1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গাছ নিয়ে দুই মেরুতে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন

শহীদুল ইসলাম ঢাকা
১০ জুন ২০২৩

নতুন বিভাজক তৈরি করতে গিয়ে ঢাকার একটি সড়কে নির্বিচারে সব ধরনের গাছ কেটেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় নতুন সড়ক বিভাজক তৈরি করছে বড় বড় গাছ রেখেই৷

https://p.dw.com/p/4SPuV
পরিবেশবাদীরা বলছেন, গাছ রেখেই যে সব ধরনের উন্নয়ন কাজ করা যায় তা অনেকে বোঝেন না
পরিবেশবাদীরা বলছেন, গাছ রেখেই যে সব ধরনের উন্নয়ন কাজ করা যায় তা অনেকে বোঝেন নাছবি: Shahidul Islam

বাস্তব পরিস্থিতি না দেখে পরিকল্পনা হওয়ায় গাছগুলো কাটা হয়েছে। গাছ রেখেই নতুন বিভাজক তৈরি করা যেতো বলে মনে করেন তারা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাত মসজিদ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিডিআর গেট থেকে আবহানী মাঠ পর্যন্ত সড়কে নতুন করে বিভাজক তৈরি করে সেখানে বিভিন্ন ধরনের ফুল ও সৌন্দর্য বর্ধক গাছ লাগানো হয়েছে। আবাহনী মাঠ সংলগ্ন সড়ক বিভাজকে বেশকিছু গাছের ডালাপালা ছেঁটে রাখা হলেও পরিবেশবাদীদের আন্দোলনের কারণে সেগুলো আর কাটা হয়নি। ওই এলাকায় বিভাজক নির্মাণের কাজও বন্ধ আছে।

পরিবেশবাদীরা সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়ে সাত মসজিদ এলাকায় সব ধরনের গাছ কাটা বন্ধ করে দিয়েছেন। আবাহনী মাঠের পাশে বিভাজক তৈরির কাজ বন্ধ থাকলেও এখন বিজিবি গেটের দিকে বিভাজক তৈরির কাজ চলছে।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, জিগাতলা থেকে আবাহনী মাঠ পর্যন্ত সম্প্রতি পাঁচ শতাধিক গাছ কাটা হয়েছে। ওই এলাকায় এখনো বড় বড় ৩০টি গাছ রয়েছে। সাত মসজিদ সড়ক গাছ রক্ষা আন্দোলনের পক্ষ থেকে ‘গাছ কাটা নিষেধ' লাল কাপড়ের ব্যানার টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সাত মসজিদ এলাকায় নিয়মিত রিক্সা চালান আবু হানিফ। তিনি বলেন, ‘‘সব গাছ কাইটা শেষ কইরা ফালাইছে। আগে এই রাস্তাটা আরামের ছিল। এখন মরুভূমি হইয়া গেছে। গাছ কাইটা গাছ লাগাইছে, অনেকের লাভ হইছে।''

সাত মসজিদ এলাকায় গাছ রেখেই সড়ক বিভাজক তৈরি করা যেতো বলে মত দিয়েছেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘যখন পরিকল্পনা করা হয় তখনই গাছ রেখে কীভাবে এই কাজ কাজ করা যায় সেই চিন্তা করতে হতো। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই সংস্কৃতি গড়ে উঠেনি।''

‘‘বাস্তবে কী আছে সেটি না দেখেই পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ফলে গাছগুলো যে ছিল, এগুলোকে রেখেই যে কাজটি করা যেতো, তা আর করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানিকভাবে যেসব প্রকল্প নেওয়া হয়, সেখানে বাস্তব পরিস্থিতি অনেক ক্ষেত্রেই দেখা হয় না।''

আবু নাসের বলেন, ‘‘এ ধরনের উন্নয়ন কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বেশি লাভের জন্য গাছগুলো কেটে ফেলে। গাছ কাটলে সেগুলো বিক্রি করা যাবে, নতুন গাছও কিনতে হবে। যে পরিবেশ আছে, সেটিকে সংরক্ষণ করেই উন্নয়ন কাজ করতে হবে।''

‘‘গাছ শুধু ছায়াই দেয় না। অনেক পাখির খাদ্য জোগায়, তাপমাত্রা কমাতে সহায়তা করে। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যকেও সহায়তা করে।''

‘ঢাকা নগরীর সবুজ এলাকা এবং এর রাজনৈতিক অর্থনীতি' শিরোনামে গত বছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত একটি গবেষণা করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ। সেখানে বলা হয়, ঢাকা মহানগরে ২০ ভাগ সবুজ এলাকা থাকার প্রয়োজন থাকলেও আছে সাড়ে ৮ ভাগেরও কম। ২০০২ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বছরে সাড়ে ৬ শতাংশ হারে সবুজ এলাকা হারিয়েছে ঢাকা। এই ধারা অব্যাহত থাকলে একসময় সবুজহীন নগরে পরিণত হবে ঢাকা।

