টাকা দিয়ে তিনি হজ করতে পেরেছেন,  ‘‘আমি আমার তিন ছেলে-মেয়েকে চাকরি করে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছি। আমি আমার পেনশনের টাকা দিয়ে মক্কা শরিফে আমার ছেলেকে নিয়ে হজ করেছি। আমার সব কিছু সঠিকভাবে চলেছে। এখনো চলছে। আমি চাকরির আগেও ধর্ম-কর্ম করতাম, এখনো করি।''

কর্মজীবী নারীদের হেয় করে কথা বলা, কটূক্তি করার প্রবণতা সমাজের বিভিন্ন স্তরে অনেক আগে থেকেই দেখা যাচ্ছে, এসব এখন গা-সওয়া হয়ে গেছে বলে জানান উন্নয়নকর্মী  ফারহানা ইয়াসমিন।

ডয়েচে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘এসব কথায় পীড়া লাগলেও তা পাত্তা দেওয়ার অবস্থায় আর নেই দেশের নারীরা, কারণ, তারা এগিয়ে যাওয়ার রাস্তাটা পেয়ে গেছেন৷ এখন আর পাত্তা দেই না। আমাদের সয়ে গেছে, অনেক বছর ধরে এসব শুনছি। সব জায়গা থেকে শুনছি। পরিবার থেকে সমাজ, কর্মক্ষেত্র, সহকর্মী। তারপরে অনেক বড় বড় পজিশনে যারা আছেন, এমনকি ক্রিকেটারদের কাছ থেকেও এমন কথা শুনেছি। অথচ তাদের আমরা আইকন ভাবি। অবাক লাগে আমরা মায়ের গর্ভ থেকেই বড় হই, বড় হয়ে আইকন হই, কিন্তু চিন্তার পরিধি কখনোই বড় হয় না। বড় হওয়ার পর ওই নারীকেই অধস্তন করার জন্য লেগে থাকি। আমরা এখন আর পাত্তা দেই না। আমরা জানি, নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে, অনেকে চেষ্টা করবে টেনে নামানোর জন্য, কিন্তু আমরা আমাদের যোগ্যতায় এগিয়ে যাবো।''

Shahanara Begum
এসব পাত্তা দেওয়ার অবস্থায় আর নেই দেশের নারীরা, বলেন শাহানারা বেগমছবি: Private

তার মতে, নারীদের দমাতে না পেরে অনেকে ভিন্ন পথ ধরছেন, ‘‘কর্মক্ষেত্রেও আমরা দেখি, কোনো নারী যখন এগিয়ে যায়, তখন সবাই চেষ্টা করে তাকে টেনে নামানোর। যখন যোগ্যতা দিয়ে পারে না, তখন একটা কটু মন্তব্য দিয়ে চেষ্টা করে। এসব আমরা উপেক্ষা করি, গায়ে মাখি না। যাদের বোঝার শক্তি এত বছরেও হয়নি, সেটা তাদের সীমাবদ্ধতা, আমাদের না।''

তবে নারীদের দমিয়ে রাখতে এসব অপচেষ্টা অব্যাহত থাকলেও তাতে পেশাজীবী নারীর সংখ্যা কমানো যায়নি। তানজিমের মন্তব্যের সমালোচনা করে এই স্বাবলম্বী নারী বলেন, ‘‘উনার (তানজিম) মন্তব্য আমি দেখেছি। সেখানে যেসব আপত্তিকর  শব্দগুলো ছিল খুবই অপরিমার্জিত। উনি যেটা বলেছেন, নারী চাকরি করলে পরিবার ধ্বংস হয়ে যায়- খুবই আপত্তিকর একটা কথা। পরিবারকে ধ্বংস না, তারা (নারী) পরিবারকে টিকিয়ে নিয়ে যাচ্ছে চাকরি করে। অজস্র পরিবার নারীরা টিকিয়ে রেখেছে চাকরি করে। শুধু স্বামী-স্ত্রীর হক আদায় না, স্বামী-স্ত্রীর নিত্য-নৈমিত্তিক প্রয়োজন মেটাচ্ছে এরকম অজস্র পরিবার আছে। এই  জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা আছে উনার। আমি বলবো, কর্মক্ষেত্রে নারীদের উপস্থিতির হার বাড়ছে। সব শ্রেণিতে বাড়ছে। আমি সকাল বেলা দেখি বাসে প্রচুর নারী কাজ করতে যাচ্ছেন। কর্মজীবী নারীর সংখ্যা দুটো কারণে বাড়ছে, মানুষ সচেতন হচ্ছে এবং প্রয়োজনের তাগিদেও বাড়ছে।''

পোশাক কারখানায় অনেক নারী কাজ করেন। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তাদের অবদান অনেক৷ ফারহানা ইয়াসমিন মনে করেন তানজিম হাসান সাকিবদের মতো কিছু মানুষের নেতিবাচক মন্তব্য কর্মজীবী ওই নারীদের সাময়িক অস্বস্তিতে ফেললেও তাদের চলার পথের কাঁটা হতে পারবে না, ‘‘গার্মেন্টসের নারীদের বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ থাকে। কিন্তু তারাও থেমে থাকে না। চ্যালেঞ্জ যেমন আছে, চ্যালেঞ্জ পার করে এগিয়ে যাওয়ার শক্তিও তৈরি হয়েছে। সংকট আছে, কারণ, একজন সেলিব্রেটির মন্তব্যে হয়ত সবার উপরই প্রভাব পড়ে। তার আপত্তিকর মন্তব্যের নীচে অনেক মানুষ লিখেছেন ‘একমত'। কাজেই এই ধরনের মানুষ বহু আছে। তারা হয়ত চুপ থাকে বেশিরভাগ সময়। যখন কেউ বারুদে আগুন দেয়, তারাও জ্বলে ওঠে। এটা কিছুক্ষণের জন্য হলেও আমাদের উত্যক্ত করে।  চ্যালেঞ্জ আমরা পার করছি, তবে ২০২৩ সালে এসেও কেন এরকম বাধা থাকবে?''

