বাংলাদেশ নিয়ে উদ্বেগ
৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে গুমের মতো এমন আতঙ্কজনক ঘটনা বৃদ্ধির মোকাবেলা করতে হবে৷ বন্ধ করতে হবে নির্যাতন৷ আর তার সঙ্গে সঙ্গে মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করার ক্রমবর্ধমান তত্পরতার ইতি ঘটাতে হবে৷
বলা বাহুল্য, সম্পাদক ও সাংবাদিকদের ফোনে হুমকি দিচ্ছে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা৷ তাই সরকারবিরোধী সমালোচকদের গণমাধ্যমে যেন স্থান দেয়া না হয়, তার জন্যই এ চাপ৷
‘বাংলাদেশ: ডিস্টার্বিং ইনক্রিজ ইন ডিসাপিয়ারেন্সেস, ক্ল্যাম্পডাউন অন প্রেস ফ্রিডম' শীর্ষক এক বিবৃতিতে গত ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ মানবাধিকারের যেসব ঘটনা মোকাবেলা করছে, তাও তুলে ধরা হয়েছে বিবৃতিতে৷ এছাড়া জরুরি ভিত্তিতে কী কী করণীয় – তা নির্ধারণ সম্পর্কে সরকারের কাছে করা হয়েছে কিছু সুপারিশ৷
অ্যামনেস্টি-তে বাংলাদেশ বিষয়ক গবেষক আব্বাস ফয়েজ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘দারিদ্র্য কমিয়ে আনা ও অন্যান্য উন্নয়ন সূচকের ক্ষেত্রে উন্নতি করেছে বাংলাদেশ৷ কিন্তু যখন মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখানোর, যেমন নির্যাতন ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর থেকে বিধিনিষেধ তুলে দেয়ার মতো বিষয় আসে – তখন তার সঙ্গে ঐ উন্নয়ন খাপ খায় না৷ আমরা একটি প্রবণতা প্রমাণ্য আকারে ধরতে পেরেছি৷ তা হলো, অব্যাহত গুমের জন্য দায়ী প্রধানত নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী, যদিও তারা তা অস্বীকার করে৷ তাই সরকারের উচিত তার নিজস্ব বাহিনীর ব্যাপরে এ বিষয়ে দীর্ঘ ও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া এবং এ সব ঘটনায় জবাবদিহির যে ঘাটতি আছে, তা পূরণ করা৷''
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ২০১২ সাল থেকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে কমপক্ষে ২০টি গুমের ঘটনা অনুসন্ধান করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ তবে বাস্তবে এ সংখ্যা আরো অনেক বেশি হতে পারে৷২০ জন মানুষের মধ্যে ন'জনকে পাওয়া গেছে মৃত৷ আটক রাখার দু'মাস পরে বাড়িতে ফিরতে পেরেছেন ছ'জন৷ পাঁচজনের খোঁজ মেলেনি৷ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত অপহরণের ঘটনা ঘটেছে অনেক৷ এতে ‘টার্গেট' করা হয়েছে বিরোধী দলগুলোর সদস্যদের৷ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশ বা তাদের বিশেষ বাহিনী ব়্যাবের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে অভিযোগ করেছেন৷ কিন্তু এ সব অভিযোগ নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর ভূমিকার কোনো জবাবদিহিতা নেই৷ এর মধ্যে এ বছরের এপ্রিল মাসে নারায়ণগঞ্জে সাতটি অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় ব়্যাবের কর্মকর্তাদের মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ মানুষের ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে পুলিশ সেই খুনের ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে তিন ব়্যাব কর্মকর্তাকে আটক করেছে৷ কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে এখনো অভিযোগ দাখিল করা হয়নি৷
আব্বাস ফয়েজ বলেন, নারায়ণগঞ্জের ঘটনাটি ছিল বাংলাদেশের আইনি প্রক্রিয়ার জন্য ‘লিটমাস টেস্ট'৷ যেহেতু ব়্যাবের সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাই তা ইতিবাচক৷
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে গুমের ঘটনা বেড়ে গেছে৷ ঐ ব্যক্তিদের তাঁদের পরিবারের কাছে ফিরয়ে দেয়া এবং তাঁদের বর্তমান অবস্থান জানানো সরকারের দায়িত্ব৷ কারণ এই সব ঘটনার সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় গত সপ্তাহে তাঁদের পরিবারের করুন কাহিনি তুলে ধরেছেন৷ এক ব্যক্তি গুম হলে শুধু তিনিই গুম হন না, একটি পরিবারেও বিপর্যয় নেমে আসে৷''
নূর খান বলেন, ‘‘সরকারের উচিত হবে এই সব গুমের ব্যাপরে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করা৷ তাছাড়া সেই তদন্ত কমিশনের প্রাপ্ত ফলাফলকে আমলে নিয়ে গুমের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া৷ একই সঙ্গে তাদের সুপারিশও বাস্তবায়ন করা৷''