'উন্নয়ন কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা লাভের জন্য গাছ কেটে ফেলে'

গত বছর স্প্রিনজার নেচারের থিওরিটিক্যাল অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড ক্লাইমেটোলজি সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০০১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ঢাকা শহরের ভূপৃষ্ঠ এলাকা ২৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ সম্প্রসারিত হয়েছে। একই সময়ে জনসংখ্যা বেড়েছে ৭৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

দুই মেরুতে দুই সিটি কর্পোরেশন

ঢাকার তাপমাত্রা কমাতে উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় শিগগিরই দুই লাখ গাছ লাগানোর কার্যক্রম শুরু হবে। গরম কমাতে চিফ হিট অফিসারও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় গাছ রেখেই সব উন্নয়ন কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। মিরপুরে টেকনিক্যাল ক্রসিংয়ে সড়ক বিভাজক নির্মাণের সময় গাছ কাটায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করে এই কাজের দায়িত্বে থাকা দুইজন প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে ডিএনসিসি।

উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকার মাহাখালীর আমতলীতে বড় বড় গাছ রেখে সড়ক বিভাজক তৈরি করা হয়েছে। ডিএনসিসির অন্য এলাকাতেও বেশিরভাগ গাছ রেখেই তৈরি হচ্ছে বিভাজক। এই সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, মেয়রের নির্দেশনা মেনে গাছ রেখেই সব উন্নয়ন কাজের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।

গাছ রেখে সব ধরনের উন্নয়ন কাজ চালানোর নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। গত শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘‘গাছের বিষয়ে আমার অবস্থান স্পষ্ট। আমি বার বার বলেছি, গাছ কাটলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। সড়কের বিদ্যমান গাছগুলো না কেটেই উন্নয়ন কাজ করার নির্দেশ দিয়েছি।''

মেয়র বলেন, ‘‘জরুরি প্রয়োজনে কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা গাছ কর্তন করতে চাইলে সিটি কর্পোরেশনকে জানাতে হবে। আমরা পরিবেশবিদ, নগর পরিকল্পনাবিদসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলাপ করে সম্ভব হলে অনুমোদন দেবো। অনুমোদন ছাড়া ডিএনসিসি এলাকায় কোনো গাছ কাটা যাবে না।''

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন গাছ রক্ষা এবং গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নিলেও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে এ বিষয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। গাছ রেখে সাত মসজিদ এলাকায় সড়ক বিভাজক তৈরি করা যেতো কিনা জানতে চাইলে সাত মসজিদ এলাকায় চলমান কাজের প্রকল্প পরিচালক এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. খায়রুল বাকের বলেন, ‘‘নতুন করে বাসরুট নির্ধারণ করা হয়েছে বলে সড়কগুলোকে দুই পাশে সমানভাবে প্রশস্ত করা হচ্ছে। এজন্য মিডিয়ান (সড়ক বিভাজক) পুনরায় তৈরি করা হচ্ছে। বিভাজকের মধ্যে আম, জাম, বট গাছও ছিল, এগুলো অনেক বড় হয়ে যায়। এজন্য গাছগুলো কেটে মিডিয়ানউপযোগী গাছ লাগানো হচ্ছে। এর মধ্যে ১২শ গাছ লাগিয়েছি, আরো ৬০০ গাছ লাগানো হবে।''

তিনি আরো বলেন, ‘‘এখন সৌন্দর্যবর্ধক গাছ লাগানো হচ্ছে, এগুলো খুব বেশি বড় হবে না।''

ঢাকা দক্ষিণ সিটির একজন কর্মকর্তা জানান, সড়কদ্বীপ, ফুটপাত, মিডিয়ান এবং পাবলিক টয়লেট নির্মাণসহ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ৯ কোটি ৬২ লাখ টাকার একটি প্রকল্প বস্তাবায়ন করা হচ্ছে। এর অধীনেই সাত মসজিদ এলাকায় সড়ক বিভাজক তৈরি করা হচ্ছে। দুই কোটি টাকা ব্যয়ে সাত মসজিদ রোড এলাকায় প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন করা হচ্ছে।

ঢাকা উত্তর সিটিতে যে সড়ক বিভাজক নির্মাণ করা হচ্ছে তার থেকে দক্ষিণ সিটির সড়ক বিভাজক উচ্চতা ও প্রস্থে খানিকটা ছোট। সড়ক বিভাজকে বড় বড় গাছ রেখেই ঢাকার কয়েকটি সড়কে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ হয়েছে। জাতীয় সংসদ ভবনের পূর্ব পাশের সড়কে বড় বড় গাছের সঙ্গে সৌন্দর্যবর্ধক গাছ লাগানো হয়েছে।