শীঘ্রই বিয়ের পিঁড়িতে বসবে গীতা
১৪ জুলাই ২০১৭তখন আর বয়স কত হবে? মেরেকেটে সাত-আট! সমঝোতা এক্সপ্রেসে চড়ে দিল্লি থেকে লাহোর পৌঁছে গিয়েছিল ছোট্ট মেয়েটি৷ ট্রেনের কামরায় তাকে খুঁজে পায় পাকিস্তানি সেনা৷ নাম-ঠিকানা জিজ্ঞেস করে লাভ হয়নি৷ শুধু ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল শিশুকন্যাটি৷ পরে বোঝা যায় সে মূক ও বধির৷ তারপর প্রায় ১৫ বছর কেটে গেছে৷ এক দশকের বেশি সময় ধরে পাকিস্তানের ‘ইধি ফাউন্ডেশন’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তত্ত্বাবধানে ছিল গীতা৷ দু'বছর আগে ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরেছে৷
শিশুদের কথা বলা ও ভাষাগত জটিলতা, যোগাযোগে ঘাটতিজনিত সমস্যা এবং অটিজমদের নিয়ে কাজ করেন গোপা মুখার্জি৷ তিনি নিজের উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন ‘অনুভূতি’ নামক একটি সংস্থা৷ গীতার বিয়ের কথায় তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘নিঃসন্দেহে প্রশংসা করার মতো৷ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমন উদ্যোগ দেখা গেলেও, ভারতে এর আগে এমন দৃশ্য খুব একটা দেখা যায়নি৷ এমন একটা সময় গীতার মতো একটা মেয়ের মনের কথা বুঝে বিদেশমন্ত্রী যে তাঁর বিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ৷’’
গোপা মুখার্জির আশা, আগামীদিনে নিশ্চয় গীতার স্বপ্ন পূরণ হবে৷ তবে এখন আর সেদিনের সেই ছোট্ট মেয়েটি নেই সে৷ নয় নয় করে চব্বিশে পা দিয়েছে গীতা৷ তাই এবার তাঁর বিয়ে দিতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র সরকার৷
‘‘বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ তাঁর দৈনন্দিন কাজকর্মের পাশাপাশি যে সমস্ত জনকল্যাণের কাজ করে চলেছেন, তার তুলনা নেই৷ ভারত-পাকিস্তানের কাশ্মীরকেন্দ্রীক সমস্যার মধ্যেও গীতাকে দেশে ফিরিয়ে এনে উনি প্রমাণ করেছেন যে, মানবিকতার দিক থেকে ভারত এখনও অনেক উচ্চস্থানে অবস্থান করে৷ আসলে ভারতীয় সভ্যতা, সংস্কৃতি সুষমা স্বরাজের মধ্যে ফুটে উঠেছে৷’’ – এভাবেই কথাগুলো বলছেন ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ’-এর প্রাক্তন অনুবাদক শৃনন্তী দে৷
বর্তমানে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের ‘মূক ও বধির সংগঠন’-এর আবাসিক সংস্থার অধীনে রয়েছেন তিনি৷ মধ্যপ্রদেশ গেলেই তাঁর সঙ্গে দেখা করেন ‘অভিভাবক’ সুষমা স্বরাজ৷ বিদেশমন্ত্রীর কাছে গীতা নিজেই বিয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন৷ পরে সুষমা বলেছেন, ‘‘গীতা নিজে থেকে যাকে পছন্দ করবে তার সঙ্গেই ওর বিয়ে দেবো৷ বিয়ের অনুষ্ঠানের যাবতীয় ভার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের হাতে৷ গীতা ওঁকে মামা পাতিয়েছে বলে কথা! তাই উনিই কন্যাদান করবেন৷’’
২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে গীতাকে ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়৷ সেই থেকে মধ্যপ্রদেশের আবাসনে রয়েছে সে৷ হাজার চেষ্টা সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত তার পরিবারকে খুঁজে বের করা যায়নি৷ তারমধ্যে ক'দিন আগেই তাকে নিয়ে হইচই পড়ে যায়৷ আচমকা নাকি আবাসন থেকে ৪৫ মিনিটের জন্য গায়েব হয়ে যায় গীতা৷ পরে অবশ্য স্থানীয় অন্নপূর্ণা মন্দিরে তার খোঁজ মেলে৷ আবাসন কর্তৃপক্ষ ভেবে বসে, এখানে হয়ত মানিয়ে নিতে পারছে না গীতা৷ পাকিস্তানের জন্য তার মন কেমন করছে৷ তড়িঘড়ি তখন সেখানে পৌঁছান বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ৷ আবাসন কর্তৃপক্ষকে তিনি নিশ্চিন্ত করেন যে, পাকিস্তানের কথা ভেবে মোটেই দুঃখী নয় গীতা৷ মন চেয়েছিল বলে মন্দিরে প্রার্থনা করতে গিয়েছিল৷ তবে গীতার ভবিষ্যত নিয়ে যছেষ্ট উদ্বিগ্ন তিনি৷ তাই তার বিয়ে দেওয়াই এখন মূল লক্ষ্য৷
একাধিক বিউটি পার্লার চালান ইন্দ্রানী বিশ্বাস৷ নিত্যদিন শ'য়ে শ'য়ে মহিলাদের সঙ্গে কথা বলতে হয় তাঁকে৷ অনেকেই তাঁকে মনের কথা বলেন৷ গীতার বিয়ের খবর শুনে ইন্দ্রানী বললেন, ‘‘একজন নারী হিসেবে অনেক সমস্যার সঙ্গে লড়াই করে যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁদের কাছে গীতা একটি অনু্প্রেরণা৷ গীতা যদি স্বপ্ন দেখতে পারে, স্বপ্নপূরণের রাস্তা খুঁজে বের করতে পারে, তাহলে আমরা কেন পারবে না? নিশ্চয় পারব! আসুন, গীতার মতো আমরা সবাই সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টা করি৷’’
আপাতত পাত্র খোঁজা চলছে গীতার জন্য৷ যদিও গীতাই শেষমেশ পছন্দ করবে যে, তার বর কে হবেন৷ এ বিষয়ে গীতার সঙ্গে কথা বলেন সু্ষমা স্বয়ং৷ গীতা নিজের ইচ্ছের কথা সুষমাকে জানান৷ গীতাকে বিদেশমন্ত্রী বলেন, ‘‘খুব শীঘ্রই তোমার বিয়ে দেওয়া হবে৷ তোমার ‘মামা’ শিবরাজ কন্যাদান করবেন৷’’ মধ্যপ্রদেশে মেয়েরা মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজকে ‘মামা’ বলেই ডাকে৷