ক্রিকেটারদের মূল্যবোধ ও নৈতিকতার শিক্ষাও জরুরি

ক্রিকেটীয় দক্ষতার বাইরেও খেলোয়াড়দের মূল্যবোধ ও নৈতিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব না বোঝাকে খুব বড় ঘাটতি মনে করেন কোচ ও বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদিন ফাহিম।

তিনি জানান, এক সময় ক্রিকেটারদের এসব বিষয়ে তৈরি করার সেশনের ব্যবস্থা থাকলেও এখন সেখানেও আছে ঘাটতি, ‘‘ক্রিকেটে এলে একটা ছেলে দুই-তিন বছরে জীবন বদলে ফেলে। এত দ্রুত বদল আসার পর সেটাতে মানিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি একটা ছেলের থাকে না। সেসব জায়গাতে নজর দেওয়া খুব জরুরি ছিল। আমাদের উপলব্ধি করার দরকার ছিল এখান থেকে অনেক নেতিবাচক ব্যাপার আসতে পারে।''

এগিয়ে যাওয়ার শক্তিও তৈরি হয়েছে: ফারহানা

‘‘ওদের গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ওরা কেমন ব্যাটিং-বোলিং করছে, ফিটনেস কেমন- এসব কেবল দেখছি। কিন্তু অন্য ব্যাপারগুলো, আদর্শগত দিকগুলো- সেদিকে আমাদের চোখ থাকে না। ওদের মূল্যবোধ, নৈতিকতা এসবের অবস্থান, এসবে নজর থাকে না।''

‘‘আমরা টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর রিচার্ড ম্যাকিন্সের (অস্ট্রেলীয় কোচ) অধীনে যখন প্রোগ্রাম হচ্ছিল, আমি নিজেও যুক্ত ছিলাম। তখন খুব বিস্তৃত পরিকল্পনা নিয়ে ছেলেদের সঙ্গে কাজ করতাম। তাদের মধ্যে সাকিব (আল হাসান), তামিম (ইকবাল), শামসুর রহমান শুভ, রকিবুল হাসান, ডলার মাহমুদ- এসব খেলোয়াড় ছিল। তাদের মধ্যে এই ধরনের বিচ্যুতি প্রায় নেই বললেই চলে। তাদেরকে আমরা খুব ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। তাদেরকে সব্যসাচী মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার একটা প্রক্রিয়া ছিল তখন। এখন কতটা আছে নিশ্চিত না।''

অনেক ক্রিকেটারের ‘গুরু' হিসেবে পরিচিত এই কোচ মনে করেন, একজন ক্রিকেটারকে নিয়ম-নীতি ভালোভাবে জানানো ও বোঝানো খুব জরুরি। এসব স্রেফ কাগজ-কলমে না রেখে চর্চার মধ্যে আনতে হবে,  ‘কোড অব কন্ডাক্টে বলে দেয় একজন খেলোয়াড়ের কাছ থেকে কী প্রত্যাশিত। আচার-আচরণের দিক থেকে, সামাজিক দায়বদ্ধতার দিক থেকে। কোড অব কন্ডাক্ট বলে দেয় সে কী করতে পারে। তবে এগুলো কেবল কাগজ-কলমেই থাকে, চর্চা হয় না। আমার মনে হয় না এসব নিয়ে সচেতনভাবে আমরা কাজ করি। একটা ঘটনা ঘটে গেলে আলাপ করি।''

‘‘এগুলো পারফরম্যান্সের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। আমি নিশ্চিত যত আলোচনা হচ্ছে, এসব এই তানজিমের পারফরমান্সকে প্রভাবিত করবে। আমরা যদি আগে থেকে বুঝতে পারতাম এইগুলো বাধা মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠার জন্য, পারফরম্যান্সের জন্যও, আমরা যেমন ফিটনেসকে গুরুত্ব দেই, এই ব্যাপারগুলোকেও তখন সমানভাবে গুরুত্ব দিতাম।''

কেবল আপত্তিকর পোস্ট ডিলিট করার মধ্য দিয়ে এসবের সমাধান হবে না, সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়কে নিজের ভুলটা ভেতর থেকে উপলব্ধির পথে নিয়ে যেতে হবে বলে মনে করেন নাজমুল আবেদিন ফাহিম , ‘‘ওকে ওসবের ভেতর থেকে বের করে নিয়ে আসতে হবে। ও যদি জাতীয় দলে খেলতে চায় ভেতর থেকে উপলব্ধি করতে হবে। ও যদি ভেতর থেকে বলতে পারে, ‘‘আমি যেটা করেছি সেটা ঠিক ছিল না। এই বার্তাটা যদি সবার কাছে যায় তাহলে সেটা উদাহরণ হবে।''